ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১

আগামী বাজেটের আকার ছোট হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার॥

প্রকাশিত: ২১:০০, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আগামী বাজেটের আকার ছোট হবে

 

 

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছোট হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ। 

রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জাতীয় বাজেট জনগণের প্রত্যাশা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট অ্যান্ড বিজনেসম্যান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন (আইবিডব্লিউএফ) আয়োজিত সেমিনারে  সভাপতিত্ব করেন, ফাউন্ডেশনের সভাপতি মুহম্মদ শহিদুল ইসলাম। 


প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, ‘২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছোট হতে হবে। অর্থাৎ বাজেটের আকার ছোট হতে হবে। কারণ এই বাজেট বড় প্রকল্পের নামে অর্থ ব্যয় কিংবা অর্থ লুটপাটের বাজেট হবে না। বাজেটের আকার যাই হোক, তা বাস্তবায়ন করতে পারলে তা দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে। বাজেটে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নিতে হবে।’ সেই সঙ্গে দেশের উন্নয়নে যাকাত অর্থনীতির গুরুত্বও তুলে ধরেন।


এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক। 

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, ‘গত বাজেটের চেয়ে এবারের বাজেট ভিন্ন হতে হবে। গত বাজেট নির্বাচনের আগে হয়েছে, সেটি নির্বাচনী বাজেট ছিল। প্রায় সব সরকারই নির্বাচনের আগের বাজেটে বলে যায়, আমরা ৫ বা ৬ মাস ক্ষমতায় আছি, বাজেটের আর্ধেক আমরা বাস্তবায়ন করতে পারবো, পরবর্তী অংশ নির্বাচনে জয়ী সরকার বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু গত বাজেটে ঘুণাক্ষরেও এই কথাটি বলা হয়নি। সরকার যে পরিবর্তন হতে পারে বাজেটে তা উল্লেখই করা হয়নি। আমরা এখন ব্যয়ের বাজেট ঠিক রেখে চলছি। হয়তো কিছু মেগা প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘উৎপাদন থেমে গেলে কিংবা কর্মসংস্থান না থাকলে অর্থনীতি কিন্তু ঠিক থাকবে না। জাকাতের অর্থ যদি সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয় হয় তাহলে সরকারের ব্যয়ের বাজেট কমে যাবে। জাকাত দিলে এনবিআরের পক্ষ থেকে রেয়াদ সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। এআইটি’র অর্থ কেন ফেরত দেওয়া হবে না, এটার ব্যবস্থা রাখা হবে। কর (রাজস্ব) বিভাগ ও কর (নীতি) বিভাগকে আলাদা রাখা উচিত। যখন তখন এসআরও জারি করবেন না, এতে মৌলিক স্বাধীনতা থাকে না, বিদেশি বিনিয়োগ আসে না; এটা ঠিক না। বাজেটে দেশীয় শিল্পকে উৎসাহিত করার ব্যবস্থা থাকতে হবে।’
রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) চেয়ারম্যান আব্দুল হক বলেন, ‘৫ আগস্টের পর প্রাইভেট সেক্টরের সংস্কার হওয়ার দরকার ছিল, সেটি হয়নি। বাজেটে যে অপচয় হয়, এনবিআর ভবন তৈরিতে হাজার হাজার কোটি টাকা অপচয় করা হয়েছে। কাগজে কলমে শুধু প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে। বাজেটে শুল্ক কর যাই থাকুক, অপচয় রোধ করতে হবে। উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে নতুন বাজেটে পদক্ষেপ নিতে হবে।’
দেশের নীটওয়্যার ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মো. হাতেম বলেন, ‘সংস্কার কমিশনে স্টেক হোল্ডার বা ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি নেই, এটি একটি গলদ। এখন যে ট্যাক্স পলিসি রয়েছে, সেটি ব্যবসা পরিপন্থী। কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের টাকা লুণ্ঠন করার জন্যে আইন করে রেখেছে। ঘুষ ও দুর্নীতির ব্যবস্থা সরকারিভাবেই উনারা করে রেখেছেন। আমার (ব্যবসায়ীদের) টাকা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে সরকার। এনবিআরের পলিসি মেকিংয়ে যারা থাকবেন, কোনক্রমেই তারা যেন এক্সিকিউশনে থাকতে না পারেন, সেই ব্যবস্থা নিতে হবে।’ বিভাগ ভিত্তিক বাজেট করার পরামর্শ দেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আবুল কাশেম হায়দার। সেমিনারে অন্যবক্তারা বলেন, আইবিডব্লিউএফ এর দাবি ও সুপারিশসমূহ আগামী বাজেটে প্রতিফলিত হলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, ব্যবসায়ীদের সমস্যা সমাধান ও জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। সরকারের প্রতি অনুরোধ, এই প্রস্তাবনাগুলো বিবেচনা করে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও উন্নয়নমুখী বাজেট প্রণয়ন করা।

সাজিদ

×