ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩১

টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন

দুর্নীতির কারণে আট মেগা প্রকল্পে ব্যয় বেড়েছে ৭৫২ কোটি ডলার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:০০, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

দুর্নীতির কারণে আট মেগা প্রকল্পে ব্যয় বেড়েছে ৭৫২ কোটি ডলার

বাংলাদেশে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ও সময় বৃদ্ধি

বাংলাদেশে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির আটটি কারণ খুঁজে পেয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত টাস্কফোর্স। সম্প্রতি পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হন্তান্তর করেন।

প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যয় ও সময় বাড়ানোর উদাহরণ হিসেবে পদ্মা সেতু এবং ঢাকা-মানিকগঞ্জ এক্সপ্রেসওয়ে (ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে) সহ আটটি মেগা প্রকল্পের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বাকি ছয়টি মেগা প্রকল্প হলো- পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, যমুনা রেল সেতু, কর্ণফুলী টানেল, এমআরটি লাইন-৬, বিআরটি ৩ এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, টাস্কফোর্সের তালিকাভুক্ত আটটি মেগা প্রকল্পের প্রাথমিক বাজেট ছিল ১১ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু দুর্নীতি ও অন্যান্য অনিয়মের কারণে তা বেড়ে ১৮ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। পরিকল্পনা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ত্রুটি এবং দুর্নীতি ও প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণে আটটি মেগা প্রকল্পের ব্যয় প্রাক্কলিত বাজেটের চেয়ে ৬৮ শতাংশ বা ৭ দশমিক ৫২ বিলিয়ন (৭৫২ কোটি) ডলার বেড়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের টাস্কফোর্সের এক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। 
প্রকল্পগুলো হলোÑ পদ্মা সেতু প্রকল্প, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প, যমুনা রেল সেতু প্রকল্প, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু টানেল, ঢাকা এমআরটি লাইন ৬, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প এবং বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লাইন-৩ প্রকল্প। এই প্রকল্পগুলোর প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার, যা পরে  বেড়ে ১৮ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

উল্লেখ্য, অর্থনীতি চাঙা করতে এবং টেকসই উন্নয়নের কৌশল নির্ধারণ করতে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সাবেক মহাপরিচালক কেএএস মুরশিদকে প্রধান করে এই টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। ১২ সদস্যের এই টাস্কফোর্স গত সপ্তাহে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়।

প্রতিবেদন অনুসারে, বেশিরভাগ প্রকল্প শীর্ষ পর্যায় থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে; যেখানে মন্ত্রী, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক দাতাদের ভূমিকা ছিল। এতে বলা হয়, পরে এটি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনার) সম্মতি নিয়ে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়। এছাড়া ঢাকা সিটি কর্পোরেশন একত্রিত করা,  মেট্রো সরকার গঠনের প্রস্তাব অর্থনৈতিক সংস্কার বিষয়ক টাস্কফোর্সের। 
প্রায় তিন দশক ধরে ঢাকার মেয়ররা নগরীর সেবার মান উন্নয়নে ইউটিলিটি পরিষেবাগুলোকে একত্রিত করে একটি মেট্রোপলিটন সরকার গঠনের দাবি জানিয়ে আসছেন। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ প্রথম এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এছাড়া ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন একত্রিত করার সুপারিশ করেছে অর্থনৈতিক সংস্কার বিষয়ক টাস্কফোর্স।

সব ধরনের আহ্বান এবং সমালোচনা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনার  নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ২০১১ সালে ঢাকা শহর দুই ভাগে বিভক্ত করে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা  দেওয়া টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিল্লির মতো ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে একত্রিত করে একটি  মেট্রোপলিটন সরকার গঠন করলে উপকার হবে।

×