যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউতে তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়ছে
যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউতে তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়ছে। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া তৈরি পোশাকের ৬৯ শতাংশেরই গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো। বিদায়ী ২০২৪ সালের শেষ দিকে এসে বাজার দুটিতে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। তাতে দেশের তৈরি পোশাক খাত অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
ইইউর পরিসংখ্যান কার্যালয় (ইউরোস্ট্যাট) ও ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) তথ্যানুযায়ী, গত নভেম্বরে বাংলাদেশ থেকে ইইউতে ১৫৩ কোটি মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা ২০২৩ সালের একই মাসের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে গত নভেম্বরে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ৬১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ৪১ শতাংশ বেশি। ডিসেম্বর মাসের তথ্য এখনো সংস্থা দুটি প্রকাশ করেনি।
পোশাকশিল্পের একাধিক রপ্তানিকারক বলেন, ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রে নিত্যপণ্যের বাইরে অন্যান্য পণ্যের চাহিদা কমে যায়। পরে সরকারিভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ায় ধীরে ধীরে মূল্যস্ফীতি কমে এবং অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ায়। ফলে বাংলাদেশে বড় বাজার দুটি থেকে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ বৃদ্ধি পায়।
অধিকাংশ কারখানায় বর্তমানে ভালো ক্রয়াদেশ রয়েছে বলে জানান উদ্যোক্তারা। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, দেশ থেকে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস জুলাই-ডিসেম্বরে ১ হাজার ৯৮৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৩ দশমিক ২৮ শতাংশ বেশি।
ইইউতে টানা চার মাস প্রবৃদ্ধি ॥ বিশ্বে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। ইইউর বাজারেও একই চিত্র। গত বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৮ হাজার ৫৩৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে ইইউ। তার মধ্যে চীন থেকে আমদানি হয় সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪০৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮১৫ কোটি ডলারের পোশাক যায় বাংলাদেশ থেকে।
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ইউরোস্ট্যাটের তথ্যানুযায়ী, ইইউতে গত বছরের শুরুতে টানা তিন মাস বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছিল যথাক্রমে ৩৪, ১৮ ও ৮ শতাংশ করে। তারপর দুই মাস রপ্তানি বাড়লেও আবার দুই মাস কমে। তবে জুলাই থেকে টানা চার মাস প্রবৃদ্ধি হয়। আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত যথাক্রমে ১৬২, ১৫৩, ১৭৫ ও ১৫৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। সব মিলিয়ে ১১ মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশের নিচে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ঘিরে নতুন সম্ভাবনা ॥ একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বৃহত্তম বাজার যুক্তরাষ্ট্রে গত বছরের শুরু থেকে রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে কমে ছিল। তবে বছরের শেষ দিকে তা বৃদ্ধি পায়। যদিও সার্বিকভাবে এই বাজারে গত বছরের ১১ মাসে ৬৭৬ কোটি ডলারে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি ২০২৩ সালের একই সময়ের চেয়ে দশমিক ৪৬ শতাংশ কম। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি গত সেপ্টেম্বরে ১৮ শতাংশ, অক্টোবরে ২৬ দশমিক ৭ শতাংশ ও নভেম্বরে ৪১ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে।
রপ্তানি কারকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রয়াদেশ বেড়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাজারটিতে তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এদিকে দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যে নতুন করে শুল্ক বসানোর কথা বলেছেন। সেটি হলে দেশটির অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান চীন থেকে ক্রয়াদেশ সরাবে। তাতে বাংলাদেশের কারখানাগুলো ভালো ক্রয়াদেশ পেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শোভন ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে চীন থেকে ক্রয়াদেশ সরতে শুরু করেছে। তার একটি বড় অংশ বাংলাদেশ পাচ্ছে। ভারত আর ভিয়েতনামেও কিছু ক্রয়াদেশ গেছে। তবে নতুন করে তাদের ক্রয়াদেশ নেওয়ার সক্ষমতা নেই। কারণ, তাদের কারখানার সক্ষমতা আগেই পূর্ণ হয়েছে।