ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১

রমজানে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে ॥ অর্থ উপদেষ্টা

আগামী জুনেই বাজেট

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৩৭, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আগামী জুনেই বাজেট

আগামী জুন মাসেই ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট

রমজানে সবধরনের ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এ ছাড়া রোজার পর মূল্যস্ফীতি ৭-৮ শতাংশের ঘরে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, পণ্য মজুত করে দাম বাড়ানো হলে অভিযুক্ত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে সরকার। শুধু তাই নয়, আগামী জুন মাসেই ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করা হবে। 
মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।  এর আগে বৈঠকে এলএনজি, সার ও গম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়।  
রোজা সামনে রেখে অর্থ উপদেষ্টার কাছে মানুষকে আশ্বস্ত করার মতো কোনো খবর আছে কি না? এ প্রশ্নে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের কাছে আশ্বস্ত করার খবর হলো-আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি রোজার সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে। রোজা ছাড়াও মানুষের কনজাম্পশন প্যাকেজে যে জিনিসগুলো আছে, সেগুলো এনসিওর করতে।

সেজন্য আমরা নিরলসভাবে চাল, ডাল, চিনির সরবরাহ নিশ্চিত করছি। এখন তো চিনির দাম অনেকটাই রিজনেবল অবস্থায় এসেছে। আমরা চেষ্টা করছি বাকিগুলো যাতে রিজনেবল দামে আসে। প্রথমত রমজানে সরবরাহটা নিশ্চিত করা হবে। সরবরাহ নিশ্চিত করলেও অনেক সময় সঠিক দামে ভোক্তারা পায় না। এখানে আবার মার্কেট ডায়নামিকস আছে। তিনি বলেন, আমি কয়েকদিন আগে বলেছি, মজুত যারা করবে, তাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়া হবে।

দরকার হলে সেটা আমরা রিপিট করব। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ছাড়া অন্যান্য যে এজেন্সি আছে... সয়াবিন গুদামে, বেসমেন্টে রেখে দিয়েছে কি না? কিছুটা তারতম্য হতে পারে, কিন্তু একটা ক্রাইসিস হয়ে যাবে, সেটা হওয়ার কথা নয়। আমরা চেষ্টা করছি, রোজার সময় যাতে কোনোভাবে দাম না বাড়ে। মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার উদ্দেশ্য আমাদের আছে। এক পার্সেন্ট কমেছে। সেটা যাতে ধারাবাহিকভাবে কমে আসে।

বাজেট দেওয়ার সময় এটা যাতে রিজনেবল অবস্থায় আসে। কারণ, এটা আমাদের একটা চ্যালেঞ্জ। বিস্কুটের ওপর ভ্যাট কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, এখন কেউ লেখে না যে বিস্কুট কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। আরও দুই-একটা পণ্যের কথা আমাকে বলেছে, রোজার সময় এই পণ্যগুলো একটু দরকার। আমি দেখব, এটা যতটা কমানো যায়। 
চলতি বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতে বাজেট দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে, এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা অনেক চিন্তা-ভাবনা করেছি, বাজেটটা জুনের পরে কারও জন্য অপেক্ষা করে না। অনেকগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার হয়েছে, কোনো সময়েই বাজেট অপেক্ষা করেনি। রিভাইজ বাজেট তো আমাদের করতেই হবে। বাজেট আমরা জুনের মধ্যেই দেব।  
বাজেট প্রণয়নে প্রধান অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ করা হবে বলেও জানিয়েছেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আমরা জানিয়ে দেব, তারা যদি মনে করে, রিভাইজ করবে। আমরা এখন আগের সরকারের বাজেট রিভাইজ করছি না? তিনি বলেন, আমরা যদি বাজেট না দিই, তাহলে দাতাদের প্রজেকশন আছে। কত কী হবে, সেটা আমরা মিস করতে পারব না। 
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি হয়তো কোথাও বক্তৃতা দিয়ে বাজেট পেশ করব। অ্যাপ্রুভাল নেওয়ার তো বিভিন্ন স্টেজ আছে। ব্যবসায়ীরা বলে থাকেন, এলসি খোলার ক্ষেত্রে তারা ডলার পান না। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ব্যবসায়ীদের আপনারা ভালো করে চেনেন। আমি তো আরও ভালো করে চিনি ব্যবসায়ীদের।

তারা কিন্তু অনেক সময় একপেশে কথাবার্তা বলেন। এক গ্রুপ এসে বলবে, স্যার আপনি তো এটার ওপর ট্যাক্স দিয়েছেন বা কমিয়ে দিয়েছেন। আরেক গ্রুপ এসে বলবে, স্যার আপনি কমাইয়েন না, যা দিয়েছেন ঠিকই আছে। সুতরাং আমাকে চিন্তা-ভাবনা করে করতে হয়। বাজারে কিন্তু ডলারের সংকট নেই। আমাদের রপ্তানি বেড়েছে। সেটা আমরা জানছি। কারণ, আমাদের ক্যাশ ইনসেনটিভ দিতে হয়। 
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, এখন কারেন্ট ব্যালেন্স অ্যাকাউন্ট পজিটিভ এসেছে। ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট পজিটিভ। এটা ধরে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ। তবে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আইনশৃঙ্খলার স্থিতিশীলতা দরকার। এটা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। যদিও এটা আমার বিষয় না। আমি যখন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলি, তারা এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

ফ্যাক্টরি, মূল্যবান জিনিসপত্র, গুদামের নিরাপত্তা না দিতে পারলে ব্যবসায়ীরা স্বস্তি অনুভব করবেন না। এ বিষয়ে আমরা একমত এবং এটার দ্রুত সমাধান করার জন্য আমরা আলাপ-আলোচনা করেছি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশে কিছু টাকা পাঠানোর কথা বলেছেন। বাংলাদেশে কোথায় কীভাবে এ টাকা খরচ হয়েছে, এ বিষয়ে আপনি কোনো তদন্ত করবেন কি না?

এ প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এটা যদি আমাদের দেশের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে হয়, কারও মোটিভেটেড কোনো ইস্যুতে এটা ব্যবহার করে, সেটা দেখার বিষয়। আমরা দেখব, ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের মোটিভেশনাল কাজে টাকা না আসে। 
এলএনজি সার ও গম আমদানি হবে ॥ দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে সুইজারল্যান্ড থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮’ অনুযায়ী স্পট মার্কেট থেকে এই এক কার্গো এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হবে প্রায় ৭৮৮ কোটি টাকা।

সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অবলম্বন করে এই এলএনজি আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়। 
এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান কাফকো থেকে ৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কেনার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে ৩১০ কোটি ৬ লাখ ৫২ হাজার ২০০ টাকা। এরমধ্যে ৩০ হাজার টন আসবে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এবং ৩০ হাজার টন আসবে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড থেকে। 
দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে সুইজারল্যান্ড থেকে ৫০ হাজার টন গম আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। প্রতিকেজি গমের মূল্য ধরা হয়েছে ৩৬ টাকা। সে হিসাবে এই গম আমদানিতে মোট ব্যয় হবে ১৮০ কোটি ৭ লাখ ৮১ হাজার টাকা।

×