ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০ মাঘ ১৪৩১

ক্রিপ্টোকারেন্সি: প্রযুক্তির বিপ্লব নাকি এক বড় ঠকবাজি?

প্রকাশিত: ১৯:১৬, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ক্রিপ্টোকারেন্সি: প্রযুক্তির বিপ্লব নাকি এক বড় ঠকবাজি?

ক্রিপ্টোকারেন্সি: প্রযুক্তির বিপ্লব

ক্রিপ্টোকারেন্সি এক ধরনের ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল মুদ্রা যা ব্লকচেইন প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে কাজ করে। ব্লকচেইন হল একটি বিকেন্দ্রীকৃত (decentralized) নেটওয়ার্ক যা লেনদেন এবং ট্রানজ্যাকশন গুলি নিরাপদে এবং স্বচ্ছভাবে পরিচালনা করে, যেখানে কোনো কেন্দ্রীয় অথরিটি (যেমন ব্যাংক বা সরকার) নেই। বিটকয়েন (Bitcoin) এবং ইথেরিয়াম (Ethereum) হল ক্রিপ্টোকারেন্সির দুটি প্রধান উদাহরণ।

এটি একটি প্রযুক্তিগত বিপ্লবের অংশ কারণ এটি সম্পূর্ণ নতুন ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করেছে যেখানে প্রথাগত ব্যাংকিং সিস্টেমের মধ্যস্থতা ছাড়াই লেনদেন করা যায়। প্রযুক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে, ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগকারীদের জন্য দ্রুত, সস্তা, এবং সীমাহীন অর্থ লেনদেনের সুযোগ তৈরি করেছে, যা বিগত কয়েক দশক ধরে অর্থনীতির ধরণে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

এটি কি এক বড় ঠকবাজি?

এদিকে, ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজারটি অত্যন্ত অস্থির (volatile), যেখানে এক দিনের মধ্যে মূল্য আকাশচুম্বী হয়ে যেতে পারে, আবার পরদিন ব্যাপকভাবে কমে যেতে পারে। ২০১৭ সালে বিটকয়েনের মূল্য $২০,০০০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল, কিন্তু ২০১৮ সালের শেষ দিকে তা $৪,০০০-এরও নিচে নেমে গিয়েছিল আবার ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি, বিটকয়েনের দাম ১১০,০০০ ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছিল। এই রকম অস্থিরতা ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং তার বাজারের উপর অনেক সন্দেহের জন্ম দিয়েছে।

ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রযুক্তির সুবিধা

স্বচ্ছতা এবং নিরাপত্তা: ব্লকচেইন প্রযুক্তি নিরাপদ এবং স্বচ্ছ লেনদেনের ব্যবস্থা প্রদান করে। একবার একটি ট্রানজ্যাকশন ব্লকচেইনে যুক্ত হলে তা পরিবর্তন করা অসম্ভব।

বিকেন্দ্রীকৃত নেটওয়ার্ক: ক্রিপ্টোকারেন্সি কোনো একক কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের অধীনে নয়, বরং বিভিন্ন কম্পিউটার বা নোড দ্বারা পরিচালিত হয়, যা এর নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতা বাড়ায়।

বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা: ক্রিপ্টোকারেন্সি বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে ব্যবহৃত হতে পারে, এবং এটি সীমান্ত ছাড়াই লেনদেন করা সম্ভব।

ক্রিপ্টোকারেন্সির ঝুঁকিপূর্ণ দিকসমূহ

অস্থিরতা: ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্য খুব দ্রুত বাড়ে এবং কমে যেতে পারে, যা একে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ হিসেবে দাঁড় করায়।

আইনি সমস্যা: অনেক দেশের সরকার ক্রিপ্টোকারেন্সি নিষিদ্ধ করেছে বা এর উপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে, যা এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

স্ক্যাম এবং প্রতারণা: ক্রিপ্টোকারেন্সির নাম ব্যবহার করে অনেক স্ক্যাম এবং প্রতারণামূলক প্রকল্প তৈরি হয়েছে, যার ফলে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি এখনও অবৈধ এবং সরকারি আইন অনুযায়ী এর ব্যবহার এবং লেনদেন নিষিদ্ধ। বাংলাদেশ ব্যাংক (BB) এর পক্ষ থেকে একাধিকবার বলা হয়েছে যে, ক্রিপ্টোকারেন্সি যেমন বিটকয়েন, ইথেরিয়াম এবং অন্যান্য ডিজিটাল মুদ্রা অবৈধ। ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন এবং ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জের বিষয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

রেজা

×