
আবাসন খাতের উন্নয়ন
আজ ২৭ ফেব্রুয়ারি। গত বছর এই দিনে রিহ্যাব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ প্রায় এক যুগ পর রিহ্যাবের ২০২৪-২৬ মেয়াদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একটি মহল প্রায় এক যুগের বেশি সময় নানা অনিয়মের মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখে। এই অনিয়মের অভিযোগে রিহ্যাব এর সাধারণ মেম্বাররা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দাখিল করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তদন্ত তার সত্যতা প্রমাণ পায়।
নানা অনিয়মের তদন্ত হওয়ার পরও অবৈধভাবে কারসাজির নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা বৃদ্ধির চক্রান্ত করে মহলটি। দীর্ঘ ১৪ বছর রিহ্যাবের সাধারণ সদস্যরা প্রত্যক্ষ ভোট দিয়ে তাদের সংগঠনের নেতা নির্বাচন করার সুযোগ পায়নি। প্রতিবারই অদৃশ্য শক্তির ছোঁয়ায় কেউ মনোনয়ন ফরম কিনতে পারেনি। সন্ত্রাসীদের মহড়া দিয়ে ভয় ভীতি প্রদর্শন করে নির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীদের মনোনয়ন কিনতে দেওয়া হয়নি।
রিহ্যাব এর বর্তমান প্রেসিডেন্ট মো. ওয়াহিদুজ্জামান এবং রিহ্যাব এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভূইয়াসহ বর্তমান বোর্ড এবং বোর্ড এর বাইরে বেশ কয়েকজন নেতৃবৃন্দের অক্লান্ত পরিশ্রমে গত বছরের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচন বানচাল করার জন্য বর্তমান প্রেসিডেন্ট মো. ওয়াহিদুজ্জামান এবং রিহ্যাব এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভূইয়াকে তৎকালীন ডিজিএফআই সহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। ডিজিএফআই তাদের অফিসে নেতৃবৃন্দকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। তাদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন ও হয়রানি করা হয়। কিন্তু তারপরেও তারা দমে যাননি।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) এ প্রশাসক নিয়োগ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জান্নাতুল ফেরদৌসকে প্রশাসক করা হয় মন্ত্রণালয় থেকে। তারপর স্বচ্ছভাবে নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও রিহ্যাব নির্বাচন বোর্ডের (২০২৪-২৬) চেয়ারম্যান সাদেক আহমদ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেন।
নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর সদস্যদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়ে। প্রশাসকের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০২৪-২৬ মেয়াদের পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে ৯৭ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। রিহ্যাবের ইতিহাসে এর আগে এত প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেননি। এরপরও নির্বাচন বন্ধ করার জন্য নানা ধরনের ষড়যন্ত্র এবং সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি গঠনের চাপ ছিল।
নির্বাচন প্রক্রিয়ার একপর্যায়ে সমঝোতার মাধ্যমে নেতৃত্ব চূড়ান্ত করার উদ্যোগ নেন সংগঠনের কয়েকজন সাবেক প্রভাবশালী নেতা। চাপে পড়ে নির্বাচনের তফসিল সংশোধন করে নির্বাচন বোর্ড। তাতে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময়সীমা ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ভোটের তারিখ ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে পিছিয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি করা হয়। নানা বাধা বিপত্তি পেরিয়ে তার গত বছর ২৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
সেই নির্বাচনে চারটি প্যানেল অংশগ্রহণ করে। রিহ্যাবের ২০২৪-২৬ মেয়াদের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে ২৯টি পদের মধ্যে ২৫টিতে জয়ী হয়েছে আবাসন ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ। এই প্যানেলের নেতৃত্ব দেন এখনকার প্রেসিডেন্ট মো. ওয়াহিদুজ্জামান ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভূইয়া। মো. ওয়াহিদুজ্জামান সর্বোচ্চ ২৪৮টি ভোট পান। আবাসনখাত উন্নয়নকে অগ্রাধিকার কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ কাজ করে যাচ্ছে।
বিশেষ করে ড্যাপ সংশোধন করে যুগোপযোগী করার ব্যাপারে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও সরকারের সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে দেনদরবার করে যাচ্ছে। বর্তমান কমিটি মনে করে আবাসনখাতের উন্নয়ন হলে এর সঙ্গে জড়িত কয়েক লাখ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে এবং বিপুলসংখ্যক মানুষের নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
তবে সরকার পরিবর্তনের পরও পরাজিত শক্তিরা বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু বর্তমান রিহ্যাব কমিটি নির্বাচন করে বাণিজ্য সংগঠনের মধ্যে একটি মডেল সৃষ্টি করেছে কেননা সে সময় সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন করা সম্ভব ছিল না।