ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১

সংশোধিত বাজেটে এখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর উদ্যোগ

অব্যয়িত অর্থ দিয়ে গ্যাস-বিদ্যুৎ খাতের বকেয়া পরিশোধ করা হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:১৫, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

অব্যয়িত অর্থ দিয়ে গ্যাস-বিদ্যুৎ খাতের বকেয়া পরিশোধ করা হবে

অব্যয়িত অর্থ দিয়ে গ্যাস-বিদ্যুৎ খাতের বকেয়া পরিশোধ

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) সরকারের ব্যয় কমে যাওয়ার অর্থ গ্যাস ও বিদ্যুৎখাতের বকেয়া পরিশোধে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। চলতি ২০২৫ অর্থবছরের মধ্যেই বকেয়ার পুরো অর্থ পরিশোধ করতে সংশোধিত বাজেটে এখাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে বলে অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস শেষে ব্যয় হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। ফলে অর্থবছর শেষে এডিপির বড় অংশই অব্যয়িত থাকবে বলে আশা করছে অর্থমন্ত্রণালয়। যা দিয়ে গ্যাস-বিদ্যুতের পুরো বকেয়া পরিশোধ করা সম্ভব হবে বলে ধারণা কর্মকর্তাদের।

এ প্রসঙ্গে অর্থবিভাগের একজন ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে চলতি অর্থবছরই গ্যাস-বিদ্যুতের পুরো বকেয়া পরিশোধ করা হবে। এজন্য সংশোধিত বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, এডিপিসহ চলতি অর্থবছরে বিভিন্নখাতে খরচ কম হচ্ছে। ফলে ওইসবখাতের অব্যয়িত অর্থ গ্যাস ও বিদ্যুতের বকেয়া ভর্তুকি পরিশোধে ব্যয় করা হবে। আশা করছি, আগামী অর্থবছর এখাতে আর কোনো বকেয়া থাকবে না।
বিদ্যুতখাতের বকেয়া পরিশোধ নিয়ে সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং নৌ উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। সেখানে মার্চ থেকে বিদ্যুতের বকেয়া বিল পরিশোধের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার ছাড়তে সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত তিন অর্থবছর ধরে বিদ্যুৎখাতের বিপুল পরিমাণ বকেয়া রয়েছে। সময় মতো সরকার থেকে বিল না পাওয়ায় দেশের বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি আটকে যাচ্ছে ব্যাংকের ঋণও। আবার ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের বিল না পাওয়ায় আদানি গ্রুপ বারবার বকেয়া বিলের জন্য চাপ দিচ্ছে।

আর বিদ্যুতের ভর্তুকি বকেয়া থাকায় পেট্রোবাংলা থেকে নেওয়া জ্বালানি তেলের মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো। এতে পেট্রোবাংলাও জ্বালানি সরবরাহে অনীহা দেখাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে গ্যাস ও বিদ্যুতের পুরো বকেয়া চলতি অর্থবছরই পরিশোধ করার পরিকল্পনা করছে অর্থমন্ত্রণালয়।
বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে বিদ্যুতের বকেয়া ভর্তুকির পরিমাণ প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা এবং গ্যাসের ভর্তুকি বাবদ পেট্রোবাংলার পাওনার পরিমাণ প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। আসছে গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুৎ খাতে গড়ে প্রতিমাসে ভর্তুকি যুক্ত হবে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুতের ভর্তুকি পরিশোধের জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

ইতোমধ্যে সেখান থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। সংশোধিত বাজেটে বিদ্যুতের বকেয়া পরিশোধ করতে আরও প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে বলে জানিয়েছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা। এর আগে, বিদ্যুতের বকেয়া পরিশোধে বন্ড ইস্যু করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। চলতি বছর প্রতি তিন মাস অন্তর দাম বাড়িয়ে বিদ্যুতের ভর্তুকি কমানোর পরিকল্পনা ছিল হাসিনা সরকারের।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে আইপিপিগুলোর বকেয়ার ৫ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে বন্ড ইস্যু করার উদ্যোগ নিয়েছিল। সরকার এসব বিশেষ বন্ডের সুদহার কম দেওয়ায় ব্যাংকগুলো উৎসাহী হচ্ছে না। আবার আইএমএফও বন্ড ইস্যু করে ভর্তুকি পরিশোধ না করতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে। ফলে বন্ড ইস্যু করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। চলতি শীত মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা দাঁড়িয়েছে ১১,০০০-১২,০০০ মেগাওয়াটে।

তবে গ্রীষ্মকালে এবং সেচের সময় এ চাহিদা ১৮,০০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চলমান ডলার এবং আর্থিক সংকটের কারণে কয়লা, ফার্নেস অয়েল এবং গ্যাস আমদানিতে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় গত বছর গ্রীষ্মে পায়রা ও রামপালসহ বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়েছে।

×