
.
প্রস্তাবিত গ্যাসের দাম বাস্তবায়িত হলে দেশে উৎপাদনমুখী শিল্প টিকবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা মনে করেন, দেশে এখনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। ব্যবসায়ী- উদ্যোক্তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ অবস্থায় গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করা হলে অনেক শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। দেশে নতুন বিনিয়োগ সঙ্কুচিত হয়ে পড়বে।
রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও পলিসি এক্সচেঞ্জের যৌথ আয়োজনে পলিসি কনসিডারেশন ফর এনার্জি এফরডিবিলিটি অ্যান্ড ইম্প্যাক্ট অন ইন্ডাস্ট্রিয়াল কম্পিটিটিভনেস শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন ব্যবসায়ীরা। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসরুর রিয়াজ, শুভেচ্ছা ও সমাপনী বক্তব্য দেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালা, প্রধান অতিথি ছিলেন বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ। এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ফরেন চেম্বারের সভাপতি জাভেদ আখতার, বিএসআরএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমীর আলী হোসাইন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বিসিআই সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী বলেন, এখন পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ অবস্থা চলতে থাকলে নতুন কারখানা এখানে আর হবে না। অনেকগুলো ব্যাংক দেওলিয়া, এনবিআরও সহযেগিতা করছে না। এ অবস্থায় অযৌক্তিকভাবে গ্যাসের দাম বাড়ালে উদ্যোক্তারা কেউ বিনিয়োগ করবে না। বিদ্যমান বিনিয়োগও সম্প্রসারণ হবে না। সার্বিকভাবে দেশে শিল্প থাকবে না। তিনি আরও বলেন, সরকার নতুন শিল্পের জন্য ১৫ শতাংশ এবং সম্প্রসারণ শিল্পের জন্য ৫০ শতাংশ গ্যাস দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। এমন পরিকল্পনার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ, আমরা আর কেউ শিল্প করতে চাই না। তবে বর্তমান শিল্পকে সহায়তা করবেন না, এটা হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, দেশের অর্থনীতি ধরে রাখতে হলে গ্যাসের দাম বর্তমানের চেয়ে কমানো দরকার।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, সিস্টেম লস কমানোর পাশাপাশি শুল্ক-কর কমিয়ে গ্যাসের দাম কমানোর সুযোগ রয়েছে। তা না করে যদি গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়, তাহলে দেশে শিল্পই থাকবে না। গ্যাসের বর্তমান দাম কমানোর উপায় নিয়ে গবেষণা করা দরকার। কমিশন খাওয়ার জন্য স্পট মার্কেট থেকে গ্যাস কিনতে অস্থির ছিল বিগত সরকারের লোকজন। তারা বিদেশে বসে এখনো কমিশন খাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, দাম কমানো না গেলে শিল্প থাকবে না। মূলত আমরা ফেঁসে গেছি। বিটিএমএ সভাপতি বলেন, কিছু ব্যাংকে টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক, কারণ ব্যাংকগুলো লুট হয়েছে। ব্যাংকগুলো টিকিয়ে রাখতে টাকা দেওয়া হলেও শিল্প টিকিয়ে রাখার দিকে মনোযোগ নেই। ব্যাংক ঋণের সুদ হার ১৮ শতাংশ। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে চলতি মূলধন অর্ধেক কমে গেছে। তিনি আরও বলেন, দেশে এতগুলো চিনিকল থাকতেও পাকিস্তান থেকে চিনি আমদানি হচ্ছে, এটা লজ্জাজনক; এই আমদানির কারণে কিন্তু কর্মসংস্থান হবে না। প্রতিদিন একটু একটু করে বিপদ বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসরুর রিয়াজ বলেন, গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করলে আমদানি নির্ভরতা বাড়বে, চাপে পড়বে অর্থনীতি।
এখনকার চ্যালেঞ্জিং সময়ে গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করা হলে উৎপাদনমুখী খাতে পণ্য উৎপাদনের ব্যয় বাড়বে। কমবে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা। নতুন বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একই সঙ্গে সিমেন্ট, ইস্পাত ও সিরামিক খাতে নতুন করে আমদানি নির্ভরতা বাড়বে। ফলে আর্থিক খাতে চাপ পড়বে। আমদানি বাড়লে বৈদেশিক মুদ্রা বেশি লাগবে। মাসরুর রিয়াজ বলেন, আবার গ্যাসের দাম বাড়লে অনেক শিল্প বন্ধ হবে, তখন মন্দ ঋণ বাড়বে। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, শিল্পায়নের জন্য গ্যাসের সংকট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন কোনো বিনিয়োগ বিশেষ করে বিদেশী বিনিয়োগ না আসার সবচেয়ে বড় কারণ গ্যাস সংকট। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেছেন, গত ১৫ বছরের নতুন কূপ খননের জন্য তেমন কিছুই খরচ হয়নি, তৈরি হয়নি নতুন কোনো নীতিমালাও। যা দেশের গ্যাস সংকটের অন্যতম কারণ। এলএনজি আমদানির চেয়ে কম খরচে দেশে অনুসন্ধান করা সম্ভব ছিল।