ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১

মিনিকেট চালের নামে কী খাচ্ছি আমরা?

প্রকাশিত: ০০:২৭, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

মিনিকেট চালের নামে কী খাচ্ছি আমরা?

ছবি: সংগৃহীত

বাজারে মিনিকেট নামে যে চাল পাওয়া যায়, সেটি আসলে কী? ‘মিনিকেট’ শব্দটি এসেছে ইংরেজি শব্দ ‘mini’ ও ‘kit’ থেকে। তবে এটি কোনো ধানের জাত নয়, বরং একটি কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের নাম। ভারতে এই প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের ২ কেজি ধানের বীজের ছোট প্যাকেট দেওয়া হতো। নতুন জাতের ধান জনপ্রিয় করতে এই পদ্ধতির ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

 

পরবর্তীতে, ভারত থেকে অবৈধভাবে কিছু ধানের জাত বাংলাদেশে আসে। তখন ধানের প্রকৃত নাম পরিবর্তন হয়ে ভারতীয় প্রকল্পের নাম অনুসারে ‘মিনিকেট’ চালের প্রচলন হয়। বর্তমানে বাজারে যে চাল মিনিকেট নামে বিক্রি হচ্ছে, তা কোনো নির্দিষ্ট জাতের ধান নয়। দেশীয় মোটা চালকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সরু ও চকচকে করে মিনিকেট নামে বাজারজাত করা হয়।

চাল প্রক্রিয়াজাতকরণের কয়েকটি ধাপ রয়েছে। প্রথমে ধানের খোসা (husk) ঘর্ষণের মাধ্যমে সরিয়ে ফেলা হয়, যা ধানের মোট ওজনের প্রায় ২০ শতাংশ। এরপর ব্রাউন চালকে সাদা ও সরু করতে ‘হোয়াইটেনার’ ও ‘পলিশার’ মেশিন ব্যবহার করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় চালের বাইরের পরত (bran) সম্পূর্ণরূপে অপসারিত হয়। এই অংশে থাকে পরিকর্প (pericarp), সিড কোট (seed coat), আলিউরোন স্তর (aleurone layer) এবং অঙ্কুর (germ)। এভাবে চালের ৮-১০ শতাংশ ওজন কমে যায় এবং তা সাদা ও চকচকে হয়ে ওঠে।

 

সাদা চাল দেখতে আকর্ষণীয়, বেশি দিন সংরক্ষণযোগ্য এবং রান্নার পর সুস্বাদু হয়। তবে এতে বেশ কিছু পুষ্টিগুণ হারিয়ে যায়। ব্রাউন চালের প্রধান উপাদান ফসফরাস ‘ফাইটিক অ্যাসিড’ আকারে থাকে, যা শরীরে দস্তা (জিংক) শোষণে বাধা দেয়। যদিও এই অ্যাসিড দূর করলে দস্তার শোষণ সহজ হয়, তবে একই সঙ্গে চালের পুষ্টিগুণও কমে যায়।

গবেষণা বলছে, সাদা চালের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) বেশি হওয়ায় এটি দ্রুত রক্তে শর্করা বৃদ্ধি করে, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। অন্যদিকে, ব্রাউন চালে প্রচুর আঁশ, খনিজ ও ভিটামিন থাকে, যা হার্টের সমস্যা, ক্যানসার, গলগণ্ড রোগ এবং অ্যাজমার ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

 

ব্রাউন চাল দৈনিক আঁশের চাহিদার প্রায় এক-সপ্তমাংশ পূরণ করতে পারে। এটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া, ব্রাউন চালে থাকা ম্যাংগানিজ শরীরের ৮৮ শতাংশ দৈনিক চাহিদা মেটাতে পারে।

যখন মোটা চালকে মিনিকেট রূপে বাজারজাত করা হয়, তখন আমরা কার্যত শুধু শর্করা গ্রহণ করি, পুষ্টিগুণ হারিয়ে ফেলি। উপরন্তু, মাড় ফেলে রান্না করলে অবশিষ্ট পুষ্টি আরও কমে যায়। তাই সচেতনভাবে খাবার নির্বাচন করা জরুরি। মিনিকেট নামে চকচকে সাদা চালের পেছনের সত্য জেনে, স্বাস্থ্যসম্মত ব্রাউন চাল গ্রহণ করা কি ভালো হবে না?

 

তাবিব

×