ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১

মিলগেট ও পাইকারি বাজারে বিশেষ তদারকি প্রয়োজন

চালের দাম সামান্য কমলেও ভোজ্যতেল নিয়ে সংকট

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৪১, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ২২:৪২, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

চালের দাম সামান্য কমলেও  ভোজ্যতেল নিয়ে সংকট

..

নিত্যপণ্যের বাজারে সব ধরনের ভোজ্যতেলের দাম আরেক দফা বাড়লেও সামান্য কমেছে চালের দাম। সরবরাহ বাড়ায় শীতকালীন সবজিতে স্বস্তি রয়েছে। অপরিবর্তিত রয়েছে ডাল, আটা, চিনি ও মসলাপাতির দাম। আগের দামে বিক্রি হচ্ছে মুরগি, মাছ-মাংস। স্থিতিশীল রয়েছে পেঁয়াজ ও আলুর দাম। শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার,  ফার্মগেট কাঁচাবাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, নিউ মার্কেট কাঁচা বাজার ও পলাশী কাঁচা বাজার থেকে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবির তথ্য মতে, দেশের প্রধান খাদ্যপণ্য চালের দাম সামান্য কমেছে। তবে চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম কমেছে খুবই সামান্য যা বাজারে তেমন প্রভাব পড়বে না। দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মিলগেট ও পাইকারি বাজারে বিশেষ তদারকি বাড়ানো প্রয়োজন।

কারণ, চালের দাম বাড়ার বিষয়টি ওই দুই জায়গা থেকেই নির্ধারণ করা হয়। ফার্মগেট বাজারের চাল ব্যবসায়ী নাসির হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, গত কয়েক মাসে মোটা থেকে শুরু চালে কমপক্ষে ৮-১০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে, সেই তুলনায় কেজিপ্রতি কমেছে মাত্র ১-২ টাকা। সরবরাহ না বাড়লে বরং ফের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওই বাজার থেকে চাল কিনছিলেন পূর্ব রাজা বাজারের বাসিন্দা কামরুল হাসান। তিনি বলেন, সরু মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল আগের মতোই বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়েছে। তবে মোটা চালের দাম সামান্য কমলেও বাজারে স্বস্তি ফিরে আসেনি। টিসিবির তথ্য মতে, বাজারে সরু নাজিরশাইল ও মিনিকেট চাল ৭০-৮৫, মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চাল ৫৮-৬৪ এবং মোটা জাতের স্বর্ণা ও চায়না ইরি ৫২-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ৬৫ টাকার নিচে কোনো চাল পাওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে, বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট আরও বেড়ে যাওয়ায় দাম বাড়ছে। বেশিরভাগ মুদিপণ্যের দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি পামঅয়েল ও রাইস ব্র্যান, সূর্যমুখী ও সরিষা তেলের দাম বেড়ে যাচ্ছে। শবেবরাতের আগে ভোজ্যতেলের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট গোষ্ঠী। এসব সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে বাজার থেকে পুরোপুরি উধাও হয়ে যেতে পারে ভোজ্যতেল। কারণ, রোজায় অতিরিক্ত তেলের প্রয়োজন হবে দেশে। টিসিবির তথ্য মতে, শুক্রবার সয়াবিন তেল প্রতিলিটার ১৮০-১৮২, সয়াবিন তেল পাঁচ লিটার ৮৫০-৮৫২, সয়াবিন তেল দ্ইু লিটার ৩৪৮-৩৫০, সয়াবিন তেল এক লিটার ১৭৫-১৭৬, পামঅয়েল প্রতিলিটার ১৫০-১৫৫, সুপার পামঅয়েল ১৫৮-১৬০, রাইস ব্র্যান তেল পাঁচ লিটার ১০৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি পাঁচ লিটারের ক্যান কিনতে ৮৯০-৯০০ টাকা পর্যন্ত ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ সরবরাহ না থাকায় এই দাম দিয়েও অনেকে তেল কিনতে পারছে না। 

বাজারে শীতের সবজি সরবরাহ ভালো থাকায় স্বস্তি রয়েছে ভোক্তাদের। বেশিরভাগ সবজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকার  মধ্যে। এছাড়া ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতিপিস ২০ থেকে ৩০ টাকা এবং লম্বা লাউ (শীতকালীন লাউ) প্রতিপিস ৫০ থেকে ৬০ টাকায়  কেনা যাচ্ছে। বাজারে মুরগির দাম এখনো চড়া। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৯০ থেকে ২১০ টাকা এবং সোনালি মুরগির কেজি মানভেদে ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ডিমের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। খুচরায় ফার্মের মুরগির ডিম প্রতিডজন ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহের মধ্যে বাজারে পেঁয়াজ ও আলুর দাম আরও কিছুটা কমেছে। বাজারে এখন নতুন দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।  পেঁয়াজের সরবরাহ বেশি থাকায় দামও কম। খুচরা পর্যায়ে এক কেজি পেঁয়াজ ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত সপ্তাহে এই দাম আরও ৫ টাকা বেশি ছিল। অন্যদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দামও কেজিতে ২-৫ টাকা কমেছে। গতকাল এক কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ১৮-২০ টাকায়। আগের সপ্তাহে এই দাম ছিল ২০-২৫ টাকা। তবে পাড়া-মহল্লার দোকানে আলু ও পেঁয়াজ আরও ৫ টাকা বেশি দামেও বিক্রি হতে দেখা গেছে। অন্যান্য মসলা পণ্যের মধ্যে এখন প্রতিকেজি রসুনের দাম ২২০-২৪০ টাকা, আমদানি করা আদা ২৩০-২৪০ টাকা ও দেশী আদা ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

×