ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৬ মাঘ ১৪৩১

বিসিএসএ সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু

ন্যায্য ভাড়া না পাওয়ায় বেশ কিছু হিমাগার ঋণখেলাপীতে পরিণত হয়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৬:৩৮, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ১৭:০২, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ন্যায্য ভাড়া না পাওয়ায় বেশ কিছু হিমাগার ঋণখেলাপীতে পরিণত হয়েছে

ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ

ন্যায্য ভাড়া না পাওয়ায় সময়মত ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে এবং অন্যান্য পরিচালনা ব্যয় সংকুলান করতে না পেরে বেশ কিছু হিমাগার ঋনখেলাপীতে পরিণত হয়েছে জানিয়ে হিমাগার শিল্পকে কৃষিভিত্তিক শিল্প ঘোষণা করে সরকারকে বর্তমানে প্রচলিত দন্ডসুদ সহ ব্যাংক ঋণের সুদ এবং   বিদ্যুৎ বিল সহনীয় পর্যায় কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশনের (বিসিএসএ) সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।

আজ শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর পুরানা পল্টনে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশন (বিসিএসএ) কর্তৃক আয়োজিত হিমাগারে আলু সংরক্ষণ ভাড়া ও হিমাগার ব্যবস্থাপনার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানান তিনি।

বর্তমানে প্রচলিত দন্ডসুদ সহ ব্যাংক ঋণের সুদ শতকরা ১৭ ভাগ থেকে কমিয়ে শতকরা ৭ ভাগ,  বিদ্যুৎ বিলের ইউনিট প্রতি রেট পিক আওয়ারে ১৩.৬২ টাকা ও অফপিক আওয়ারে ৯.৬২ টাকার স্থলে ৫ টাকা করার আহ্বান জানিয়েছেন  মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের কিছু স্থানে কিছু সুবিধাভোগী মানুষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে বাস্তবতার নিরীখে হিমাগার পরিচালনার আবশ্যকীয় ব্যয় বিবেচনায় না নিয়ে তাদের মনগড়া বক্তব্য প্রদান করে সংশ্লিষ্ট সকলকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মন্তব্য করে মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, গত বছর আর্থিক বিশ্লেষণের আলোকে কেজি প্রতি ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭ টাকা করে। কিন্তু কিছু মধ্যস্বত্তভোগী ও সুবিধাভোগী মানুষ সত্য গোপন করে বলছেন গত বছর কেজি প্রতি ভাড়া ছিল ৪ টাকা। এ ধরণের বিভ্রান্তিকর তথ্য দেশের হিমাগার শিল্পের সুষ্ঠু পরিচালনায় সমস্যা সৃষ্টি করবে। 

মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী হিমাগারে সর্বোচ্চ ৫০ কেজির বস্তা সংরক্ষণ করা হলেও ২০১৯ সাল থেকে ক্রমান্বয়ে প্রতিবছর ৫৫ কেজি হতে ২০২৪ সালে ৭০ থেকে ৭২ কেজি আলু বস্তায় ভরে সংরক্ষণ করা হয়েছে। গত বছর এসোসিয়েশন কর্তৃক সংরক্ষণ ভাড়া প্রতি কেজি ছিল ৭ টাকা। সে হিসেবে ৫০ কেজির বস্তার আলু ভাড়া ৩৫০ টাকা। কিন্তু আলু সংরক্ষণকারীরা ৭০ থেকে ৭২ কেজি ওজনের বস্তার ভাড়া ৩৫০ টাকা দিয়েই হিমাগার থেকে আলু বের করেছেন। ফলে হিমাগার মালিকগণ প্রতি বস্তায় ১৫ থেকে ২২ কেজি আলুর ভাড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে হিমাগারের আলু ধারণক্ষমতা প্রায় ২০-২৫ শতাংশ কমে গিয়েছে এবং গড়ে ১০,০০০ মে. টনের একটি হিমাগার প্রায় ১.৫ কোটি থেকে ২ কোটি টাকার মত আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ফলশ্রুতিতে দেশের চারশত হিমাগারের মধ্যে প্রায় তিনশত হিমাগার সময়মত ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে এবং অন্যান্য পরিচালনা ব্যয় সংকুলান করতে না পেরে রূগ্ন হিমাগারে পরিণত হয়েছে এবং বেশ কিছু হিমাগার ঋনখেলাপীতে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের কারণে বাজারে আলুর দাম বাড়বে না। গত বছর কৃষকের প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে খরচ হয়েছে ১৫-২০ টাকা। প্রতি কেজি কৃষকরা বিক্রি করেছেন ২৫-৩৭ টাকায়। আর মধ্যস্বত্বভোগীদের সবমিলিয়ে প্রতি কেজিতে ৪২ টাকা খরচ পড়লেও তারা প্রতি কেজি বিক্রি করেছেন ৬০-৭০ টাকায়।

হিমাগারের চলতি ভাড়া কমানো নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোনো সিদ্ধান্ত দিলে তাদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে জানতে চাইলে  তিনি বলেন, সেটা অবশ্যই যৌক্তিক হতে হবে। জোর করলে হবে না। সুদ হার কমিয়ে সরকার যদি ভোক্তাকে কমে দিতে চায় তাহলে তারা কিস্তির পরিমাণ কমিয়ে দিক। মার্চ-এপ্রিল-মে-জুনে আমাদের বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়। যদি আয়ই না হয় তাহলে আমরা কোথা থেকে এ ব্যয় নির্বাহ করবো? 

তিনি আরও বলেন, বিদ্যৎ বিল সরকার কমাতে পারবে কি না জানিনা। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক চাইলে কৃষিভিত্তিক ঋণের আওতায় পদক্ষেপ নিয়ে এ শিল্পের পাশে দাড়াতে পারে। এক বছরের (২০২৫) জন্য যদি তারা এটা করে দেয় তাহলে দৃশ্যমান উন্নতি ধরা দিবে। এছাড়া তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের মাধ্যমে কৃষি উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ রাখেন যেন তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর ৪০ শতাংশ বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে, যার পরিমাণ দাড়ায় ১ কোটি ২০ লক্ষ মেট্রিক টন। আর হিমাগারগুলোর ধারণক্ষমতা ৪৫ লক্ষ মেট্রিক টন। আর দেশে মোট আলুর চাহিদা ৯০ লক্ষ মের্টিক টন।

শিহাব

×