ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১

বিদেশী ফুল

এস এম মুকুল

প্রকাশিত: ১৮:৪৩, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বিদেশী ফুল

বাংলাদেশে ফুলের সম্ভাবনাময় বাজার রয়েছে। ফুল চাষিরা বিদেশী ফুল চাষে অধিক লাভ পাওয়ায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এই উদ্যোগ পুরো মাত্রায় বাস্তবায়ন হলে সারা বছর বিদেশী প্রজাতির বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ করে দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানি করেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির কর্মকর্তাদের মতে, রজনীগন্ধা, গোলাপ, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকার মতো ফুল চাষে দেশের কৃষকরা অনেক আগে থেকেই সিদ্ধহস্ত। এখন তাদের জমিতে ফুটছে জারবেরা, গ্লাডিওলাসের মতো আমদানি-বিকল্প ফুল। এমনকি অর্কিডও আবাদ হচ্ছে দেশে। তাই এখন আর মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড থেকে ফুল আমদানি করতে হচ্ছে না। বাংলাদেশ থেকে অনেক ফুল এখন রপ্তানি হচ্ছে। তবে পরিমাণে কম হলেও সবজির সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে ফুল আমাদের দেশের রপ্তানিকারকরা পাঠিয়ে থাকেন। কৃষকদের মাধ্যমে বিদেশী ফুল চাষ প্রসারে এগিয়ে এসেছে বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মেটাল এগ্রো লিমিটেড। জাপান থেকে সরাসরি বীজ এনে তা কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার কাজ শুরু করেছে তারা। পঞ্চগড়সহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি জেলায় দীর্ঘদিন ধরে শীত মৌসুম চলে। এই শীতকে কাজে লাগিয়ে বছরের বেশি সময় ধরে এ অঞ্চলে শীতকালীন ফুল চাষ করা সম্ভব। বিশেষ করে শীত প্রধান দেশ থেকে উন্নত প্রজাতির ফুলের বীজ এনে দেশে তা প্রসার ঘটালে উত্তরাঞ্চলে ফুল চাষে বিপ্লব ঘটাতে পারে। কৃষকদের ফুল চাষে বড় অন্তরায় সঠিক বীজের অভাব। মেটাল এগ্রো সরাসরি বিশ্বের বিখ্যাত বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান টাকি সিড কোম্পানি থেকে ফুলের বিভিন্ন প্রজাতির বীজ আনছে। প্রাথমিকভাবে তারা পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার নগর চেংঠী এলাকার কাওয়াপুকুর গ্রামে নিজেদের খামারে এই বীজ দিয়ে ফুল উৎপাদন করে সাফল্য পেয়েছে। খামারের হরেক রকমের বিদেশী ফুল দেখে স্থানীয় কৃষকরা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নার্সারি মালিক ও কৃষকরা ফুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। তাদের এই প্রকল্পে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে ইউএসএআইডি।
দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির ফলে সমাজের নানা স্তরে ফুলের ব্যবহার বাড়ছে। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে ফুলের বাণিজ্যিক চাষাবাদ অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখা দিয়েছে। ফুল চাষের সম্ভাবনাকে কাজে লাগোনোর জন্য এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশে উৎপাদিত ফুল বিদেশে রপ্তানির জন্য প্যাকেজিং ব্যবস্থার উন্নয়ন, হিমাগার স্থাপন, ফুলের নতুন নতুন জাত উৎপাদনের ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সংশ্লিষ্টরা জানান, সম্ভাবনাময় ফুলশিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এর সঙ্গে জড়িত কৃষক ও উদ্যোক্তাদের স্বল্প হারে ঋণ সুবিধা প্রদান, আধুনিক প্রযুক্তি প্রাপ্তি ও ব্যবহারের প্রশিক্ষণ, উন্নত ও নতুন নতুন জাতের বীজ সরবরাহ করা, ওয়্যারহাউস ও কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণ এবং সর্বোপরি অবকাঠামো উন্নয়ন জরুরি। এ ছাড়া ফুল খাতের বিকাশে হিমাগার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই দেশের ফুল চাষসহ কৃষি খাতের উন্নয়নে ‘ওয়্যারহাউস নির্মাণ’ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা। ফুল চাষিদের অভিযোগÑ পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব, মানসম্মত বীজের স্বল্পতা, উন্নত পরিবহন ব্যবস্থার অভাব প্রভৃতি কারণে ফুলশিল্পে আশানুরূপ উন্নতি করা যাচ্ছে না। এসব সমস্যা সমাধান করা গেলে ফুলের উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব হবে। 

×