ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১

চারকোল ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বৈষম্যবিরোধী পরিষদের অভিযোগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার।

প্রকাশিত: ১৯:৫৮, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ২০:১৬, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

চারকোল ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বৈষম্যবিরোধী পরিষদের অভিযোগ

দেশের সম্ভাব্যময় রপ্তানিপণ্য বাংলাদেশ চারকোল ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিসিসিএমইএ) আসন্ন নির্বাচন প্রক্রিয়া বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ বলে দাবি করছেন, বৈষম্যবিরোধী সমন্বিত চারকোল ব্যবসায়ী পরিষদ।

সংগঠনটির ২০২৫ সালের পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনের সভাপতিসহ বেশকিছু পদে একক প্রার্থী দিয়ে আওয়ামী লীগের ২০২৪ সালের মত ‘আমি, ডামি নির্বাচন করতে চাচ্ছে। 

জানা যায়, বিসিসিএমইএ’র ২০২৫ এর পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন অগামী ৮ মার্চ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচনের মাত্র একমাস সময় থাকলেও বৈষম্যবিরোধী পরিষদের প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চলছে নানা ধরনের চক্রান্ত ও কৌশল।

বৈষম্যবিরোধী ব্যবসায়ী পরিষদ অভিযোগ করেন, পাঁচটি সম্পাদকীয় পোস্ট ও কার্যনির্বাহী সদস্য পদে মোট ১১ জন প্রার্থী আবেদন করেন। একজনের লাইসেন্স নাবায়ন না থাকায় তার প্রার্থীতা অটোমেটিক বাতিল হয়ে যায়। বাকি ১০ জনের মধ্যে ৬ জনের প্রার্থীতাই বাতিল করে দেন সিন্ডেকেটের স্বজনপ্রীতি থাকা আপীল বোর্ড।

এরমধ্যে পাঁচটি সম্পাদকীয় পোস্টের চারজনের প্রার্থীতা বাতিল করেন এবং কার্যনির্বাহী সদস্য পদে দুই জনের প্রার্থীতা বাতিল করা হয়। যা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নূন্যতম অবকাশ দেখছেন না তার। 

রিপোর্টারের হাতে থাকা আপীল বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, বৈষম্যবিরোধী সমন্বিত চারকোল ব্যবসায়ী পরিষদের সভাপতি পদে জয় হোসাইন এর প্রার্থীতা বাতিল করা হয়। অন্যরা হলো- সহ-সভাপতি-২ হিরু মুন্সি, সহ-সভাপতি-৩ সায়হাম খান, অর্থ সচিব- সালাউদ্দিন মিয়া ও দুই কার্যনির্বাহী সদস্যসহ মোট ছয়জনের মূল মূল পদের প্রার্থীতা বাতিল করা হয়। 

বৈষম্যবিরোধী সমন্বিত চারকোল ব্যবসায়ী পরিষদের সহ-সভাপতি-১ প্রার্থী মাসউদুল ইসলাম বলেন, ‘বিনা ভোটে কমিটিতে থাকা যাদের অভ্যাস, তারা নির্বাচনকে ভয় পাবে এটাই স্বাভাবিক। দুর্ভাগা হলো, এখন আর আওয়ামী ফ্যাসিবাদ নেই যারা ২০১৮ রাতের ভোট ও ২০২৪ এর জানুয়ারীর মত ‘আমি, ডামি ভোটে জয়লাভ করবে। এখন বাংলাদেশ ২০২৪ এর আগস্ট পরবর্তি সময়। 

তিনি বলেন, ‘কেউ নেতা নির্বাচিত হতে চাচ্ছে অথচ নির্বাচন মাঠে একক প্রার্থী থাকতে চায় এটা ফ্যাসিবাদী আচরণ, আমাদের প্রার্থীদের কোন কারণ ছাড়াই প্রার্থীতা বাতিল করছে। অথচ আমাদের বিরোধী প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী আতিকুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জরিত ছিল। 

তিনি আরও বলেন, ‘নিশ্চিত হেরে যাবে এমনটা জেনে কৌশলে নির্বাচন কমিশনারের মাধ্যমে নির্লজ্জভাবে আমাদের সভাপতি প্রার্থীসহ মোট ৬জনের প্রার্থীতা বাতিল করেছে। এভাবে খালি মাঠে গোল দেয়ার সুযোগ নেই। নির্বাচন করতে হলে সকল প্রার্থীদের নিয়েই করতে হবে। আমরা আইনের সকল আশ্রয় নিবো।

নাটকীয় প্রক্রিয়ায় প্রার্থীতা বাতিল

বাংলাদেশ চারকোল ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিসিসিএমইএ) দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের ছোট ভাই জিল্লুর রহমান শিপনের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রীত ছিল। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অ্যাসোসিয়েশনের অনুপস্থিত থাকছেন মির্জা শিপন।

সভাপতির অনুপস্থিতে সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট জয় হোসাইন দায়িত্ব পালনের কথা। যদিও মির্জা শিপনের সিন্ডেকেট টিম গত ১৪ ডিসেম্বর বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) ডেকে তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের দিয়ে নির্বাচন বোর্ড ও আপীল বোর্ড গঠন করে দেন।


এরপর গত ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। নির্বাচনে বৈষম্যবিরোধী সমন্বিত চারকোল ব্যবসায়ী পরিষদের পক্ষ থেকে ১১ জন প্রার্থী হন। এরমধ্যে গত ২ ফেব্রুয়ারি আটজনের মনোনয়ন বৈধতা দিয়ে অপর তিনজনের মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করে।

তারই পেক্ষিতে তাদের পরিষদের তিন জনের মধ্যে একজন সেচ্ছায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। বাকি দুজনের মনোনয়ন বৈধ করতে আপত্তি দেন বৈষম্যবিরোদী পরিষদ গত ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫। একইদিন তারা জানতে পারেন বৈষম্য বিরোধী পরিষদের প্রতিপক্ষ তাদের বৈধ সদস্যদের মনোনয়নেও অপত্তি জানায়।

তাদের অপত্তির ভিত্তিতে আপিল করেন বৈষম্যবিরোধী সমন্বিত চারকোল ব্যবসায়ী পরিষদ। গত ৮ ফেব্রুয়ারি আপীল বোর্ড এই পরিষদের পাচটি সম্পাদকিয় পোস্টের মধ্যে চারজনেরই মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করেন। এছাড়া কার্যনির্বাহী সদস্যের দুজনের মনোনয়ন বাতিল করেন।


লঘু পাপে গুরু দণ্ড

ভুল, ত্রুটি, দোষের ক্ষেত্রে শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু, যে ক্ষেত্রে সামান্য ভুল ত্রুটির জন্য কঠোর শাস্তি দেয়া হয়, সেটাকে লঘু পাপে গুরু দন্ড বলা হয়। অর্থাৎ দোষের পরিমাণের তুলনায় শাস্তির বহর অনেক বেশ।

বৈষম্যবিরোধী সমন্বিত চারকোল ব্যবসায়ী পরিষদের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন জয় হোসাইন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি তার মনোনয়ন বৈধতা নিয়ে শুনানী হয় আপিল বোর্ডের। শুনানীতে তার মনোনয়ন বাতিলের যুক্তিকতা তুলে ধরা হয়, জয় হোসাইন আপিল শুনানিতে নিজে অনুপস্থিত থেকে প্রতিনিধি হিসেবে আইনজীবী পাঠান। আইনজীবি উপস্থিত থাকলেও তাকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য নিয়োগ সংক্রান্ত কোন দালিলিক প্রমাণ দাখিল করিতে পারেনি এমন তথ্য আপিল বোর্ডের।

একই অজুহাতে মনোনয়ন চুড়ান্ত বাতিল করা হয়, সহ-সভাপতি ২ প্রার্থী হিরু মুন্সির, সহ-সভাপতি-৩ সায়হাম খান ও অর্থ সচিব- সালাউদ্দিন মিয়ারা। এছাড়া দুই সদস্যেরও একই অজুহাতে মনোনয়ন বাতিল করা হয়। আপিল বোর্ডে ছিলেন- নির্বাচন আপিল বোর্ডের দুই সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন মিলন ও জাকির হোসেন। এছাড়া পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন-২৫ এর চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আব্দুল হক আব্বাসী।


যা বললেন মনোনয়ন বাতিল ব্যক্তিরা

বৈষম্যবিরোধী সমন্বিত চারকোল ব্যবসায়ী পরিষদের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন জয় হোসাইন বলেন, আমাদের পরিষদের দুইজন প্রার্থী মনোনয়ন বৈধতা নিয়ে জটিলাতা ছিল। আমাদের গত ৩০ জানুয়ারি ২০২৫ বৈধতা দেয় হয়। হঠাৎ ৮ ফেব্রুয়ারি শুনতেছি আমাদের প্রার্থীতা নাকি অবৈধ করা হয়। তিনি বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো-আমি নাকি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছি। আমাদের অভিযোগে দেখানো হয়েছে উত্তরা ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ক্রীয়া সম্পাদক। আমি সেখানকার কমিটির পুর্নাঙ্গ তালিকা এনে দেখিয়েছে সেই পদে আমি নই, অপর একজন।

‘ভোটার হালনাগাদে আমি যে ছবিটা দিয়েছে সেই ছবিটি শেখ হাসিনার সঙ্গে একটি ফ্যাস্টুনে এডিট করে বলা হয়েছে আমি শেখ হাসিনার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়েছি। অথচ ছবিটি দেখলেই বোঝা যায় ছবিটি এডিট। এছাড়া আপিল বোর্ড বলেছে গত ৮ ফেব্রুয়ারিতে আমি শুনানিতে উপস্থিত হয়নি। আমাকে যদি শুনানিতে উপস্থিত থাকতেই হয় আপিল বোর্ড থেকে জানানো উচিত ছিল। আপিল বোর্ড থেকে হোয়াটসঅ্যাপে, মোবাইলে কল করে জানানো হয়নি শুনানীতে উপস্থিত হওয়ার। এখন আপিল বোর্ড যে অভিযোগ তুলেছে তা অযৌক্তিক।

তারপরও আমার পক্ষে আইনজীবী উপস্থিত ছিল। এভাবে নির্বাচন হলে তা হবে অবৈধ নির্বাচন। আমরা উচ্চ আদালতের দারস্থ হবো। বৈষম্যবিরোধী সমন্বিত চারকোল ব্যবসায়ী পরিষদের অর্থ সচিব প্রার্থী সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের কখনো ভোট হয়নি। এবার আমরা চেয়েছিলাম সমলে মিলে উৎসবমূখর একটি নির্বাচন করতে। কিন্তু আমাদের অপরপক্ষ পরিষদ তারা একা মাঠে খেলতে চান। নির্বাচনকে তারা ভয় পান।

তিনি বলেন, আমার মনোনয় নাকি ফরমে কাটাকাটি হওয়ায় বাতিল করেছে। ফরমে কাটাকাটির জন্য কোন প্রার্থীর কি নির্বাচন থেকে দূরে রাখার সুযোগ রয়েছে?। এই নির্বাচন হলে তা হবে প্রহসনমূলক আমি-ডামি নির্বাচন।

বৈষম্যবিরোধী বিপরীত পরিষদের সভাপতি প্রার্থী আতিকুর নিয়ে প্রশ্ন

বৈষম্যবিরোধী সমন্বিত চারকোল ব্যবসায়ী পরিষদের পক্ষ থেকে দাবি করছেন তাদের বিপরীত পরিষদের সভাপতি প্রার্থী আতিকুর ছিলেন আওয়ামী লীগের খুবই ঘনিষ্ট ব্যক্তি। তার সঙ্গে সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানে ছবি রয়েছে এই প্রতিবেদকের হাতে।

একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের জয়েন সেক্রেটারী বাহাউদ্দিন নাসিমের সঙ্গেও পাশাপাশি দাড়ানো ছবিতে দেখা যায়। সাবেক পাট মন্ত্রী মির্জা আজম ও জাহাঙ্গির কবির নানকের সঙ্গেও একই অনুষ্ঠানে দেখা গেছে। এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের তার উপস্থিত থাকা ডেলিগেট কার্ড পাওয়া গেছে। যেখানে তার নাম ও ঠিকানা লেখা রয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী সমন্বিত চারকোল ব্যবসায়ী পরিষদের দাবি, আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতায় মনোনয়ন পত্র বাতিল হলে প্রথমেই বাতিল হওয়ার কথা আতিকুর রহমানের। বাংলাশের চারেকোল ব্যবসা। বাংলাদেশ থেকে চারকোলের প্রধান আমদানিকারক দেশ চীন। 

এছাড়া তাইওয়ান, ব্রাজিল, মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানিসহ ইউরোপের দেশগুলোতে রপ্তানির সম্ভাব্য বাজার রয়েছে। চারকোল মূলত কার্বন পেপার, কম্পিউটার ও ফটোকপিয়ারের কালি, আতশবাজি ও ফেসওয়াশের উপকরণ, মোবাইলের ব্যাটারি, প্রসাধন পণ্য, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ তৈরিতে প্রধান উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

রিফাত

×