ছবি: জনকণ্ঠ
আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে শুল্ক সুবিধা বহাল রাখতে এলডিসি গ্রাজুয়েশন কমপক্ষে তিন বছর পিছিয়ে দেওয়ার দাবি করেছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রি (বিসিআই)।
সংগঠনটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) বলেন, আমরা (ব্যবসায়ীরা) মনে করি যদি গ্রাজুয়েশন পেছানো না যায় তবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট ধ্বস নামবে। এতে অর্থনীতির লাইফ লাইন গার্মেন্ট ও টেক্সটাইল খাত সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। শনিবার দেশের চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রি (বিসিআই)।
এতে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ)। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিসিআইয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মিসেস প্রীতি চক্রবর্তী, সংগঠনটির পরিচালক শহীদুল ইসলাম নিরু, দেলোয়ার হোসেন রাজা, এসএম শাহ আলম মুকুল, জিয়া হায়দার মিঠু, জাহাঙ্গীর আলম, মিসেস রেহেনা রহমান, শাহ আলম লিটু, নাজমুল আনোয়ার, মোহাম্মদ খায়ের মিয়া প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) আরও বলেন, গার্মেন্টস খাতে দেশের ৪০ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং অর্থনীতিতে এ খাতের অবদান ৮৫ ভাগ। কিন্তু এলডিসি গ্রাজুয়েশন হলে এ খাত চাপের মুখে পড়বে। কারণ যেখানে এফটিএ বা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির কারণে শুধু ইউরোপীয় ইউনিয়েনে ভিয়েতনাম ২০২৭ সালে জিরো ট্যারিফ সুবিধা পাবে, অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে পোশাক নিতে ইউরোপের আমদানি কারকদের ১২ শতাংশ ডিউটি দিতে হবে ২০২৯ সাল থেকে। অন্যান্য দেশের কথা বাদই দিলাম, আমরা দৃঢ় ভাবে মনে করি এলডিসি উত্তরণ কমপক্ষে ৩ বছর পেছানো উচিত।
তিনি বলেন, স্থানীয় উৎপাদনকারীরা খুব চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছেন। উচ্চ মূল্যস্ফীতি থাকলে এমনিতেই চাহিদা কমে যায়, তার উপর বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ নেই। দাম বেড়েছে। আরেকদিকে উচ্চহারের ব্যাংক সুদ, এলসিতে সমস্যা, ডলার সঙ্কট, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কনট্রাশন পলিসি, গত পাঁচ মাসে এডিপি মাত্র ১২ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। ইতোমধ্যে শতাধিক পণ্যের শুল্ক-কর বাড়ানো হয়েছে। উৎপাদন কমে গেছে ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত। এতে করে বেসরকারি খাতে প্রবৃদ্ধি কমছেই। তাহলে কিভাবে অর্থনীতি ভালো থাকবে। যদিও এই সময় রিজার্ভ, রেমিট্যান্স ও ব্যালেন্স অব ট্রেড ভালো অবস্থায় রয়েছে।
তিনি বলেন, আপনাদের অনেকে এনবিআর নিয়ে কমপ্লেন করেন আবার হঠাৎ ভ্যাট বাড়িয়ে দেওয়া, আইনশৃঙ্খলা উন্নতি না হওয়া নিয়েও প্রশ্ন, আর বাংলাদেশ ব্যাংকের কথাগুলো বলার অপেক্ষায় রাখেনা! সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ীদের খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল। আবার ব্যাংকলুট, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বেকারত্ব বাড়া, গত সরকারের উদাসীনতার কারণে সমস্ত প্রতিষ্ঠান ধ্বস হয়ে গেছে। যার ফলশ্রুতিতে পরবর্তিতে ৫ আগস্টের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার বিপ্লব নতুন আশা জাগ্রত করেছিল আমাদের মধ্যে। শিল্প উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীরা এর বাইরে নয়। আমরা ভেবেছিলাম সব ধরনের সংস্কার এর মাঝে ব্যবসায়ী সংগঠন সংস্কার যেমন হওয়া দরকার তা অবশ্যই হবে, কিন্তু অর্থনীতির চাকা ক্ষতিগ্রস্ত না করার উপায় বের করে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। যাতে কর্মসংস্থান ধরে রাখা যায়, উৎপাদন খরচ সহনীয় পর্যায়ে থাকে, মুদ্রাস্ফীতি কমানো সাহায্য করে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে সরকার এবং রাজনীতিবিদরা অর্থনৈতিক চ্যাপ্টারটার গুরুত্ব দিতে ভুলে গেছে। শুধু অন্যান্য ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত । অর্থনৈতিক চাকা না ঘুরতে থাকলে ভবিষ্যতে যারাই সরকার গঠন করবেন তারাই অর্থনৈতিকে সামাল দিতে পারবেন না, এটা মনে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, যেহেতু বর্তমান এফবিসিসিআই এপেক্স বডি হিসেবে কার্যক্রম চালাতে পারছে না, সেহেতু সব সেক্টরের উৎপাদনকারীরা এবং তাদের অ্যাসোসিয়েশন ও চেম্বারের নেতৃবৃন্দ বিসিআই-এর নেতৃত্বে একত্রে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে যাতে দেশের ইন্ডাস্ট্রিগুলো সক্ষমতার সাথে চালানো যায়। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের চাকা সচল রেখে এই অন্তর্বর্তী সরকারকে সফল হতে সাহায্য করা। আমরা মনে করি, ইন্ডাস্ট্রি পারে কর্মসংস্থান ধরে রাখতে ও নতুন করে সৃষ্টি করতে। কি ধরনের পলিসি সাপোর্ট দরকার এবং তা যদি সময় মতন ব্যবস্থা না নেওয়া যায় তা হলে ব্যবসা অন্যত্র চলে যাবে।
তিনি বলেন, আমাদরে দেশে গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেছে গত ১ বছরে ১০০ টা এবং আরো ২০০ টা এ বছর বন্ধের পথে।
এদিকে বর্তমান সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টিকফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে যাতে আমেরিকায় জিএসপি পাওয়া যায় তার জন্য শ্রম আইন বাস্তবায়নে আমেরিকার প্রেসক্রিপসনে কাজ করছে। অথচ আমেরিকা জিএসপি দিলেও সেখানে গার্মেন্ট এবং টেক্সটাইল কখনো শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাবে না। আবার গত সরকার বাহবা নেওয়ার জন্য উচ্চ প্রবৃদ্ধির অর্থনীতি দেখিয়ে গ্রাজুয়েশনের পথে হেঁটেছিল। আমরা মনে করি যদি এলডিসি উত্তরণ পেছানো না যায় তবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট ধ্বস নামবে।
তিনি বলেন, আগামী ২ থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে সরকারকে প্রস্তাবনা দেওয়া হবে, কিভাবে দেশের উৎপাদনমুখী শিল্পকে কে শুধু টেকসই করানো সম্ভব হয়। আর সেজন্য সরকারকে সেই অনুযায়ী সহযোগিতা করার আহবান জানাবো।
শিহাব