ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১

ধনী এলাকা ঢাকার পল্টন, গরিব কামরাঙ্গীরচর

বরিশালের মানুষ সবচেয়ে দরিদ্র, মাদারীপুরে দারিদ্র্যের হার বেশি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৩৮, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫

বরিশালের মানুষ সবচেয়ে দরিদ্র, মাদারীপুরে দারিদ্র্যের হার বেশি

দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে

দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। দেশের ১৯ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। শহরে দারিদ্র্যের হার সাড়ে ১৬ শতাংশ হলেও গ্রামে সেটি ২০ শতাংশেরও বেশি। বিভাগের হিসাবে সবচেয়ে দরিদ্র বরিশালের মানুষ আর জেলা হিসেবে মাদারীপুরে দারিদ্র্যের হার বেশি।

রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি ধনী মানুষ পল্টনে আর দরিদ্র কামরাঙ্গীরচরে।
‘বাংলাদেশের দারিদ্র্য মানচিত্র ২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পোভার্টি অ্যান্ড লাইভলিহুড স্ট্যাটিসটিকস সেল এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
বৃহস্পতিবার নগরীর বিআইসিসি সম্মেলন কক্ষে প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ দরিদ্র মানুষের বসবাস বরিশাল বিভাগে। অন্যদিকে সবচেয়ে কম ১৫ দশমিক ২ শতাংশ চট্টগ্রাম বিভাগে। ঢাকায় দারিদ্র্যের হার ১ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ১৯ দশমিক  ৬ শতাংশ হলেও, এই সময়ে কমেছে রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগে দারিদ্র্যের হার। সবচেয়ে বেশি ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ দরিদ্র মানুষের বাস মাদারীপুরের ডাসার উপজেলায়।
যদিও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘খানা আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২’ অনুযায়ী দারিদ্র্যের হার ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। দেশে অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা চার কোটি ১৭ লাখ। এর মধ্যে ৬ দশমিক ৫ শতাংশের অবস্থা গুরুতর। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।

তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, দেশে অতি দারিদ্র্যের হার কমেছে। ২০২২ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপ অনুযায়ী, দেশে অতি দারিদ্র্যের হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০১৬ সালে এ হার ছিল ১২ দশমিক ৯ শতাংশ।
সবচেয়ে বেশি দরিদ্র বরিশাল বিভাগে ॥ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত দেশের দারিদ্র্য মানচিত্র ২০২২ থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। বিবিএস জানিয়েছে, এবার রংপুরকে পেছনে ফেলে বরিশাল সর্বোচ্চ দারিদ্র্যপীড়িত বিভাগ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।
২০১৬ সালে বরিশাল দারিদ্র্যের দিক থেকে ছিল পঞ্চম স্থানে। ওই বছর রংপুরের দারিদ্র্যের হার ছিল সর্বোচ্চ ৪৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। ছয় বছর পর ২০২২ সালের হিসাবে, রংপুরের দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্য হারে কমে দাঁড়িয়েছে ২৫ শতাংশ। বরিশালের দারিদ্র্যের হার ২৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ থেকে সামান্য বেড়ে ২৬ দশমিক ৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
জেলা পর্যায়ে দেশের সর্বোচ্চ দারিদ্র্যের হার মাদারীপুরে ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ, যা জাতীয় গড়ের প্রায় তিনগুণ। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, নোয়াখালীতে দারিদ্র্যের হার সর্বনি¤œ ৬ দশমিক ১ শতাংশ, যা জাতীয় গড়ের এক-তৃতীয়াংশ।
দেশের সবচেয়ে ‘ধনী’ এলাকা ঢাকার পল্টন ॥ দেশের সবচেয়ে ধনী এলাকা ঢাকার পল্টন। এ থানায় দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে কম। সেখানে মাত্র ১ শতাংশ জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। দারিদ্র্য মানচিত্রের পরিসংখ্যানে দেশব্যাপী অর্থনৈতিক বৈষম্য তুলে ধরা হয়েছে। দারিদ্র্য মানচিত্র অনুযায়ী, দেশের সবচেয়ে দরিদ্র জেলা মাদারীপুর। সবচেয়ে দরিদ্র উপজেলা মাদারীপুরের ডাসার।
এর মধ্যে মাদারীপুর জেলার দারিদ্র্যের হার ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ। আর ডাসার উপজেলার দারিদ্র্যের হার ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ।
বিবিএসের মানচিত্র অনুযায়ী, ঢাকা জেলার সামগ্রিক দারিদ্র্য হার ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ, আর জাতীয় দারিদ্র্য হার ১৯ দশমিক ২ শতাংশ। গ্রামীণ এলাকায় দারিদ্র্য হার ২০ দশমিক ৩ শতাংশ, যেখানে শহুরে দারিদ্র্য হার ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
বরিশাল বিভাগে দারিদ্র্য হার দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, যা ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ। বিভাগের মধ্যে দারিদ্র্য কম চট্টগ্রামে, মাত্র ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। জেলার মধ্যে ধনী নোয়াখালী, যেখানে দারিদ্র্যের হার মাত্র ৬ দশমিক ১ শতাংশ।
ঢাকায় সবচেয়ে বেশি গরিব কামরাঙ্গীরচর ॥ রাজধানী ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে সবচেয়ে বেশি গরিব মানুষ বসবাস করেন। এ এলাকায় ১৯.১ শতাংশ গরিব মানুষ থাকেন। অন্যদিকে রাজধানীর পল্টনে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে কম। এই এলাকার মাত্র ১ শতাংশ জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন।
জরিপে দেখা গেছে, ভাষানটেকে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ, মিরপুরে ১২ দশমিক ২ শতাংশ গরিব মানুষের বসবাস। এমনকি রাজধানীর ধনী এলাকা হিসেবে পরিচিত বনানীতে ১১ দশমিক ৩ শতাংশ গরিব মানুষ বসবাস করেন। এ ছাড়া দারুস সালামে ১১, যাত্রাবাড়ীতে ৯ দশমিক ৪, আদাবরে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ গরিব মানুষ বাস করেন।
তবে নিউমার্কেটে ১ দশমিক ৭, রমনাতে ৪ দশমিক ৪, মতিঝিলে ৩ দশমিক ৬, কোতোয়ালিতে ২ দশমিক ৯, গুলশানে ৩ দশমিক ২, গেন্ডারিয়ায় ২ দশমিক ৪, ধানমন্ডিতে মাত্র ১ দশমিক ৫ শতাংশ গরিব মানুষ বাস করে। ২০১৭ সালের ক্রয়ক্ষমতা সমতার ভিত্তিতে নির্ধারিত আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমা হলো দৈনিক আয় ২.১৫ ডলার। অর্থাৎ দৈনিক ২.১৫ ডলারের কম আয় করা মানুষ দরিদ্র বলে গণ্য হবেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা জেলার সামগ্রিক দারিদ্র্যের হার ১৯.৬ শতাংশ। আর সামগ্রিকভাবে দেশের দারিদ্র্যের হার ১৯.২ শতাংশ। প্রতিবেদনে দেশজুড়ে বিত্তশালী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিস্তর অর্থনৈতিক বৈষম্যের চিত্র উঠে এসেছে। দেশে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ে সামনে আসা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জগুলোকেও চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশের গ্রামাঞ্চলে দারিদ্র্যের হার ২০.৩ শতাংশ। শহরাঞ্চলে এই হার ১৬.৫ শতাংশ।

×