ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১

বিএসআরএফের মতবিনিময় সভায় অর্থ উপদেষ্টা

পুলিশের ৩০০ গাড়ি পুড়িয়েছে, দিতে হবে ৫০০ কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২১:৩২, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ২১:৩৪, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

পুলিশের ৩০০ গাড়ি পুড়িয়েছে, দিতে হবে ৫০০ কোটি টাকা

ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ

অর্থবছরের মাঝপথে এসে ভ্যাট ও কর বাড়ানোর কারণ হিসেবে অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, পুলিশের ৩০০ গাড়ি পুড়িয়েছে, সেখানে দিতে হবে ৫০০ কোটি টাকা। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যারা গুরতর আহত তাদের ৩৫ লাখ টাকা করে কয়েকশ কোটি টাকা দিতে হয়েছে। এইগুলো আমি কোথা থেকে পাবো? ভ্যাট ও কর থেকে দ্রুত আয় করা যায়, সেটাই আমাকে করতে হয়েছে।

তিনি বলেন, খাদ্যপণ্য আমদানিসহ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অনেক ক্ষেত্রে আবার কর ও ভ্যাট ছাড় দিতে হয়েছে। সবমিলিয়ে ১২ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি। এই ঘাটতি পূরণেই ভ্যাট বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়েছে।

রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) অয়োজিত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিটেন্স এর ভূমিকা শীর্ষক মতবিনিময় সভায় অর্থ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

বিএসআরএফ সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক মতবিনিময় সভা সঞ্চালনা করেন। আর সভাপতিত্বে করেন সংগঠনের সভাপতি ফসিহ উদ্দীন মাহতাব। বাজেটের মাধ্যমে ভ্যাট না বাড়িয়ে বছরের শুরুতে ভ্যাট বাড়ানোর কারণ জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমাকে অনেক টাকা দিতে হয়েছে।

তিনি বলেন, আমার রিসোর্স গ্যাপ অনেক বেশি। এজন্য আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি এদের সহায়তা নিতে হয়েছে। আমাদের ঋণ শোধ করতে হয়, কোনদিন খেলাপি হয়নি। আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তারা আমাদের সাহায্য করছে।

তিনি আরও বলেন, চেষ্টা করছি, বলবো না যে আমরা খুব ভালো করছি। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা খারাপ নেই। আমরা মোটামুটি ভালো আছি। অবশ্যই আমরা একটা কল্যাণমুখী, সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র করার চেষ্টা করছি। তবে সেটা অনেক দূরে, সেটা রাজনৈতিক সরকার করবে। 

আর এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আইএমএফ ও বিশ্ব ব্যাংক থেকে অর্থ আনতে অর্থনীতির কতগুলো শর্ত মানতে হবে। আমরা কখনো শর্তে ফেইল করিনি। এই বিষয়ে তাদের সাথে অনেক আলোচনা হয়েছে। তারা বলেন ভ্যাট বাড়াও, ভ্যাট বাড়িয়ে নানা রকম বিপত্তি হয়েছে। এগুলো খুব সেনসিটিভ, এক দুই টাকা বাড়ানো মানে প্রবাসীদের জন্য না, আমাদের এখনে আমদানিকারক আছে, নানা রকম অবলিগেশন আছে। যতো কিছু আমদানি করছে সেগুলোর দাম বেড়ে যাবে।

তিনি বলেন, জনগণের এখতিয়ার মানে রাজনৈতিক সার্পোট, আমরা কিন্তু ক্ষমতায় আসিনি, আমাদেরকে দেয়া হয়েছে। আমরা যেটা করছি কিছু কিছু কারণ আছে, সব কিছু ভেবে চিন্তে করছি। এখানে সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা আছে, এখানে রাজনৈতিক ব্যাপার আছে। তাহলে কিভাবে আমরা রাজস্ব ব্যয় কমাবো। এক্ষেত্রে আমি পজেটিভ।

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের প্রবাসীরা ব্যবসা করতে চায় না। তবে ব্যবসা করা কঠিন। সব কিছুতো আমরা করে দেবো না। সরকারের আয়-ব্যয়ে ব্যলেন্স করতে হয়। সেটা সব সময় যুক্তি সঙ্গত হবে তা কিন্তু না। ট্যাক্সের ক্ষেত্রে আপনি দিবেন লাভবান আপনি হবেন। আমরা চাই একেবারেই সাধারণ মানুষ যাতে লাভবান হয়। এখন শিক্ষকদের অনেক ডিমান্ড আছে, সেটা আমরা বিচার বিশ্লেষণ করে দেখবো।

তিনি বলেন, প্রতিদিন যে তারা রাস্তা ঘাট আটকে রাখে এটা সত্য যে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পলিটিক্যাল সরকারের মতো শক্তিশালী না। এখন যদি মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়, তখন দোকানদাররা দোষ দেয়া শুরু করে। এটা সত্য আমরা অনেক চাপের মধ্যে আছি। ১০০ টা চাপের মধ্যে আমরা ১০ টা মানি। এ যেমন রেলওয়ের ডিমান্ড, ওভার টাইম দাও, দিলাম এরপর বলে লিমিট উঠিয়ে দাও, সেটাও উঠিয়ে দিলাম। কয়েক দিন পর বলবে চাকরি থাকবে না বেতন দাও? তখন আমি কি করবো। সেটা নিয়ে চিন্তায় আছি।

ভ্যাট বাড়ানোর পর চপ্পলের দাম বেড়েছে সেটা নিয়ে কিছু মেয়েরা প্রতিবাদ করেছেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ভ্যাটের একটা.... থাকে, সেখানে সস্তা চপ্পলে যদি ভ্যাট থাকে সেটা আমি রিভিউ করবো। যেমন ২০০ টাকা দামের উপরে বিস্কুটে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছেএইচএসকোড থাকে সেখানে অনেকগুলো পণ্য থাকে। সেখানে যদি চপ্পল থাকে তাহলে একটু সমস্যা।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমি যে এতো টাকা পয়সা আনছি, এডিবি ডিসেম্বর ৫০০ মিলিয়ন ডলার দিবে, জুনে বিশ্বব্যাংক ৫০০ মিলিয়ন দিবে এবং আইএমএফ মার্চে না হয় জুনে ২ বিলিয়ন ডলার দিবে। তাদের কতগুলো শর্ত আছে। যেমন ট্যাক্স, ভ্যাট বাড়ানোর। সেখানে আমি যৌক্তিকভাবে দেখলাম যে আয়কর বাড়ালে সংসদে যেতে হবে৷ আর যদি ভ্যাট ট্যাক্স বাড়াই তাহলে একটি এসআরও দিয়ে আমি করতে পারবো। এখানে কিন্তু বেশি টাকা না। মাত্র ১২ হাজার কোটি টাকা, এতে কিছু প্রভাব পড়েছে ঠিক।

তিনি বলেন, একটা জিনিস মনে রাখবেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কাজ সব সময় পপুলার ডিমান্ডে করা যায় না। এটা আপনারা লক্ষ্য করেছেন আমাকে এখন অনেক অর্থনীতিবিদ বলছেন সব ট্যাক্স কমিয়ে দেন, ভ্যাট কমিয়ে দেন। রাজস্ব বাড়ান।

তিনি আরও বলেন, মানুষের মধ্যে এখন আস্থা আছে। বিদেশ থেকে অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে না পাঠিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠায়। সবই ব্যাংকিং চ্যানেলে আসে বলবো না। হুন্ডির মাধ্যমে আসলে সব টাকা দেশে আসে না। কারণ ওটা বাহিরেই থেকে যায়। বহু মানুষ আছে ডলার রেখে দেয়। অথচ বৈধপথে রেমিটেন্স আসলে দেশ ও দেশের মানুষের উপকার হয়। আমাদের রিজার্ভ বাড়ে।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, কিছুদিন আগে আমাদের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট নেগেটিভ ছিল। ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট নেগেটিভ ছিল। আমাদের রপ্তানি গ্রোথও নেগেটিভ ছিল। এখন কারেন্ট অ্যাকাউন্ট, ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট পজেটিভ। মোটামুটি ম্যাক্রো ইকোনমিক স্টেবিলিটি আছে। একেবারে পুরোপুরি চলে আসছে সেটা বলবো না।

তিনি বলেন, পৃথিবীর কোন দেশে চার-পাচ লাখ টাকা দিয়ে বিদেশে যায়। নেপাল বলেন, ইন্দোনেশিয়া বলেন, ভারত বলেন এত টাকা দিয়ে কেউ বিদেশ যায়নি। এত বেশি টাকা লাগার মূল কারণ যারা এজেন্ট তারা বেশিরভাগ টাকা নিয়ে নেয়। ভাড়ার টাকা এত বেশি হওয়ার কথা না। বিদেশে যেখানে পাঠায় সেখানেও টাকার ভাগীদার আছে।

তিনি আরও বলেন, বেতন-ভাতা যা পায় তা কিন্তু আশানুরূপ না। এর মূল কারণ হলো বেশিরভাগ অদক্ষ। অপরদিকে শ্রীলঙ্কান, ভারতীয়, পাকিস্তানী বেশিরভাগ ম্যানেজার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার অথবা ডেস্কে বসে। তফাতটা হল তারা মোটামুটি লেখা পড়া শিখে আসছে। এজন্য এখন সময় এসেছে দেশ থেকে দক্ষ জনবল বিদেশে পাঠানোর।

শিহাব

×