
.
আগামী ২৮ মে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকখাত মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ ২০২৫-২০২৭ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংগঠনটির নির্বাচন বোর্ড ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত সিডিউল ঘোষণা করেছে। এতে আগামী ২৯ মার্চের মধ্যে সদস্যদের চাঁদা পরিশোধ, আগামী ২৪ এপ্রিলের মধ্যে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিল, ৬ মে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে ভুয়া ভোটার চিহ্নিতকরণ ও তাদের বাদ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। সর্বশেষ নির্বাচনের ভোটার তালিকা থেকে ৬৯০ জন ভুয়া ভোটার বাদ পড়ছেন। আরও ভুয়া ভোটার বাদ পড়তে পারে বলে জানা গেছে। গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিজিএমএইএতে প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার। প্রশাসক ১০ জনের একটি সহায়ক কমিটি গঠন করে। আগের ভোটার তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপরেই ৬৯০ জন ভুয়া ভোটারের তথ্য পাওয়া যায়।
প্রসঙ্গত, বিজিএমইএতে নির্বাচন কেন্দ্রিক দুটি প্যানেল- ‘ফোরাম’ ও ‘সম্মিলিত পরিষদ’। এই দুই প্যানেল থেকেই নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়ে থাকে। গত বছরের মার্চে বিজিএমইএ’র পরিচালনা পর্ষদের (২০২৪-২৬) নির্বাচনে সব কটি পদে জয় লাভ করে সম্মিলিত পরিষদ। এই প্যানেলের নেতৃত্বে ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিহা ডিজাইন (বিডি) লিমিটেডের চেয়ারম্যান এসএম মান্নান কচি। আর ফোরামের নেতৃত্বে ছিলেন ফয়সাল সামাদ। ওই নির্বাচনের শুরু থেকেই ভোটার তালিকা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন ফোরামের সাবেক প্যানেল লিডার ফয়সাল সামাদ। তিনি ৪০০ ভোটার নিয়ে আপত্তি জানান। ফোরামের পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়েছিল, মৃত ব্যক্তিও ভোটার তালিকায় রয়ে গেছে। তবে বিভিন্ন জায়াগায় ফোরাম আপত্তি জানিয়ে এলেও তখন তা আমলে নেওয়া হয়নি। সূত্রমতে, সর্বশেষ নির্বাচনে বিজিএমইএ’র ভোটার ছিল ২ হাজার ৪৯৬ জন। এর মধ্যে বিজিএমইএ’র ঢাকা অঞ্চলের ভোটার ১৪৮২ ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভোটার ৩২৪ জন। প্রশাসক নিয়োগের পর যাচাই-বাছাইয়ের পর ৬৯০ জন ভুয়া ভোটারের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। আরও ভুয়া ভোটারের বাদ পড়তে পারে বলে জানা গেছে। এদিকে, বিজিএমইএর প্রশাসকের মেয়াদকালও বাড়ানো হয়েছে। প্রশাসককে আরও ৪ মাস সময় দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে স্বচ্ছ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করবে প্রশাসক ও সহায়ক কমিটি।
উল্লেখ্য, আওয়ামী সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন এস এম মান্নান কচি। পরে সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম। সর্বশেষ নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে গঠিত কমিটি নিয়ে আপত্তি জানায় সংগঠনের একটি অংশ। পুরো কমিটির পদত্যাগ চেয়েছিল আগের সর্বশেষ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সবকটি পদে হেরে যাওয়া প্যানেল ‘ফোরাম’। কারচুপির মাধ্যমে ওই নির্বাচন হয়েছিল বলে অভিযোগ ফোরামের। এরপর বিজিএমইএর নির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার পর ১২০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং নির্বাচিতদের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তরে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনকে প্রশাসক নিয়োগ করে সরকার। নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হওয়ায় গত ১১ ফেব্রুয়ারি আরও চার মাস প্রশাসকের মেয়াদ বাড়ানো হয়। আগামী ১৬ জুন তার বর্ধিত মেয়াদ শেষ হবে। এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এ কমিটির বৈঠকে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড এবং আপিল বোর্ড গঠন করা হয়। জানা গেছে, নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়েছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবালকে। ল ফার্ম সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের ব্যবস্থাপনা অংশীদার ব্যারিস্টার সৈয়দ আফজাল হাসান উদ্দিন এবং ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ এ বোর্ডের সদস্য করা হয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়েছে এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুরকে। এ বোর্ডের দুই সদস্য হয়েছেন বার্জার পেইন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী হক চৌধুরী এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এ এন এম কুদরত-ই-খুদা। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিজিএমইএর সহায়ক কমিটির বৈঠকে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড এবং আপিল বোর্ড গঠন করা হয়।