ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪ ফাল্গুন ১৪৩১

লক্ষ্য দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ

ডিসিসিআই ও দুবাই চেম্বার্স-এর মধ্যকার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৭:৪২, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ডিসিসিআই ও দুবাই চেম্বার্স-এর মধ্যকার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের অধিকতর সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরকারী ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)’র বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের অংশগ্রহণে দুবাই চেম্বার্স আয়োজিত “দুবাই-বাংলাদেশ বিজনেস ব্রিফ্রিং” শীর্ষক দ্বিপাক্ষিক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

দ্বিপাক্ষিক এই মতবিনিময় সভাটি আজ বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুবাই চেম্বার অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ এবং দুবাই চেম্বার্স এর সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ আলী রাশেদ লুতাহ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা চুক্তিটিতে স্বাক্ষর করেন।

দ্বি-পাক্ষিক সহযোগীতা বৃদ্ধি এবং পারস্পরিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বহুমুখীকরণকে উৎসাহিত করতে এই চুক্তিটি স্বাক্ষর করা হয়। এর আওতায় উভয় সংগঠনের অন্তর্ভূক্ত ব্যবসায়ীদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগীতা বৃদ্ধি, বিটুবি ম্যাচ মেকিং এর আয়োজন, যৌথ বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা, বাণিজ্য সভা, মেলা বা প্রদর্শণীর আয়োজন এবং সর্বোপরি বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের আদান প্রদানকে গুরুত্ব দেয়া হবে। 

মতবিনিময় সভায় ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশী প্রবাসীদের জন্য অন্যতম বৃহত্তম একটি বাজার এবং বিদেশে কর্মরত মোট প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীদের মধ্যে প্রায় ১৭ শতাংশই এই দেশটিতে কর্মরত রয়েছে যা সৌদি আরবের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক বিনিয়োগ কাঠামো, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অনুকূল রেগুলেটরি পরিবেশ, শতভাগ বিদেশি মালিকানার সুযোগ, বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধা এবং শক্তিশালী মেধাস্বত্ত সুরক্ষা আইন ইত্যাদি কারণে দুবাই-এর ব্যবসায়ীদের কাছে বাংলাদেশ হয়ে উঠতে পারে একটি আকর্ষনীয় বিনিয়োগের গন্তব্য। বাংলাদেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগের সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশেষ করে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর লজিস্টিক সেবা খাতে ইউএই’র উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের প্রচুর সুযোগ রয়েছে বলে তিনি জানান।

এছাড়াও বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ফিনটেক, আর্থিক খাত, স্বাস্থ্য সেবা, তথ্য-প্রযুক্তি, পর্যটন ও মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য দুবাইয়ের উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান ডিসিসিআই সভাপতি। 

স্বাগত বক্তব্যে দুবাই চেম্বার্স-এর সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ আলী রাশেদ লুতাহ বলেন, বাংলাদেশ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের অভিন্ন উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জনে দু’দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগীতা বৃদ্ধিতে দুবাই চেম্বার্স কাজ করে যেতে বদ্ধপরিকর।

তিনি আরও জানান, দুবাইতে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের অধিকতর বাণিজ্য সম্প্রসারণে দুবাই চেম্বারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগীতা বরাবরের ন্যয় অব্যাহত থাকবে। ২০২৪ সাল শেষে দুবাই চেম্বারে নিবন্ধিত বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৮ হাজার ৬৮৬টি যা কিনা বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের কাছে দুবাই-এর আকর্ষনকেই প্রতিফলিত করে। এছাড়াও তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইউএইতে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থানীয় শাখা অফিস স্থাপনের প্রস্তাব করেন, যা বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর পাশাপাশি বিশেষ করে আফ্রিকায় বাংলাদেশী পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

তিনি বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইউএইতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এছাড়াও তথ্য-প্রযুুক্তি খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশে একটি কার্যকর ডাটা সেন্টার স্থাপন জরুরী বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।      

এসময়, ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনার উপর একটি তথ্য-চিত্র উপস্থাপন করেন। তিনি দুদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের অধিকতর সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরের উপর জোরারোপ করেন। অপরদিকে, দুবাই এবং বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় বাণিজ্যিক সম্পর্কের উপর আরও একটি তথ্য-চিত্র উপস্থাপন করেন দুবাই চেম্বার্স-এর গবেষণা ও তথ্য বিভাগের প্রধান ওমর খান। তিনি বলেন, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে দুদেশের বেসরকারিখাতের প্রতিনিধিদের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন একান্ত জরুরী। তিনি বলেন, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ডাটা সেন্টার, স্বাস্থ্যসেবা, লজিস্টিক, ফ্যাশন ডিজাইন, ই-কমার্স প্রভৃতি খাতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের ইউএই-তে বিনিয়োগের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। 

বাণিজ্য আলোচনা সভা শেষে দুবাই চেম্বার্স-এর সদস্যভুক্ত ৫০টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দের সাথে ঢাকা চেম্বারের প্রতিনিধিদলের সদস্যদের বিটুবি ম্যাচ-মেকিং সেশন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দুদেশের উদ্যোক্তাদের নিজেদের মধ্যকার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় যোগদান করেন। ডিসিসিআই উর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজীব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মোঃ সালেম সোলায়মান এবং বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সদস্যবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন।

 

×