ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৫ মার্চ ২০২৫, ২০ ফাল্গুন ১৪৩১

রেলের ৩ প্রকল্প থেকে সরে আসতে চায় সরকার

ভারতীয় ঋণ ছাড়ে ধীরগতি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:১৩, ৫ মার্চ ২০২৫

ভারতীয় ঋণ ছাড়ে ধীরগতি

ভারতীয় ঋণ ছাড়ে ধীরগতি

ভারতীয় ঋণ-তহবিল থেকে অন্তত তিনটি রেল প্রকল্প প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা করছে সরকার। যেগুলোর মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮০০ মিলিয়ন বা ৮০ কোটি ডলারেরও বেশি। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দীর্ঘ বাস্তবায়ন সময়সীমার পরও প্রকল্পগুলোর উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। ভারতীয় ঋণের (এলওসি) মোট পরিমাণ ৭.৩৬ বিলিয়ন ডলার।

এর মধ্যে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৪০টি প্রকল্প বা প্রকল্পের বিভিন্ন উপাদানে ১.৮৮ বিলিয়ন ডলার বিতরণ করা হয়েছে। স্বল্প বিতরণ ও ধীরগতির বাস্তবায়নের ফলে ইতোমধ্যে ৭৭০ মিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত তহবিলের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ভারতীয় ঋণের পরিবর্তে বিকল্প অর্থায়নের পথ খুঁজছে।
ইআরডি কর্মকর্তারা জানান, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেতে দীর্ঘ সময় লাগায় প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি, ভারতীয় ঠিকাদারদের অবহেলার কারণে অগ্রগতি আরও ধীর হয়ে পড়েছে, যার ফলে ব্যয়ও বাড়ছে। তারা আরও জানান, সরকার অন্যান্য ধীরগতির ভারতীয় ঋণ-তহবিল প্রকল্প থেকেও বেরিয়ে আসার পরিকল্পনা করছে।

ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য আগামীকাল ঢাকায় একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। বৈঠকে ভারতীয় প্রতিনিধি দলও অংশ নেবে। ভারতীয় দলের নেতৃত্ব দেবেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্রেডিট লাইনের পরিচালক সুজা কে মেনন, আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উপস্থিত থাকবেন ইআরডির এশিয়া উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব মিরানা মাহরুখ।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, বৈঠকে অন্তত তিনটি প্রকল্পকে এলওসি তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হতে পারে। কারণ বাস্তবায়নে দীর্ঘ বিলম্বের কারণে এগুলোর জন্য অতিরিক্ত তহবিলের প্রয়োজন হচ্ছে। ভারত যদি এ প্রকল্পগুলোর জন্য বাড়তি অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি না দেয়, তবে বাংলাদেশ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা এসএম সলিমুল্লাহ বাহার জানান, অনুমোদন প্রক্রিয়ার জটিলতার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘ বিলম্ব হচ্ছে। বছরের পর বছর প্রকল্পগুলো চলমান থাকায় ব্যয়ও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ভারতের জবাব না পাওয়ায় হতাশা ॥ নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর স্থগিত ভারতীয় এলওসি-ভুক্ত প্রকল্পগুলোর পর্যালোচনা শুরু হয়। যেসব প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইআরডি ও রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান, বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেললাইন প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত ৩০০ মিলিয়ন ডলার এবং ভারতীয় ঠিকাদারদের সংক্ষিপ্ত তালিকা চূড়ান্ত করার বিষয়ে ভারতকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সিদ্ধান্ত জানানোর সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।

ডিসেম্বরের শেষ দিকে ভারতীয় হাইকমিশনে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়ে জানানো হয়, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে প্রতিক্রিয়া না পেলে বাংলাদেশ প্রকল্পটি বাতিল করবে।
একইভাবে, ২৮ ফেব্রুয়ারি খুলনা-দর্শনা প্রকল্পের বিষয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিক্রিয়া জানাতে বলা হয়। তবে ইআরডি সূত্র জানিয়েছে, এখনো ভারত থেকে কোনো উত্তর আসেনি। বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ও খুলনা-দর্শনা রেল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম ফিরোজি জানান, পরামর্শক নিয়োগ করা হলেও এখনো ঠিকাদার চূড়ান্ত করা যায়নি।

তিনি বলেন, ‘এলওসি চুক্তি অনুযায়ী, সব প্রকল্পের নথির জন্য ভারতের এক্সিম ব্যাংকের অনুমোদন প্রয়োজন, যা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করছে। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিস্তারিত নকশা সম্পন্ন হওয়ার পরও অনুমোদন পেতে অতিরিক্ত সময় লাগছে, যার ফলে প্রকল্পের মূল সময়সীমার একটি বড় অংশ ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। 
বাদ পড়া প্রকল্পের তালিকা লম্বা হতে পারে ॥ অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ভারতীয় ঋণের পোর্টফোলিও থেকে আরও কিছু প্রকল্প বাদ পড়তে পারে। পর্যালোচনাধীন প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা-টঙ্গী এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনের তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েল গেজ রেললাইন ট্র্যাক নির্মাণ। ২০১১ সালে ভারতের ৩০১.১০ মিলিয়ন ডলার ঋণসহ এ প্রকল্পটি শুরু হলেও এখন এটি এগিয়ে নিতে অতিরিক্ত ২১.৭৮ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।

এ তহবিল নিশ্চিত না হলে প্রকল্পটি এলওসি তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে। আরেকটি চ্যালেঞ্জপূর্ণ প্রকল্প কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ, যা ২০১১ সালে ভারত থেকে ৭৮.১০ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে শুরু হয়েছিল। এক দশকেরও বেশি সময় পার হলেও এর মাত্র ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে এখন আরও ৬২.৫০ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।

এ ছাড়া, ভারতীয় ঠিকাদারদের ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ বিভাগ ভারতকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাওয়ার ইভাকুয়েশন কম্পোনেন্ট (প্যাকেজ ৭) বাতিলের অনুরোধ জানিয়েছে।

×