ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে চাপের মুখে ব্যাকিং খাত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০১:১০, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে চাপের মুখে ব্যাকিং খাত

উচ্চ মূল্যস্ফীতি

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সংসার চালাতে যখন হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। মানুষের আয়ের উৎস থেকে টাকা জমা করার পরিমাণও কমেছে।  হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো পদক্ষেপ এখনো অর্থনীতিতে কোন গতি আসেনি। ব্যাংক খাতের আমানতের প্রবৃদ্ধি এখনো ৮ শতাংশের নিচে রয়েছে। 
বাংলাদেশ ব্যাকের প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্য বলছে, ডিসেম্বরে আমানতের প্রবৃদ্ধি আগের মাসের চেয়ে কমে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বিদায়ী ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ। অক্টোবরে তা সামান্য বেড়ে হয় ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ।

নভেম্বরে আরও বেড়ে ৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। ডিসেম্বরে তা কমে গেল। এর আগে ব্যাংক খাত আমানতের এত কম প্রবৃদ্ধি দেখেছিল ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, সেবার ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। 
হাসিনা সরকার পতনের মাস অগাস্টে ব্যাপক সহিংসতা, বিশৃঙ্খলার মধ্যেও ব্যাংক আমানতে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির তথ্য দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তার আগে ১০ শতাংশের কম প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২০২৩ সালের অক্টোবরে, ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতে আমনত দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৭৬ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা।

২০২৩ সালের একই সময় তা ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের ওপর থাকা উচিত। আর বাংলাদেশের মত দেশে ১২-১৪ শতাংশ হওয়া উচিত। সিটিজেনস ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ মাসুম মনে করেন, ব্যাংক আমানত কমে যাওয়ার পেছনে মূলত তিনটি কারণ রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘মাস শেষে যখন বাড়তি টাকা থাকে, তখন ব্যাংকে আমানত হিসাবে জমা করে মানুষ। বর্তমানে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে। মানুষের খরচ বেড়েছে। সংসার চালানোর পর বাড়তি টাকা হাতে থাকছে না।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সার্বিক মূল্যস্ফীতির তথ্যে দেখা যায়, বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেড়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ।  ২০২৪ সালের শুরুতে আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবার সরকার গঠনের পর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মৎস্য, কৃষি, খাদ্য, বাণিজ্য ও অর্থমন্ত্রণালয়ের সংযোগে যৌথভাবে কাজ শুরু করেছিল; তাতে লাভ হয়নি।
গতবছর জানুয়ারি থেকে ৯ শতাংশের ওপরে থাকা মূল্যস্ফীতির হার সরকার পতনের আন্দোলনের উত্তাপে জুলাই শেষে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে পৌঁছায়। অগাস্টে তা কিছুটা কমে ১০.৪৯ শতাংশ হয়। সেপ্টেম্বরের মূল্যস্ফীতির হিসাব যখন বের হয় ততদিনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়ে নতুন অন্তর্বর্তী কালীন সরকার ক্ষমতায়।

সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ হলেও অক্টোবরে তা আবার দুই অংকের ঘর ছাড়ায়। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন। মুদ্রা সরবরাহে লাগাম দিতে বারবার সুদের হার বাড়ানো হয়। কিন্তু নিত্যপণ্যের বাজারে সুফল মেলেনি।

×