এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ আফতাব জাবেদ
বৈদ্যুতিক খাতের এসএমই উদ্যোক্তাদের টিকিয়ে রাখতে আমদানিতে রেয়াত সুবিধা দেওয়ার দাবি করা হয়েছে। এছাড়া ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ এবং বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে দেশীয় বৈদ্যুতিক খাতে ১০ বছরের ট্যাক্স হলিডে সুবিধা চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক ও বৈদ্যুতিক খাতের উদ্যোক্তা মোহাম্মদ আফতাব জাবেদ বলেন, এ খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানের আমদানিতে রেয়াত দিতে হবে। ১৫ শতাংরে পরিবর্তে ৫ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ করা না হলে কেউ ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবে না।
তিনি বলেন, বৈদ্যুতিক শিল্পের কাঁচামাল আমদানি নির্ভরশীল। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের কাঁচামাল কমার্শিয়াল আমদানিকারকদের কাছ থেকে কেনা হয়ে থাকে। কাঁচামালের মূল মূল্যের ওপর ১০ শতাংশ যুক্ত করে বাজারজাতকরণ করে থাকে। রেয়াতবিহীন ১৫ শতাংশ ভ্যালু এ্যাডেড ট্যাক্স (ভ্যাট) পরিশোধ করে বাজারজাত করা দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুধু তাই নয় স্ক্র্যাপ দিয়ে যেসকল প্রতিষ্ঠান তামা, পিতল, এ্যালুমিনিয়াম ও মেটাল প্রস্তুত করেন তাদের ১৫ শতাংশ ভ্যাট দেওয়া কঠিন। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম উর্ধ্বগতি হওয়ায় স্ক্র্যাপ তৈরি তামা, পিতল, এ্যালুমিনিয়াম ও মেটালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। স্ক্র্যাপ দিয়ে তৈরি তামা, পিতল এ্যালুমিনিয়াম ও মেটাল আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি বন্ধ করতে হবে। যেসকল কারখানা রেয়াত দিতে পারে না তাদের ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ইলেক্ট্রিক্যাল মার্চেন্ডাইস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিইএমএমএ-বিমা) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আফতাব জাবেদ আরও বলেন, ভ্যাট ও ট্যাক্স নিয়ে ইলেকট্রিক মার্চেন্ডাইস খাতের ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে এনবিআর থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে না। ফলে নানা সঙ্কটের কারণে ইলেকট্রিক্যাল মার্চেন্ডাইস ম্যানুফ্যাকচারার্স খাতটির ব্যবসায়ীরা চাপের মুখে পড়েছেন। অথচ ব্যবসায়ীরা ভ্যাট ও ট্যাক্স দিয়েই ব্যবসা করতে চান।
তিনি বলেন, ছোট ও মাঝারি মানের ব্যবসায়ীরা কোন ধরনের রেয়াত পাচ্ছে না। রেয়াতের এই সুবিধা এ খাতের বড় শিল্পমালিকরা নিচ্ছেন। এ কারণে এমনভাবে ভ্যাট নির্ধারণ করতে হবে যাতে ছোট ব্যবসায়ীরা টিকে থাকেন। তিনি বলেন, যেসব ফ্যাক্টরীর ১৫ শতাংশ ভ্যাট গুনে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে তাদের ৫ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ করা হউক। অন্যথায় অনেকে কারখানা ছেড়ে দিতে বাধ্য হবেন। এতে কর্মসংস্থানের ঝুঁকি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এর আগে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটেও এসব সুবিধা দাবি করে এনবিআরকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই সময়ের এনবিআর চেয়ারম্যান বিষয়টিকে আমলে নেয়নি। ব্যবসায়ীরা মনে করেন, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে এখন যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে সেই সরকার তাদের ন্যায্য দাবি মেনে শীঘ্রই এ সংক্রান্ত একটি ঘোষণা দিবেন।
উল্লেখ্য, দেশে ইলেক্ট্রনিকস খাতে ছোট বড় মিলিয়ে অন্তত ২ হাজার কারখানা রয়েছে এবং এতে বিনিয়োগ রয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকার ওপরে। এ ছাড়া কয়েক লাখ মানুষ এ খাতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। নতুন উদ্যোক্তাদের এ খাতে আকর্ষণ করতে হলে ভ্যাটমুক্ত সুবিধা প্রদান এবং ১০ বছরের ট্যাক্স হলিডে সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। তাহলে এ খাতে শিল্প বিপ্লব ঘটে যাবে।
তিনি বলেন, যেসব ফ্যাক্টরির ১৫ শতাংশ ভ্যাট গুনে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে তাদের ৩ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ করা হউক। অন্যথায় অনেকে কারখানা ছেড়ে দিতে বাধ্য হবেন। এতে কর্মসংস্থানের ঝুঁকি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ শিল্প বিকাশে ভ্যাট ও ট্যাক্সমুক্ত করতে হবে। ভ্যাটমুক্ত হলে এ শিল্পে বিপ্লব ঘটবে। এ ছাড়া রেয়াতবিহীন প্রতিষ্ঠানকে ১০ বছর ট্যাক্স হলিডের আওতায় আনতে হবে। এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ৫ বছর পর্যন্ত ট্যাক্স হলিডে সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা ১০ বছর পর্যন্ত ট্যাক্স হলিডে সুবিধা পাচ্ছে, সেখানে দেশীয় উদ্যোক্তাদের এ সুবিধার বাইরে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
শিহাব