![আমদানি নির্ভরতা কমাবে সরিষা আমদানি নির্ভরতা কমাবে সরিষা](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/2-2502081249.jpg)
রবিশস্যখ্যাত রঙিন ফসল সরিষা। এখন ভরা মৌসুম। গ্রামে গেলেই চোখে পড়বে সবুজ মাঠজুড়ে হৃদয়কাড়া হলুদের অপরূপ শোভা। সরিষা সবচেয়ে রঙিন ফসল। সরিষার রঙিন হলুদ ফুল প্রকৃতির সবুজ মাঠকে রাঙিয়ে দেয় হলুদের রঙে। শীত প্রধান বাংলাদেশে সরিষার ফলন হয় ব্যাপক। খেতের আলে আলে আঁকাবাঁকা পথ ধরে হলুদ-সবুজের অবারিত প্রান্ত শহরের নাগরিকদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। গ্রাম প্রেমিক মানুষেরা শীতকালে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গেলে সরিষা খেতে গিয়ে ছবি তোলেন। প্রকৃতির নির্মল বাতাসে ভেসে আসে সরিষা ফুলের মাতাল করা ঘ্রাণ। যা দুর্নিবার কাছে টানে মৌমাছি ও প্রজাপতিদের।
দেশে তেলবীজ হিসেবে সরিষা ব্যবহারের ইতিহাস অনেক প্রাচীন। এই ফসলটির বিশেষত্ব হলোÑ সরিষা খেতে হলুদ রঙিন ফুলে ছুটে আসে রঙিন প্রজাপতি। এরা যেন প্রকৃতির এই সৌন্দর্যকে আরও ঐশ্বর্যমণ্ডিত করে তোলে। সেই সঙ্গে এই মৌসুমে সরিষার জমিতে মৌমাছি চাষিরা সারি করে মৌ-বক্স রাখে জমির পাশে। তাদের উদ্দেশ্য মৌমাছির মাধ্যমে মধু আহরণ। সরিষা বীজ থেকে উৎপাদিত তেল রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায়। এ তেল চাটনিতেও ব্যবহৃত হয়। শিশুসহ সব বয়সী মানুষের শরীরে সরিষা তেল ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া এর কচি পাতা ও ডগা শাক হিসেবে অনেকেই খেয়ে থাকেন। আর সরিষাবাটা ইলিশ মাছের সঙ্গে রান্না দেশের কৃষ্টির অংশ। সরিষা আবাদে শস্য নিবিড়তার কারণে কৃষকরা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এ ছাড়াও সরিষার জমি থেকে মধু সংগ্রহের জন্য কৃষকরা উৎসাহিত হচ্ছে। এতে অতিরিক্ত ১৫ ভাগ ফলন পাওয়ার পাশাপাশি কৃষক বেশি লাভবান হয়।
সরিষা ছাড়াও সয়াবিন, সূর্যমুখী, তিল, বাদামসহ নানা ধরনের তেলবীজ হয় দেশে। ধানের কুঁড়ার তেল সম্ভাবনা জাগিয়েও ডানা মেলতে পারেনি সেভাবে। তবে সরিষা চাষের আওতা আর উৎপাদন দুটোই দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নতুন জাত লাভবান করছে চাষিরা। দেশে সরিষা উৎপাদন দুই বছরের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বেড়েছে সরিষা তেল উৎপাদনও। ফলে দাম কমে আসায় ভোজ্যতেল হিসেবে সরিষার ব্যবহার বাড়ছে প্রতিনিয়ত। সরিষার তেল উৎপাদন ও বিপণনে যুক্ত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানও। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
কয়েক বছর আগে দেশে সরিষা তেলের দাম সয়াবিনের প্রায় দ্বিগুণ ছিল। বর্তমানে খোলা সরিষা তেল ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম কাছাকাছি। ফলে ভোজ্যতেল হিসেবে সরিষার ব্যবহার আগের চেয়ে বেড়েছে। দেশে বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে সরিষা, তিল ও সূর্যমুখী থেকে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় মাত্র ৩ লাখ টন, যা চাহিদার শতকরা ১২ ভাগ। বাকি ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়। সে জন্য ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে ৩ বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ভোজ্যতেলের চাহিদার শতকরা ৪০ ভাগ স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করতে ৩ বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এর অংশ হিসেবে প্রথম ১ বছরে দেশে সরিষার আবাদ বেড়েছে ২ লাখ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন বেড়েছে ৩ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন। তেল হিসেবে বিবেচনা করলে ১ লাখ ২১ হাজার মেট্রিক টন তেল বেশি উৎপাদিত হয়েছে। আর প্রতি লিটার তেলের মূল্য ২৫০ টাকা করে হিসাব করলে ১ বছরে উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার।
সরিষা উৎপাদনে ১১তম বাংলাদেশ ॥ বিশ্ব সরিষা উৎপাদন ইনডেক্স অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান একাদশতম। ইনডেক্স মুন্ডির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বৈশ্বিক সরিষা বীজ উৎপাদনে শীর্ষস্থানে রয়েছে কানাডা। সম্মিলিতভাবে পরের অবস্থানটি দখল করে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ-২৭) দেশগুলো। তৃতীয় স্থানে রয়েছে চীন। এ ছাড়া চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে ভারত ও ইউক্রেন।