
.
বিদেশী ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের শেয়ারবাজার ছাড়ার প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে বিদেশী ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব কমেছে ৫৭টি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে বিদেশী ও প্রবাসীদের বিও হিসাব কমেছে ৪৫০টি।
অবশ্য বিদেশী ও প্র্রবাসীদের শেয়ারবাজার ছাড়ার এই প্রবণতা চলছে বেশ আগে থেকেই। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে দেশের শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক বিদেশী ও প্রবাসীদের বিও হিসাব কমছে। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিদেশী ও প্রবাসীদের বিও হিসাব কমেছে প্রায় ৯ হাজার।
বিদেশী ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার ছাড়লেও স্থানীয় বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়ছে। চলতি বছরে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে চার হাজারের বেশি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর দেশ চালানোর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সাড়ে ছয় মাসে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবে বেড়েছে প্রায় ১৮ হাজার।
বিও হলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্রোকারেজ হাউস অথবা মার্চেন্ট ব্যাংকে একজন বিনিয়োগকারীর খোলা হিসাব। এই বিও হিসাবের মাধ্যমেই বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে লেনদেন করেন। বিও হিসাব ছাড়া শেয়ারবাজারে লেনদেন করা সম্ভব না। বিও হিসাবের তথ্য রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)।
সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, ২১ ফেব্রুয়ারি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৮৬ হাজার ৬৪০টি। যা শেখ হাসিনার সরকারের পতনের সময় ছিল ১৬ লাখ ৬৮ হাজার ৫৮টি। এ হিসাবে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর শেয়ারবাজারে বিও হিসাব বেড়েছে ১৮ হাজার ৫৮২টি। এরমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিও হিসাব বেড়েছে ১৭ হাজার ৭৪৫টি। অন্তর্বর্তী সরকার যেদিন দায়িত্ব নেয় সেদিন বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১৬ লাখ ৬৮ হাজার ৮৯৫টি। এছাড়া চলতি বছরে শেয়ারবাজারে বিও হিসাব বেড়েছে ৪ হাজার ১৮৮টি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। পদত্যাগ করে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট দেশ চালানোর দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরইমধ্যে এই সরকারের প্রায় সাড়ে ৬ মাস পার হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর প্রথম চার কার্যদিবস শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হলেও অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর শেয়ারবাজারে পতনের পাল্লা ভারি হয়েছে। তবে শেয়ারবাজারে মন্দা দেখা দিলেও বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বাড়তে দেখা যাচ্ছে।
অবশ্য সার্বিকভাবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়লেও বিদেশী ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমছে। সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিদেশী ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব আছে ৪৬ হাজার ৬৩৪টি। ২০২৪ সাল শেষে বিদেশী ও প্রবাসীদের বিও হিসাব ছিল ৪৬ হাজার ৬৯১টি। অর্থাৎ চলতি বছরে বিদেশী ও প্রবাসীদের বিও হিসাব কমেছে ৫৭টি।
হাসিনা সরকার পতনের সময় বিদেশী ও প্রবাসীদের বিও হিসাব ছিল ৪৭ হাজার ৮৪টি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার দিন ছিল ৪৭ হাজার ৮১টি। অর্থাৎ বিদেশী ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ধারাবাহিকভাবে কমেছে। এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে কমেছে ৪৪৭টি।
বিদেশীদের বাংলাদেশের শেয়ারবাজার ছাড়ার এই প্রবণতা চলছে আরও আগে থেকেই। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ধারাবাহিক বিদেশী ও প্রবাসীদের বিও হিসাব কমছে। ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর বিদেশী ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব ছিল ৫৫ হাজার ৫১২টি। এরপর ওই বছরের শেষদিন অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর এ সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৫৫ হাজার ৩৪৮টিতে। এ হিসাবে ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবরের পর দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশী ও প্রবাসীদের নামে বিও হিসাব কমেছে ৮ হাজার ৮৭৮টি। বিদেশীদের শেয়ারবাজার ছাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকলেও সরকার পতনের পর স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বাড়তে দেখা যাচ্ছে। সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশী বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব আছে ১৬ লাখ ২২ হাজার ৪০৪টি। ২০২৪ সালের শেষে যা ছিল ১৬ লাখ ১৮ হাজার ২৬২টি। অর্থাৎ চলতি বছরে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে ৪ হাজার ১৪২টি।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের সময় স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব ছিল ১৬ লাখ ৩ হাজার ৮২২টি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার দিন স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব ছিল ১৬ লাখ ৪ হাজার ৬৫৮টি। অর্থাৎ অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে দেশী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে ১৭ হাজার ৭৪৬টি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেয়ারবাজারে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বাড়তে দেখা গেলেও তার আগে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজার ছেড়েছেন। ২০২৪ সালের শুরুতে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ছিল ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ৫৫১টি। বর্তমানে বিও হিসাব আছে ১৬ লাখ ৮৬ হাজার ৬৪০টি। অর্থাৎ ২০২৪ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিও হিসাব কমেছে ৮৬ হাজার ৯১১টি।
বর্তমানে শেয়ারবাজারে যেসব বিনিয়োগকারী আছেন তাদের মধ্যে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব আছে ১২ লাখ ৬৪ হাজার ৬৩৪টি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সময় এই সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৪৮ হাজার ৪৩৪টি। অর্থাৎ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুরুষ বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে ১৬ হাজার ২০০টি।
বর্তমানে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৪ হাজার ৪০৪টি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সময় এ সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ২ হাজার ৪৭২টি। এ হিসাবে হাসিনা সরকারের পতনের পর নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে এক হাজার ৯৩২টি।
নারী ও পুরুষ বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি কোম্পানির বিও হিসাবও বেড়েছে। বর্তমানে কোম্পানি বিও হিসাব রয়েছে ১৭ হাজার ৬০২টি। হাসিনা সরকারের পতনের সময় এ সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ১৫২টি। সে হিসাবে গত সাড়ে ৬ মাসে কোম্পানি বিও হিসাব বেড়েছে ৪৫০টি।