![পণ্যের দাম কমাতে ভ্যাট ৫ শতাংশের বেশি নয় পণ্যের দাম কমাতে ভ্যাট ৫ শতাংশের বেশি নয়](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/art-2-2502151900.jpg)
বাড়তি মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট প্রত্যাহার
নতুন করে আরোপকৃত বাড়তি মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট প্রত্যাহার চেয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেছে দেশের শীর্ষ চল্লিশটি বাণিজ্য সংগঠন নিয়ে গঠিত বৈষম্যমূলক কর বৃদ্ধি প্রতিরোধ কমিটি। এই কমিটি মনে করে, ব্যবসায়ী পর্যায়ে সরবরাহের ক্ষেত্রে সকল পণ্যের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশই পুনর্বহাল করতে হবে। অন্যথায় পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা কোনোভাবেই ভোক্তাদের কাছ থেকে আদায় করা সম্ভব নয়।
বৃহস্পতিবার বৈষম্যমূলক কর বৃদ্ধি প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ থেকে সরবরাহের ক্ষেত্রে ভ্যাট কমানোর তাগিদ দিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের সঙ্গে বৈঠক করা হয়। ওই বৈঠকে বৈষম্যমূলক কর বৃদ্ধি প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক সহিদুল হক মোল্লা ও সদস্য সচিব শহীদুল হক শহীদ ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর আগের মতো ৫ শতাংশ বহালের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বৈঠকে এনবিআরের বেশ কয়েকজন সদস্য ও এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান ও অর্ধ শতাধিক বাণিজ্য সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যানকে দেওয়া লিখিত বক্তবে কর বৃদ্ধি প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক সহিদুল হক মোল্লা জানান, অনুচ্ছেদ (৩) এ ব্যবসায়ী পর্যায় সরবরাহের ক্ষেত্রে সকল পণ্যের ওপর মূল্য সংযোজন কর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭.৫ ভাগ করা হয়েছে। অংশীজনদের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা না করেই মূসক ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করায় আমরা ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষ থেকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।
তাছাড়া যে সমস্ত ব্যবসায়ী কৃষি পণ্য অব্যাহতি প্রাপ্ত পণ্য আমদানি করেন সে সমস্ত কৃষিপণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট পুনর্নির্ধারণ করায় আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রিম কর ৫ শতাংশ থাকার করণে ব্যবসায়ীকে প্রায় ৪৯০ শতাংশ ট্রেজারি বেশি দিতে হচ্ছে। যা ব্যবসায়ী ভোক্তার নিকট থেকে আদায় করা একটি অসম্ভব ব্যপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সহিদুল হক মোল্লা লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কৃষি ও শিল্প যন্ত্রাংশ, ডিজেল ইঞ্জিন, এগ্রিকালচার মোটর পাম্প, অগভীর এবং গভীর পাম্প (সাবমারসিবল পাম্প) যথাযথভাবে আমদানি করে কৃষকদের মাঝে বিক্রয় করে আসছি। এরই মধ্যে উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের মাঝপথে এসে সরকার ৯ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে গেজেটে অনুচ্ছেদ (৩) এ ব্যবসায়ী পর্যায় সরবরাহের ক্ষেত্রে সকল পণ্যের ওপর মূল্য সংজোযন কর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭.৫ শতাংশ করা হয়েছে।
সরকার সব সময় কৃষির জন্য ভর্তুকি দিয়ে থাকে যাতে কৃষক পণ্য উৎপাদনে আগ্রহী হয় এবং বাজারে কৃষিপণ্যের মূল্য ক্রেতা সাধারণের নাগালের মধ্যে থাকে। আমাদের আমদানিকৃত সকল পণ্যের গ্রাহক, কৃষক তথা গরিব খেটে খাওয়া মানুষ। কিন্তু সরকারের এহেন পদক্ষেপে কৃষিপণ্যের তথা মেহনতি মানুষের ব্যবহৃত পণ্যের মূল্য অস্বাবিকভাবে বৃদ্ধি পাবে।
তিনি আরও বলেন, কাস্টমস্ এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগীয় কার্যালয় প্রতিটি ব্যবসায়ীকে ডেকে ডেকে ৪.৩ উপকরণ উৎপাদনসহ ৪০ শতাংশ অতিরিক্ত দিয়ে ৪.৩ জমা দিতে বাধ্য করছেন। উনারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নবাবপুরের ব্যবসায়ীর ক্রয়মূল্যের সঙ্গে ১০ শতাংশ যোগ করে পণ্যের বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করে থাকেন কিন্তু ১০ শতাংশ লাভ করা আমাদের মতো পাইকারি ব্যবসায়ী ক্ষেত্রে অসম্ভব।
এই বিষয়টিও বিবেচনা করে ভ্যাট নির্ধারণ করতে হবে। ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি করার পর সরবরাহের ক্ষেত্রে বিক্রিমূল্যে ভ্যাট প্রদান করার কথা, কিন্তু সর্ব ক্ষেত্রে পণ্য আমদানির পর বিক্রি হোক বা না হোক কাস্টমস্ এক্সাইজ ও ভ্যাট কর্তৃপক্ষের চাপে বিল অব এন্ট্রির সমুদয় পণ্যের ওপর ভ্যাট দিতে বাধ্য করে। আবার পরিবর্তীতে অবশিষ্টি (অবিক্রীত) পণ্যে সরবরাহের ক্ষেত্রে মূসক ৬.৩ না দিতে পারলে ব্যবসায়ীরা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
দেশের উদীয়মান শিল্প কারখানাকে ধ্বংস করতে অতিরিক্ত কর আরোপ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে বলে আমাদের ধারণা। ব্যাংক ঋণের সুদের হার পূর্বের ন্যায় সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসা, বৈদেশিক মুদ্রার জোগান স্বাভাবিক এবং মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার এবং বন্দরসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছি।
আমাদের উল্লেখিত যৌক্তিক দাবিসমুহ সদয় সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করে তা বাস্তবায়নের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ জন্য আপনার সহযোগিতা কামনা করা হচ্ছে। মোল্লা মেশিনারিজ অ্যান্ড মোল্লা মটরসের স্বত্বাধিকারী, মোল্লা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও চুয়াডাঙ্গা জেলার এ পর্যন্ত বহু বারের সর্বোচ্চ কর ও ভ্যাট দাতা হিসেবে তিনি আরও জানান, ব্যবসায়ীরা সব সময় সরকারকে ভ্যাট ও ট্যাক্স দিয়ে সহযোগিতা করছে এবং ভবিষ্যতেও করবেন। তবে চাপিয়ে দেওয়ার ফল কখনো ভালো হয় না।
এ জন্যই বলছি আলাপ-আলোচনার উদ্যোগ নিন, ব্যবসায়ীদের কথা শুনুন। তিনি জানান, বর্ধিত ভ্যাট কমানো না হলে, তাতে অর্থনীতিতে কি ধরনের সংকট তৈরি করছে সে বিষয়টি ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বিশদভাবে তুলে ধরা, মানববন্ধন, এমনকি এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে আরও বৈঠক করা হয়।
বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল মেশিনারি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (বামমা) ও বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল মটরপাম্প ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের এই শীর্ষ নেতা আরও জানান, অনলাইন ও অটোমেশনের এই যুগে ভ্যাট ও কর না দিয়ে আসলে ব্যবসা করার সুযোগ নেই। ব্যবসায়ীরা সব সময় যৌক্তিক ভ্যাট ও ট্যাক্স আরোপের পক্ষে। শুল্ক-কর দিয়েই তারা ব্যবসা করছেন এবং দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন।
এনবিআরের সঙ্গে বৈঠকে মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতি, নবাবপুর দোকান মালিক সমিতি, বাংলাদেশ ফল ব্যবসায়ী সমিতি, বাংলাদেশ পেপার ইম্পোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ক্রোকারিজ মার্কেটস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইম্পোর্টারস অ্যান্ড মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি, বাংলাদেশ মোটর পার্টস অ্যান্ড টায়ার টিউব মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ ইলেকট্রিক ক্যাবল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ আয়রন অ্যান্ড স্টিল মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল মেশিনারি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, ও বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বিইএ’র প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করে। বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান জানান, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট কমানোর বিষয়ে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আশা করছি, ব্যবসায়ীরা খুশি হবেন।