বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেশে আগামী জুন মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমার ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতি হবে। তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপগুলো কার্যকর হচ্ছে না বলে সমালোচনা শুনেছি। বাস্তবে কার্যকর হচ্ছে। উন্নত দেশগুলোতেও এসব পদক্ষেপ নেওয়ার পর সুফল পেতে ১০ থেকে ১২ মাস সময় লাগে। আশা করছি, আগামী জুনের মধ্যে বড় অগ্রগতি হবে।’
বুধবার প্রথম আলো আয়োজিত ‘ডিজিটাল লেনদেনের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা: প্রেক্ষিত ভ্যাট বৃদ্ধি’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর এসব কথা বলেন।
গভর্নর বলেন, কয়েক বছর আগে তাঁর নিজের গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) রিটার্ন দাখিলের সময় এর ব্যবস্থাপককে ডেকে ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে। তিনি বলেন, কর কর্মকর্তারা অবাধ ক্ষমতার অধিকারী। অবাধ ক্ষমতা দুর্নীতি বাড়িয়ে দেয়। গভর্নর মনে করেন, পণ্য আমদানি, উৎপাদন ও বিক্রি পর্যন্ত ১০ শতাংশের বেশি ভ্যাট থাকা হওয়া উচিত নয়, যা বর্তমানে ১৫ শতাংশ। ব্যাংকে আমানত রাখলে তিন হাজার টাকা করে কেন কেটে রাখা হবে- এমন প্রশ্ন তুলে এনবিআর চেয়ারম্যানের উদ্দেশ্যে গভর্নর বলেন, এমন বিধান ব্যাংকে আমানত রাখতে মানুষকে নিরুৎসাহিত করে।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশে বাংলা কিউআর কোড চালু হলেও এখনো জনপ্রিয়তা পায়নি। মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিং এর ব্যবহারকারী বাড়লে কর বাড়বে। এজন্য মোবাইল ফোনের দাম আরও সস্তা করার আহ্বান জানান, তাঁর প্রশ্ন, একই ধরনের সেবায় ভারত পারলে বাংলাদেশ কেন পারবে না? অনলাইনে কর ও শুল্ক দেওয়ার ব্যবস্থা চালুর পরামর্শ দিয়ে গভর্নর বলেন, এটা না করা গেলে রাজস্ব ব্যবস্থায় দুর্নীতি কমানো সম্ভব হবে না।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে রাজস্ব খুব বাড়বে না- এমন মন্তব্য করে গভর্নর বলেন, এই খাতের সংস্কার দরকার। এ সংস্কার করতে তিন থেকে চার বছর সময় লাগবে। বর্তমান সরকার সংস্কারের কাজটা শেষ করতে পারবে না, তবে শুরু করে দিয়ে যেতে পারবে। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
তিনি বলেন, করদাতারা আমাদের ডিম পারা মুরগি। একবারে ধরে সব ডিম বের করে নিতে গেলে ওই মুরগি মরে যাবে। কর কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, ‘আইনকানুন মেনে যারা নিয়মিত কর দেন, করের জন্য তাদের পেইন (ব্যথা) দাও, কিন্তু কিল (মেরে) ফেল না।’ আবদুর রহমান খান আরও বলেন, ব্যবসা মরে যাচ্ছে, কিন্তু ব্যবসায়ী মরে যাচ্ছে না।