
ছবি; সংগৃহীত
ভ্যাট আদায়ের সময় ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ চল্লিশটি বাণিজ্য সংগঠন নিয়ে গঠিত বৈষম্যমূলক কর বৃদ্ধি প্রতিরোধ কমিটি। সংগঠনটির আহ্বায়ক সহিদুল হক মোল্লা ভ্যাট হার না বাড়িয়ে এনবিআরকে ভ্যাট আদায়ের আওতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ব্যবসায়ী পর্যায়ে সরবরাহের ক্ষেত্রে সকল পণ্যের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশই পুনর্বহাল করতে হবে। অন্যথায় পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা কোনোভাবেই ভোক্তাদের কাছ থেকে আদায় করা সম্ভব নয়।
তবে তার এই বক্তব্যের জবাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান জানান, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট কমানোর বিষয়ে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ব্যবসায়ীরা যাতে অনলাইনেই ভ্যাট দিতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কোনো কর্মকর্তা হয়রানি কিংবা ভ্যাট আদায়ের নামে কোনো কিছু দাবি করলে সঙ্গে সঙ্গে এনবিআরকে জানান। এমনকি তাদের কড়া ভাষায় জবাব দিন। নতুন বাংলাদেশে সবাইকে এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।
বুধবার বিকেলে বৈষম্যমূলক কর বৃদ্ধি প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ থেকে সরবরাহের ক্ষেত্রে ভ্যাট কমানোর তাগিদ দিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের সঙ্গে বৈঠক করা হয়। ওই বৈঠকে বৈষম্যমূলক কর বৃদ্ধি প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক সহিদুল হক মোল্লা ও সদস্য সচিব শহীদুল হক শহীদ ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর আগের মতো ৫ শতাংশ বহালের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
এছাড়া বৈঠকে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের নেতা ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহ-সভাপতি মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ, সাবেক পরিচালক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী খোকন, আমির হোসেন নূরানী ও প্রায় চল্লিশটি বাণিজ্য সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, দেশের স্বার্থেই ভ্যাট ও ট্যাক্স আদায় করতে হয়। ট্যাক্স জিডিপিতে এখনো বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। আগামী এপ্রিল মাসে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বৈঠকের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা জানতে চায় তোমাদের রাজস্ব আদায় এত কম কেন? আফ্রিকা অনেক ভাল করছে তাই আমরা ওখানেই টাকা দেব। এ কারণে ভ্যাট ও ট্যা´ আদায়ে আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোর মতামতকে গুরুত্ব দিতে হয়। তবে ব্যবসায়ীরা যাতে স্বস্তি পান সেইদিকে লক্ষ্য রাখা হবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, আপনারা ভ্যাট দিন, আগে যেভাবে ৫ শতাংশ দিতেন সেভাবেই দেন। ভ্যাট দেওয়াটা অব্যাহত রাখুন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, যারা নিয়মিত ভ্যাট দিচ্ছেন তাদের কাছ থেকেই এতদিন বেশি ভ্যাট আদায়ের চাপ দিতো এনবিআর। কিন্তু এখন আর এটা হবে না। সরকারের আয় বাড়াতে ভ্যাটের আওতা বাড়ানো হবে।
এনবিআর চেয়ারম্যানকে ইতোমধ্যে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে কর বৃদ্ধি প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক সহিদুল হক মোল্লা জানান, অনুচ্ছেদ (৩) এ ব্যবসায়ী পর্যায় সরবরাহের ক্ষেত্রে সকল পণ্যের ওপর মূল্য সংযোজন কর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭.৫ ভাগ করা হয়েছে। অংশীজনদের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা না করেই মূসক ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করায় আমরা ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষ থেকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। তাছাড়া যে সমস্ত ব্যবসায়ী কৃষিপণ্য অব্যাহতি প্রাপ্ত পণ্য আমদানি করেন সে সমস্ত কৃষিপণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট পুনর্নির্ধারণ করায় আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রিম কর ৫ শতাংশ থাকার করণে ব্যবসায়ীকে প্রায় ৪৯০ শতাংশ ট্রেজারি বেশি দিতে হচ্ছে। যা ব্যবসায়ী ভোক্তার নিকট থেকে আদায় করা একটি অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সহিদুল হক মোল্লা লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কৃষি ও শিল্প যন্ত্রাংশ, ডিজেল ইঞ্জিন, অ্যাগ্রিকালচার মোটর পাম্প, অগভীর এবং গভীর পাম্প (সাবমারসিবল পাম্প) যথাযথভাবে আমদানি করে কৃষকদের মাঝে বিক্রয় করে আসছি। এরই মধ্যে উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের মাঝপথে এসে সরকার ৯ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে গেজেটে অনুচ্ছেদ (৩) এ ব্যবসায়ী পর্যায় সরবরাহের ক্ষেত্রে সকল পণ্যের ওপর মূল্য সংজোযন কর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭.৫ শতাংশ করা হয়েছে।
সরকার সব সময় কৃষির জন্য ভর্তুকি দিয়ে থাকে যাতে কৃষক পণ্য উৎপাদনে আগ্রহী হয় এবং বাজারে কৃষিপণ্যের মূল্য ক্রেতা সাধারণের নাগালের মধ্যে থাকে। আমাদের আমদানিকৃত সকল পণ্যের গ্রাহক কৃষক তথা গরিব খেটে খাওয়া মানুষ। কিন্তু সরকারের এহেন পদক্ষেপে কৃষিপণ্যের তথা মেহনতি মানুষের ব্যবহৃত পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাবে।
তিনি আরও বলেন, কাস্টমস্ এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগীয় কার্যালয় প্রতিটি ব্যবসায়ীকে ডেকে ডেকে ৪.৩ উপকরণ উৎপাদনসহ ৪০ শতাংশ অতিরিক্ত দিয়ে ৪.৩ জমা দিতে বাধ্য করছেন। উনারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নবাবপুরের ব্যবসায়ীর ক্রয়মূল্যের সঙ্গে ১০ শতাংশ যোগ করে পণ্যের বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করে থাকেন কিন্তু ১০ শতাংশ লাভ করা আমাদের মতো পাইকারি ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে অসম্ভব। এই বিষয়টিও বিবেচনা করে ভ্যাট নির্ধারণ করতে হবে।
শরিফুল