চড়া ব্যাংক সুদ দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করা সম্ভব নয়
চড়া ব্যাংক সুদ দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা। জাপানে সুদের হার পয়েন্ট ৫ শতাংশ হলেও বাংলাদেশে এখন ব্যাংক সুদের হার প্রায় ১৮ শতাংশ। ব্যবসায়ীরা যা মুনাফা করেন তার পুরোটাই এখন ব্যাংক খাত গিলে খাচ্ছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সদ্য বিদায়ী পরিচালকরা।
তাঁদের মতে, বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়ে যেভাবে সুদের হার বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে-তাতে আর ব্যবসা-বাণিজ্য করা সম্ভব নয়। এমনকি বিনিয়োগও মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করে সুদহার কমিয়ে আনার ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছেন। এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আমির হোসেন নূরানী বলেন, সুদের হার নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ীদের এখনই সোচ্চার হতে হবে।
অন্যথায় যেভাবে সুদহার বাড়ানো হচ্ছে, তাতে কেউ ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারবে না। সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের এক অনুষ্ঠানে তিনি লিখিত বক্তব্যে জানান, জাপানি ব্যাংক ইন্টারেস্ট সর্বোচ্চ পয়েন্ট ৫ শতাংশ আর আমাদের এভারেজ প্রায় ৯ শতাংশ থেকে স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রায় ১৮%-এ পৌঁছে দিয়েছে। বিভিন্ন যুক্তির মাধ্যমে এগুলো বাড়ানো হয়েছে, যা ঠিক হয়নি।
যুক্তি যেটাই হোক উদ্দেশ্য ব্যাংকগুলোকে আরও মানি মেকিংয়ের সুযোগ করে দেওয়া, দেশ থেকে টাকা পাচারের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। এত চড়া সুদ দিয়ে বর্তমানে ব্যবসা করা অত্যন্ত দুরূহ। ব্যবসায়ীরা যা প্রফিট করে তার পুরোটাই ব্যাংক গিলে খাচ্ছে, তার প্রতিফলনে একদিকে দিন-দিন ব্যাংকে ঋণ খেলাপি হচ্ছে, অন্যদিকে ছোট ছোট উদ্যোক্তা নিঃস্ব হয়ে পথে বসছে এবং এসএমই সেক্টর শুধু নামমাত্র থাকছে।
এখন ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারছে না। আমাদের দেশে পরিসংখ্যান নেই প্রতিবছর এই চড়া সুদের জন্য কতগুলো কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাদের বাড়িঘর জায়গা-জমি আত্মীয়-স্বজনের জায়গা-জমি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান কারখানা বিক্রি করে সুদ আসলে চক্রবৃদ্ধিসহ টাকা নিয়ে ব্যবসায়ীদের নিঃস্ব করে ছাড়ছে। এ ছাড়া বর্তমানে অনেক ধরনের ব্যাংকের হিডেন বা গোপন চার্জ রয়েছে। এই হিডেন চার্জগুলো থাকাতে ব্যবসায়ীরা প্রকৃত হিসাব রাখতে পারছে না।
বিনা সুদে ব্যবসায়ীদের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ব্যবহার করছে, এটার কৌশল হলো আপনি ব্যাংকে এলসি করতে যাবেন আগে এলসি ইমার্জেন্সি ছিল জিরো থেকে ৫% কোথাও ১০%। আর এখন আর ফাইভ পার্সেন্ট টেন পার্সেন্ট করতে গেলে বলে ডলার নাই। এলসি করতে হলে ১০০% মার্জিন ডলারের সংকট থাকে না।
একজন আমদানিকারকের কখনো তিন থেকে চার মাস সময় লেগে যায়, এই চার মাস পর্যন্ত বিনা সুদে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনা সুদে ব্যাংকগুলো ব্যবহার করে থাকে। ফলে ব্যবসায়ীদের আমদানি ব্যয় অনেকগুণ বেড়ে যায় অর্থাৎ ১৮% ইন্টারেস্টে টাকা নিয়ে ব্যাংকগুলোকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনা সুদে জামানত হিসেবে রাখতে হচ্ছে। যদি ছোট ও মধ্য ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা দিতে হয়-তাহলে এই এলসি মার্জিন কমাতে হবে। এটা ফাইভ থেকে টেন পার্সেন্টে নিয়ে আসতে হবে, না হলে এ ১০০ পার্সেন্ট মার্জিন এর টাকা দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব নয়।
স্বৈরাচার সরকারের ব্যাংকার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ব্যাংকিং ব্যবস্থাটাকে নষ্ট করে গেছেন বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন। এ ছাড়া যেসব ব্যাংক ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে অবৈধভাবে বিদেশে টাকা পাচার করেছে, ভুয়া নামে ট্রেড লাইসেন্সবিহীন অস্তিত্ববিহীন ঠিকানা দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে সরিয়ে নিয়েছে তাদেরকে আজ পর্যন্ত বিচারের আওতায় আনা যায়নি।
শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পর্যন্ত দায়ের করা হয়নি বরং তাদেরকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।