ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১

এফবিসিসিআই এবং পাকিস্তানের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সভা

পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠক আগামী মাসে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:২৮, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫

পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠক আগামী মাসে

বাংলাদেশ-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) সভার উদ্যোগ

বাংলাদেশ-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) সভার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে এ সভা হতে পারে। সভায় উভয় দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের পাশাপাশি যোগাযোগ বাড়ানোয় বেশি জোর দেওয়া হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ইআরডির কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে জেইসি সভার আলোচ্যসূচিসহ অন্যান্য বিষয়ে কাজ শুরু করেছেন। দুই দেশের মধ্যে সর্বশেষ জেইসি সভা হয় ২০০৫ সালে। অর্থাৎ ২০ বছর পর এ দুদেশের সঙ্গে যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত হবে। পাকিস্তানের সঙ্গে আসন্ন জেইসি সভার আলোচ্যসূচিতে রাখার জন্য এরই মধ্যে ১৫টি দপ্তরের প্রধানের কাছে প্রস্তাব চেয়ে চিঠি দিয়েছে ইআরডি।

যাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে- পররাষ্ট্র, শিল্প, বাণিজ্য, বস্ত্র ও পাট, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এসব মন্ত্রণালয় ও দপ্তর থেকে ইআরডিতে প্রস্তাব আসতে শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে ইআরডি সচিব শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী বলেন, ‘জেইসির সভা করার জন্য পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা চলছে। যে কোনো দেশের জিইসি সভার আলোচ্যসূচি ঠিক করার আগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব চাওয়া হয়। পরে সেই প্রস্তাবগুলো থেকে খসড়া আলোচ্যসূচি ঠিক করে তা সংশ্লিষ্ট দেশে পাঠাতে হয়। 
ওই দেশও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আমাদের কাছে প্রস্তাব পাঠায়। দুই দেশের অনুমোদনের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সূচি ঠিক করা হয়।’ ২০০৫ সালের ১২-১৩ সেপ্টেম্বর দুই দেশের মধ্যে ঢাকায় অষ্টম জেইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এখন পর্যন্ত সেটিই শেষ সভা। ওই সভায় পাকিস্তানের বাজারে শতাধিক পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা চেয়েছিল বাংলাদেশ। অন্যদিকে পাকিস্তান চেয়েছিল মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ)।

২০০৫ সালের পর জেইসির আর কোনো সভা হয়নি। বিশেষ করে গত আওয়ামী লীগ শাসনামলের ১৬ বছরে পাকিস্তানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে কোনো জেইসি সভা অনুষ্ঠানের উদ্যোগ লক্ষ করা যায়নি। দেশে গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, অর্থাৎ শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানোর আগ্রহ দেখায় পাকিস্তান। এ নিয়ে গত কয়েক মাসে ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ অর্থ উপদেষ্টাসহ কয়েকজন উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

সব সাক্ষাতেই তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধির আগ্রহ দেখান। এ ছাড়া গত সপ্তাহে পাকিস্তানি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফপিসিসিআইয়ের নেতাদের নেতৃত্ব একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে। এতে নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির সভাপতি আতিফ ইকরাম শেখ। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য জোরদার করতে তখন বিজনেস কাউন্সিল গঠনের বিষয়ে এফবিসিসিআই ও এফপিসিসিআই একটি সমঝোতা চুক্তি সই করে।
বাণিজ্য পাকিস্তানের অনুকূলে ॥ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে এখনো পাকিস্তান এগিয়ে আছে। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাকিস্তানে ৬ কোটি ১৯ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। এর বিপরীতে সে দেশ থেকে ৬২ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়। তার মানে পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে রয়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে এফপিসিসিআইয়ের সভাপতি আতিফ ইকরাম শেখ বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বিপুল বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে কৃষি, ওষুধ, চামড়া, মেশিনারিজ, রাসায়নিক ও আইসিটি খাতে দুই দেশের একসঙ্গে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সহজ করতে ছয় মাসে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেমন গত ডিসেম্বর মাসে প্রথমবারের মতো সরাসরি পাকিস্তান থেকে পণ্যবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। এ ছাড়া পাকিস্তান বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করেছে। দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল চালু করা নিয়েও আলোচনা চলছে।  
এফবিসিসিআই এবং পাকিস্তানের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সভা ॥ রোজাসহ সারা বছরের চাহিদা মেটাতে পাকিস্তান থেকে খেজুর, কমলার পাশাপাশি অন্যান্য ফল ও কৃষিপণ্য আমদানিতে বড় সম্ভাবনা দেখছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকগণ। পাশাপাশি পাকিস্তানে বাংলাদেশী বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানি সম্ভাবনাও রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। এজন্য দুদেশের মধ্যে শুল্ক-অশুল্ক বাধাসমূহ দূর করার আহ্বান জানিয়েছেন উভয় দেশের ব্যবসায়ীবৃন্দ।

বুধবার রাজধানীর গুলশানে এফবিসিসিআই এবং পাকিস্তানের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের মধ্যে অনুষ্ঠিত সভায় এসব কথা উঠে আসে। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআইর প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান। স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, রমজান মাসে বাংলাদেশে খেজুরের প্রচুর চাহিদা থাকে। পাশাপাশি অন্যান্য ফলের চাহিদাও এ সময় বেড়ে যায়। এ ছাড়া বছরজুড়েই স্থানীয় বাজারে দেশী-বিদেশী ফলের বেশ চাহিদা থাকে।

বাংলাদেশের জন্য ফল ও কৃষিপণ্যের সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য উৎস হতে পারে পাকিস্তান, জানান এফবিসিসিআইর প্রশাসক। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়ে মো. হাফিজুর রহমান বলেন, বেসরকারি খাতে যৌথ উদ্যোগ এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ-পাকিস্তান বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের বিষয়েও গুরুত্ব দেন তিনি।

×