পুঁজিবাজার
দেশের পুঁজিবাজারে বর্তমানে আস্থার সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে, যা গত সপ্তাহের লেনদেনেও স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে। সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক দরপতন হয়েছে এবং লেনদেনের পরিমাণও নেমে এসেছে তলানিতে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা ও উদ্বেগ। তাঁদের এই অসহায়ত্বের প্রতি সরকার বা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো দৃষ্টি নেই।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আস্থাহীনতা এবং বাজারের অনিশ্চয়তার কারণেই পুঁজিবাজার এই কঠিন অবস্থানে পৌঁছেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে যে বাজারে সংস্কারের ফলে এই নেতিবাচক প্রবণতা তৈরি হয়েছে এবং সংস্কার পরবর্তীকালে বাজারের অবস্থান পুনরুদ্ধার হবে।
তবে বাজারে দরপতন ঠেকানোর জন্য কার্যকর কোনো পদক্ষেপ এখনো গ্রহণ করা হয়নি। এ বিষয়ে বিনিয়োগকারী সানী মাহমুদ বলেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে আমি যেন বড় ভুল করেছি। পুঁজি অর্ধেক হয়ে গেছে, কিন্তু কেউ আমাদের (বিনিয়োগকারীদের) কথা ভাবছে না। কারও কোনো মাথাব্যথা নেই।
বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ফলে কমেছে মূল্যসূচকও। এর মধ্য দিয়ে চলতি সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসেই এবং চলতি বছরে লেনদেন হওয়া ১২ কার্যদিবসের মধ্যে ৯ কার্যদিবসেই মূল্যসূচক কমল।
ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে ১৪১টির, কমেছে ১৯৬টির এবং ৬২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট কমেছে। সূচকটির অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৩৩ পয়েন্টে।
অন্যদিকে, লেনদেনও তলানিতে ঠেকেছে। চলতি বছরে কেবল ২ দিন ৪০০ কোটি টাকার ঘরে লেনদেন হয়েছে, বাকি ১০ দিনই লেনদেন ছিল ৩০০ কোটি টাকার ঘরে। এই ধারাবাহিকতায় গতকাল দিনভর হাতবদল হয়েছে ৩৬৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট, যা আগের কার্যদিবসে ছিল ৪০৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের দিনের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৪৩ কোটি ৮ লাখ টাকা।
পুঁজিবাজারে সার্বিক বিষয় নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে সমস্যা রয়েই গেছে। আস্থার সংকট প্রকট। কংক্রিট কিছু দেখতে পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। কনফিডেন্সটা ফেরানো দরকার।
পুঁজিবাজারের বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে সরকারকে অবহিত করা হচ্ছে বলে জানান ডিবিএ সভাপতি। তিনি বলেন, আমরা সব সময়ই বলে আসছি। তবে বলতে গেলেই শুনতে হচ্ছে সংস্কার কমিটি কাজ করছে।
৭ জানুয়ারি রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই ভবনে পুঁজিবাজারের অংশীদারদের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, ‘সংস্কারের কারণে পুঁজিবাজার সাময়িকভাবে খারাপ অবস্থায় আছে। সংস্কারকাজ শেষে পুঁজিবাজার ভালো অবস্থানে চলে যাবে।
বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোর জন্য যথেষ্ট সহায়তা করছে সরকার। নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে, আইসিবিকে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে, এসব তো আস্থা ফেরাতেই করা হয়েছে।’
সালেহউদ্দিন বলেন, ‘দীর্ঘ মেয়াদে অর্থায়নে ব্যাংকের সঙ্গে পুঁজিবাজারের সামঞ্জস্য রাখা হবে। ভালো সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা হবে। প্রাকৃতিকভাবে ভালো শেয়ারের মাধ্যমে পুঁজিবাজার দীর্ঘমেয়াদে ভালো হবে।’
শহীদ