ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১ মাঘ ১৪৩১

বাণিজ্যিকভাবে লাভবান করার জন্য কাজ করতে হবে॥ পরিকল্পনা উপদেষ্টা

বাংলাদেশ বিমান একটি অথর্ব প্রতিষ্ঠান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:২২, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বাংলাদেশ বিমান একটি অথর্ব প্রতিষ্ঠান

বাংলাদেশ বিমান

বাংলাদেশ বিমান একটি অথর্ব প্রতিষ্ঠান বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, এটিকে কিভাবে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান এবং আধুনিকায়ন করা যায় সেটা নিয়ে কাজ করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে বিদেশ থেকে কোনো এক্সপার্টকে এনে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বানাতে হবে। 
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে টাস্কফোর্স কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। 
উপদেষ্টা বলেন, লোকসান কমাতে বিমানকে দুইভাগ করে একভাগ বিদেশী সংস্থাকে দিয়ে পরিচালনা করা হবে এবং অন্যভাগ বিমানের মাধ্যমে পরিচালনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ বিষয়ক টাস্কফোর্স কমিটির প্রতিবেদনে। সমান সুযোগ সুবিধা পাবে দুই সংস্থাই। এরপর দেখব কোন সংস্থা ভালো করেছে। 
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ বিমান পুনর্গঠন নিয়ে উত্থাপিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, একটি নতুন এয়ারলাইন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রতিযোগিতা তৈরি করতে হবে। নতুন এই এয়ারলাইনটির সম্ভাব্য নাম হতে পারে ‘বাংলাদেশ এয়ারওয়েজ’। এটির পরিচালনা করা হবে একটি স্বাধীন, বিশ্বমানের ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এটি বিমানের বিদ্যমান সম্পদের একটি অংশ ব্যবহার করবে এবং উভয় সংস্থা আলাদা বাজার ও রুট টার্গেট করবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেবার মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠানটি বাজার থেকে অপসারণের পরিকল্পনাও রয়েছে।
এ ছাড়া, ঢাকা শহরতলীতে একটি ‘গ্লোবাল এক্সিলেন্স সেন্টার’ স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত (এসটিইএম) বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার জন্য কাজ করবে। পাশাপাশি পরিবেশবিজ্ঞান, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি এবং জৈবপ্রযুক্তি বিষয়েও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করবে। ভারতের আইআইটি-সহ আন্তর্জাতিক মডেলের ওপর ভিত্তি করে এটি গবেষণা ও উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করবে।
সামাজিক ও আচরণগত পরিবর্তন নিয়ে গবেষণার জন্য ‘সেন্টার ফর সোশ্যাল অ্যান্ড বিহেভিয়ারাল চেঞ্জ কমিউনিকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’ (সিএসবিসিসি অ্যান্ড আর) প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি সমাজের বিভিন্ন স্তরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য গবেষণায় মনোযোগ দেবে। এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের গবেষণা, শিক্ষা এবং পরিবহন খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, আমরা একনেকে যেসব প্রকল্প পাস করি। এখন থেকে জ্বালানি সক্ষমতা বাড়াতে প্রতিটি সভাতেই প্রকল্প রাখা হচ্ছে। এতদিন বলা হতো বাপেক্সের সক্ষমতা নেই। আমরা এটার সক্ষমতা বাড়াব। প্রয়োজনে মালয়েশিয়ার মতো অন্য দেশের সংস্থার সহায়তা নেব, তবে আমদানিতে না গিয়ে বাপেক্সে সক্ষম করব।
পরিবারতন্ত্রকে প্রাধান্য দিয়ে ব্যাংক আইনকে দুর্বল করা হয়েছে ॥ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য ও সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংক খাতে সুশাসনের অভাব রয়েছে। সামগ্রিকভাবে দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণেই ব্যাংক খাতের এই অবস্থা। তাই ব্যাংক খাত পুনর্গঠনে আমরা ৪টি বড় আকারের সুপারিশ করেছি। এসব সুপারিশ হলো প্রাতিষ্ঠানিক, নিয়ন্ত্রণমূলক, আইনি এবং তথ্যউপাত্ত বিষয়ক। এই চারটি বিষয়কে মূল ধরে আমরা স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদি সুপারিশ দিয়েছি।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় পরিবারতন্ত্রকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে ব্যাংক কোম্পানি আইনকে বছরের পর বছর ক্রমান্বয়ে দুর্বল করা হয়েছে। এ জন্য ব্যাংকগুলোর নিজস্ব সুশাসনের জায়গাগুলো শক্তিশালী করতে হবে। পাশাপাশি ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের যেমন প্রশাসনিক এবং পরিচালনার ক্ষেত্রে নিয়োগের বিষয়টিকেও উন্নত করতে হবে।
মধ্যবর্তী পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যাংকের ইন্টারনাল অডিট এবং কমপ্লায়েন্স শক্তিশালী করা। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এর স্বায়ত্তশাসনকে ক্রমান্বয়ে দুর্বল করা হয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধানের চেয়ারে যারা বসেছিলেন তাদের ব্যক্তিগত দুর্বলতায় এমনটা হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

এসব কারণে অযৌক্তিকভাবেই ব্যাংকের নিবন্ধন এবং ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে বলে তিনি জানান। এছাড়া বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) শক্তিশালী করার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেন বিএফআইইউকে শক্তিশালী করা দরকার তা এখন আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। একইসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে ব্যাংকিং খাতের দ্বৈত শাসন উল্লেখ করে অবিলম্বে এটিকে বিলুপ্তির পরামর্শও দেন এই অর্থনীতিবিদ। 
ব্যাংক খাতের সংস্কারে তৃতীয় বিষয়টি হলো আইনী বিষয়ক। তিনি বলেন, দেউলিয়া আইনকে সংশোধন করতে হবে এবং দ্রুত বিচার করার জন্য যে সমস্ত মামলা অর্থঋণ আদালতে জমা হয়ে আছে সেগুলো নিষ্পত্তি করার জন্য একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। আবার আদালতের বাইরেও মীমাংসা করার বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। 
সর্বশেষ ব্যাংকের তথ্যউপাত্ত বিষয়ে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংকগুলো ঠিকমতো তথ্য দেয় না। যদিও এসব তথ্য তাদের দেওয়ার কথা এবং ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার কথা। কিন্তু দুর্বল ব্যাংকের ক্ষেত্রে আমরা বিচ্ছিন্ন তথ্যগুলো পাই না। তথ্য না থাকলে আমরা সার্বিক চিত্র জানতে পারি না। আমাদের ঋণ শ্রেণিবদ্ধ করার বিষয়টি উন্নত করতে হবে এবং ব্যাসেল-৩ এর অধীনে যে তথ্য, যেমন- মূলধন পর্যাপ্ততা ইত্যাদি এগুলো প্রকাশ করতে হবে।
সভায় অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ বিষয়ক টাস্কফোর্স কমিটির সভাপতি ড. কে এ এস মুর্শিদের নেতৃত্বে কমিটির অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা ড. আখতার মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান, ড. রুমানা হক, কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েট বিভাগের সাবেক প্রধান ড. আবদুর রাজ্জাক, যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুশফিক মোবারক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর অধ্যাপক ড. শামসুল হক, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) সাবেক সভাপতি নাসিম মনজুর, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস এর পরিচালক ড. মঞ্জুর আহমেদ এবং বিডি জবস এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফাহিম মাশরুর উপস্থিত ছিলেন।

×