ব্যবসায়ীকে নিজের মুনাফা থেকেই ভ্যাট দিতে হচ্ছে
বলে মনে করছেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আমির হোসেন নূরানী। স্টিল ও আয়রন খাতের এই শিল্পোদ্যোক্তা মনে করেন, আসল সত্য হচ্ছে, কোন ভ্যাটই ভোক্তার কাছ থেকে আদায় করা হয় না। ফলে তারা (ব্যবসায়ীরা) তাদের মুনাফার অংশটাই মাস শেষে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা দিচ্ছে। এতে করে ব্যবসায়ীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রায়ই বলে থাকেন, ভ্যাট দেয় জনগণ ব্যবসায়ীরা শুধু তার কালেক্টর।
এ কথা সম্পূর্ণই অসত্য। কারণ আমাদের দেশে দুই এক আইটেম বাদে হাজার হাজার আইটেম বিক্রি হয় ইনক্লুসিভ ভ্যাটে। ফলে ব্যবসায়ীকে তার নিজের মুনাফা থেকেই ভ্যাট দিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ১৬ বছরে ব্যবস্থাটাকে বারবার সংস্করণ করতে গিয়ে প্রকৃত জায়গা থেকেই সরকার সরে গিয়েছে। ভ্যালু এডিশনের ১৫ শতাংশ ভ্যাট ভোক্তার কাছ থেকে আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা হবে কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে কোন ভ্যাটই ভোক্তার কাছ থেকে আদায় করা যায় না।
বিগত বছরগুলোতে জনগণের ভ্যাটের টাকা লুটপাট হয়েছে ও বিদেশে পাচার হয়েছে ও অপব্যয় হয়েছে। সরকারি টাকা অপচয়ের জবাবদিহিতা না থাকায় জনগণ ভ্যাট দিতে নিরুৎসাহিত হয়েছেন এবং যারা দিয়েছে তাদের পুরস্কৃত না করে বরং বারবার তাদেরই বেশি হয়রানি করা হয়েছে। আমির হোসেন নূরানী বলেন, আইটেমে ভ্যালু এডিশন ১০০ শতাংশ হচ্ছে তাকেও ধরা হচ্ছে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আবার অনেক আইটেমে ৫ শতাংশ ভ্যালু এডিশন হয়েছে তাদেরও ধরা হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে ইনক্লুসিভ ভ্যাটে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই। তাদের জন্য এক ব্যবস্থা অর্থাৎ অর্থাৎ সেক্টর ভিত্তিক আলোচনা করে ভ্যাট নির্ধারণ করলে ভ্যাট আদায় অনেক সহজ হবে। অধিক ভ্যাট আদায় করা সম্ভব হবে এবং সেটা বাস্তব আইন প্রয়োগ করলে এবং আইনগুলোও বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। কোন সেক্টরের সঙ্গে আলোচনা না করে ভ্যাট হার নির্ধারণ করলে ভ্যাট আদায় করা কঠিন হয়ে পড়বে।
শুধু তাই নয়, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ব্যবসাবান্ধব ভ্যাট ব্যবস্থা চালু এবং সহজে ভ্যাট আইন সহজ করতে হবে যাতে দেশের জনগণ সহজে ভ্যাট দিতে পারেন এবং ব্যবসায়ীরাও সহজ আইনের মাধ্যমে ভ্যাট জমা দিতে পারেন। তাহলেই শুধু ভ্যাটের ভ্যাটের পরিধি বাড়বে। তিনি বলেন, সবাই ভ্যাট দিতে অভ্যস্ত হয় এবং ব্যবসায়ীদের নিজের পকেট থেকে যাতে দিতে না হয়, সেদিকে নজর বাড়াতে হবে। দেশে ভ্যাট প্রদানের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।
এজন্য সরকারের ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে হবে। ভ্যাট নির্ধারণের ক্ষেত্রে চিন্তা করতে হবে যাতে সাধারণ গরিব জনগণের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব না পরে। এখনো ভ্যাট নিবন্ধন করতে ১০ থেকে ১১টা কাগজের প্রয়োজন হয়। শিল্প কারখানার ভ্যাট নিবন্ধন পেতে স্থানীয় করঞ্চলে যেতে হয়, বিভাগীয় অঞ্চলে যেতে হয়, কমিশনারেটের কাছে যেতে হয়, রাজস্ব বোর্ডে যেতে হয় এবং চারটা টিমের মাধ্যমে চারবার কারখানা ভিজিটের মাধ্যমে দীর্ঘ এক বছর ঘুরে অনেক সময় আরও বেশি সময় ধরে নিবন্ধন পেতে বিলম্বিত হয়। এটা সহজ করা দরকার।
১৮ কোটি লোকের মধ্যে অনেকেরই ভ্যাট নিবন্ধন নাই। নিবন্ধন ছাড়াও মাল বিক্রি হচ্ছে, আবার ২ লাখ টাকার ওপর মাল বিক্রি করলে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যদি ৫ শতাংশ ভ্যালু এডিশন হয় তারা জোর করে ৩৭.৩৮ পার্সেন্ট দিয়ে আসছে এখন এগুলোকে ৪০ শতাংশ
করার জন্য চাপ দিচ্ছে। যদি মূল্য ঘোষণা বাড়িয়ে না দেওয়া হয় তাহলে তাদের দোকানে গিয়ে খাতা পত্র নিয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের দাবি তারা ভ্যাট দিতে চায়, এজন্য আইন সহজ করতে হবে, যাতে সহজে ভ্যাট প্রদান করতে পারে। এ ছাড়া তারা যাতে হয়রানির সম্মুখীন না হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। আমদানি পর্যায় অ্যাডভান্স ট্রেড ভ্যাট অধিক নেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
পরবর্তীতে এই অ্যাডভান্স ভ্যাট সমন্বয় করা হবে অথবা ফেরত দেওয়া হবে বাস্তবিক পক্ষে এই ভেবে টাকা সমন্বয় করতে দিচ্ছে না এবং যে টাকা সরকারি কোষাগারী জমে আছে সেটা এখন ব্যবসায়ীদের জন্য গলায় ফাঁস হয়ে রয়েছে। যাদের টাকা সরকারি কোষাগারে আছে তাদের ফাইল অডিটি ফেলে এবং এগুলোকে হয়রানি করা হচ্ছে।
তবে ব্যবসায়ীরা সরকারের উন্নয়নে অংশীদার হতে চায় এবং ভ্যাটের পরিধি বৃদ্ধি করতে চায়। এ ব্যাপারে ব্যবসায়ী এবং ভ্যাটের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে সহজে রাজস্ব আদায় হবে অন্যদিকে ভ্যাট আদায় বাড়বে।