
বাড়ছে সব ধরনের ভোজ্যতেলের দাম
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও শবেবরাত ও রমজান মাস সামনে রেখে দেশে বাড়ছে সব ধরনের ভোজ্যতেলের দাম। দাম কমায় এ বছর আমদানি হয়েছে বিপুল পরিমাণ ভোজ্যতেল। কিন্তু রমজান মাস সামনে রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। এতে করে এবার রোজার আগেই দাম বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ভোজ্যতেলের সরবরাহ পরিস্থিতি পর্যালোচনা বিষয়ক এক বৈঠকে জানানো হয়- বাজারে ভোজ্যতেলের কোনো ঘাটতি নেই। যেটি হয়েছে তা কৃত্রিম সংকট এবং প্রকৃত তথ্যের ঘাটতি থেকে তা সৃষ্ট। ওই বৈঠকে বিটিটিসির চেয়ারম্যান মইনুল খানের সভাপতিত্বে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুর রহিম খান ছিলেন আমন্ত্রিত অতিথি। এ ছাড়া দেশের শীর্ষ ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন।
কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ভোজ্যতেলের আমদানি প্রায় ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। ঋণপত্রও (এলসি) বেড়েছে একই হারে। শুধু তাই নয়, বিশ্ববাজারেও এখন পণ্যটির মূল্য স্থিতিশীল। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ভোজ্যতেলের উৎপাদন ও বিপণনের সব পর্যায়ে বাজার তদারকির দায়িত্বপ্রাাপ্ত সংস্থাগুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
কিন্তু ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। ভোজ্যতেল পরিশোধনকরী দেশীয় কারখানাগুলোর মালিকেরাও সরকারকে জানিয়েছেন, অন্যান্যবারের তুলনায় এ বছর আমদানি পরিস্থিতি ভালো। তারপরও বোতলজাত ভোজ্যতেলের সংকট চলছে। কিন্তু কেন তা হচ্ছে, সেটি তারা জানেন না। এদিকে পরিশোধন কারখানার মালিকেরা অন্য পণ্য কেনার শর্তে ভোজ্যতেল বিক্রি করছেন তাও সত্য।
পণ্য কেনার শর্তে ভোজ্যতেল বাজারজাত করছে-এ ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উৎপাদক বা কোনো পর্যায়ে এ ধরনের শর্তযুক্ত বিক্রি বা বাজারজাত করা প্রচলিত আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ধরনের কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে, ভোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক দিন ধরেই ভোজ্যতেল নিয়ে সমস্যা চলছে। কিন্তু বাজার তদারকিতে তা ধরা পড়ে না। পড়লেও সেটি চেপে যাওয়া হয়। ছদ্মবেশে বা ক্রেতা সেজে বাজারে ঢুকলেই এর প্রমাণ পাওয়া যাবে। যারা এটি করছে, তারা সরকারের বাজার তদারকি ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে অর্থাৎ আইনানুগ ব্যবস্থার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
এ ছাড়া নতুন একটি বিষয় উঠে আসে বৈঠকে, আর সেটি হচ্ছে ভোজ্যতেল পাচার বা এর অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য। প্রতিবেশী দেশে মূল্য বেশি হওয়ায় অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ব্যবসায়ীদের। বৈঠকে আরও বলা হয়েছে, নিজেদের পরিবেশকদের কাছে সরবরাহ করা ভোজ্যতেল ভোক্তারা সব সময় নির্ধারিত দামে কিনতে পারছেন কি না, তা ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোই তদারক করবে।
শবেবরাতের আগে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে মিলমালিক ও এই খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এছাড়া আর মাত্র ১৬ দিন পর থেকে থেকেই শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। ওই সময় সব ধরনের ভোজ্যতেলের বাড়তি চাহিদা তৈরি হবে। মূলত এই চাহিদাকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কায়দা কৌশলে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমিয়ে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এর ফলে ভোক্তাকে বেশি দাম দিয়ে তেল কিনতে হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মুদিপণ্যের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলছেন, চাহিদামতো সয়াবিন তেল তাদের দেওয়া হচ্ছে। যতটুকু তেল পাওয়া যাচ্ছে তার চেয়ে অন্যান্য পণ্যসামগ্রী কোম্পানির পরিবেশকদের কাছ থেকে বেশি করে কিনতে হচ্ছে। এরফলে তারা এখন আর্থিক সংকটের মধ্যে রয়েছেন। তেলের সঙ্গে মুড়ি, লবণ ও সাবানের মতো পণ্যসামগ্রী কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। এরফলে তাদের পুঁজি আটকে যাচ্ছে।
এদিকে, ঢাকাসহ দেশের কোথাও সরকার নির্ধারিত দামে ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে না। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহে বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। গত এক সপ্তাহের মধ্যে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলে দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
শুধু তাই নয়, খুচরা বাজারে চাহিদামতো বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে এক ও দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রে এই অবস্থা। খুচরা ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, তারা চাহিদামতো বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ পাচ্ছেন না। ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ভোক্তাদের।