ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ মাঘ ১৪৩১

বেপজার সংবাদ সম্মেলন

বিনিয়োগ কমলেও বেড়েছে রপ্তানি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:১০, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫

বিনিয়োগ কমলেও বেড়েছে রপ্তানি

..

গত ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগ কমেছে ২২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। তবে এই সময়ে এইসব অঞ্চলের উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি ২২ দশমিক ৪১ শতাংশ বেড়েছে। সোমবার বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটা জানায় সংস্থাটির নির্বাহী চেয়ারম্যান বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান। বেপজার জনসংযোগ বিভাগের নির্বাহী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আবু সাঈদ মো. আনোয়ার পারভেজের সঞ্চালনায় এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. আশরাফুল কবীর, সদস্য (প্রকৌশল) মো. ইমতিয়াজ হোসেন, সদস্য (অর্থ) আ ন ম ফয়জুল হক প্রমুখ।
নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, ব্যবসায়ীরা দাবি করেন যে পটপরিবর্তনের পর ৬ মাসে বাংলাদেশে বৈদেশিক সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই) কমেছে ৭১ শতাংশ। তবে এটি ইপিজেডের বাইরে। বৈশ্বিক ও দেশের অভ্যন্তরীণ নানা কারণে ইপিজেডগুলোতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর অর্থাৎ ছয় মাসে এফডিআই কমেছে ২২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। কেবল পটপরিবর্তনই নয়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্যও বিনিয়োগ কমেছে। তবে বিনিয়োগ কমলেও এই সময়ে ইপিজেড থেকে রপ্তানি বেড়েছে ২২ দশমিক ৪১ শতাংশ যেখানে ইপিজেড বহির্ভূত রপ্তানি বেড়েছে ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ। 
তবে যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প সরকার ক্ষমতায় আসার ফলে চীনের রপ্তানি পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করায় দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়তে পারে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, বাড়তি শুল্ক আরোপের ফলে চীনের শিল্প-কারখানাগুলো বিভিন্ন দেশে স্থানান্তরিত হবে যেখানে বাংলাদেশ সবার ওপরে আছে। আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান বলেন, আমরা আশাবাদী ইপিজেডগুলোতে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়বে। এ বিষয়ে আমরা সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের থেকে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি।
সংস্থাটির তথ্যানুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ইপিজেডে বিনিয়োগ হয় ১৬২ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে ২০২৪-২৫ একই সময়ে বিনিয়োগের পরিমাণ ১২৬ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়া রপ্তানির ক্ষেত্রে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ইপিজেড থেকে রপ্তানি হয়েছিল ৩ হাজার ৩৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়ে ৪ হাজার ১২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
বেপজা’র সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. আশরাফুল কবির বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে গত অর্থবছরে দেশে মোট এফডিআই এসেছে এক হাজার ৪৬৮ দশমিক এক সাত মিলিয়ন মার্কিন ডলার যার মধ্যে শুধু বেপজাধীন জোনসমূহে বিনিয়োগ হয়েছে ৪২৪ দশমিক ২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের মোট প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগে (এফডিআই) ২৯ শতাংশ অবদান রেখেছে বেপজা। ২০২৪ সালে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বেপজার সঙ্গে ২৮টি নতুন বিনিয়োগ চুক্তি হয়েছে বলে জানান আশরাফুল কবীর। তিনি বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের মোট প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ৫৬ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) বেপজাধীন আটটি ইপিজেড এবং বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের চলমান প্রতিষ্ঠানে রপ্তানির পরিমাণ দেশের মোট রপ্তানির ১৬ শতাংশ। এই অর্থবছরে দেশের মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮৮ দশমিক ৮৪  বিলিয়ন মার্কিন ডলার যার মধ্যে বেপজার মাধ্যমে রপ্তানি হয় ৭ দশমিক ০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সংস্থাটির আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে দেশের মোট রপ্তানির ১৫-২০ শতাংশ করে থাকে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এ পর্যন্ত বেপজার ইপিজেডগুলোতে ৩৮টি দেশ থেকে বিনিয়োগ এসেছে। সবচেয়ে বেশি এসেছে চীন থেকে। চীনের মোট ১০৮টি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ রয়েছে ইপিজেডে। এরপর বিনিয়োগ করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার ৬১টি, জাপানের ২৯টি, ভারতের ১৯টি, যুক্তরাজ্যের ১৯টি, যুক্তরাষ্ট্রের ১৭টি ও শ্রীলঙ্কার ৭টি প্রতিষ্ঠান। বাকিগুলো অন্যান্য দেশের।
বর্তমানে দেশে বেপজার অধীনে মোট আটটি ইপিজেড ও একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে। এগুলো হচ্ছে চট্টগ্রাম, ঢাকা, মোংলা, কুমিল্লা, উত্তরা, ঈশ্বরদী, কর্ণফুলী ও আদমজী ইপিজেড এবং চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে অবস্থিত বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে মোট ৪৪৯ শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। এর মধ্যে শতভাগ বিদেশী মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ২৫৮টি, যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ৪৯টি ও শতভাগ দেশীয় প্রতিষ্ঠান ১৪২টি। এ ছাড়া আরও ১০৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণাধীন রয়েছে। এ বাইরে পটুয়াখালী ও যশোরে দুটি ইপিজেড স্থাপনের কাজ চলছে। আর গাইবান্ধায় একটি ইপিজেড স্থাপনের জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইপিজেডসমূহে উৎপাদিত উল্লেখযোগ্য পণ্য সমূহের মধ্যে রয়েছে- তাঁবু ও তাঁবুর সরঞ্জাম, যাই - সাইকেল, কসমেটিক্স, হলিউড মাস্ক, ক্যাম্পিং ফার্নিচার, গন্ধ শ্যাফট, উইগ ও ফ্যাশন চুলসহ আরও বিভিন্ন ধরনের পণ্য।

×