ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

সবজি  চাষ উৎপাদনের মূল্য ৫০ কোটি টাকা 

নিজস্ব সংবাদদাতা,ফটিকছড়ি

প্রকাশিত: ১২:১৫, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫

সবজি  চাষ উৎপাদনের মূল্য ৫০ কোটি টাকা 

ছবি - জনকণ্ঠ

ফটিকছড়ি উপজেলায় জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছোট বড় খাল ও নদী। এসব খাল ও নদীর মধ্যে অন্যতম হলো হালদা খাল,সর্তাখাল, ফটিকছড়ি খাল, হালদা,ধুরুং,সত্তার,যতির, নলুয়ার, আন্দার মানিক, নাজিরহাট, কুম্ভারপাড়া, ধুরছ, নাইচ্যারঘাট ও ব্রাহ্মণহাট। খালের পাড়ের হাজারো কৃষকের মুখে আনন্দের হাসির উপলক্ষ্য সবজি বাম্পার ফলন। একানব্বই এর ঘূর্ণিঝড়ের আগে এসব চরগুলোতে জনবসতি ছিল। বিভিন্ন সময়ে বন্যায় হালদার ভাঙাগড়ায় এসব এলাকায় ক্রমাগতভাবে জেগে উঠেছে এসব চর। 

নদী ভাঙ্গনের শিকার এসব মানুষ একসময় নিঃস্ব হলেও এখন আশার সম্বল সবজি চাষ। প্রায় দেড় দশক ধরে এসব চরে সবজি আবাদ করে হাজারো পরিবার স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি রাখছেন দেশের কৃষি সমৃদ্ধিতে অবদান। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়,বর্ষার মৌসুমে বন্যায় অনেক জমি পানিতে তলিয়ে যায়। বন্যার পানি নেমে গেলে পলি জমে ওইসব জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। ফলে সবজি চাষের জন্য দারুন উপযোগী পলিযুক্ত এই দো- আঁশ মাটি। এই কারণেই মূলত দিন দিন কৃষিতে ঝুঁকছেন শিক্ষিত জেনারেশন। 

ফটিকছড়ি বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো: করিম জানান,আমরা ফটিকছড়ি খালপাড়ের কৃষকদের কাছ থেকে জমিতে গিয়ে পাইকারী দামে সবজি কিনে বাজারে খুচরা দামে বিক্রি করি। এতে আমরা যেমন লাভবান হই, তেমনি কৃষকও লাভবান হন। খাল পাড়ের এসব সবজির বেশ চাহিদা রয়েছে বাজারে।

হারুয়ালছড়ি কৃষক মোতালেব বলেন, ফটিকছড়ি খালের পাড়ে আমি তিন একর জমিতে বাঁধাকপি, ফুলকপি,মরিচ,বেগুন ও সীমের সমন্বিত চাষ করেছি। সপ্তাহে তিনবার সবজি তোলে বাজারে বিক্রি করি। খরচ বাদে আয় হয় প্রায় ১০ হাজার টাকা।

সর্তা খালের পাড়ের কৃষক মফিজ মিয়া জানান, কৃষি অফিস থেকে কিছু বীজ পেয়েছি। তার সাথে বাজার থেকেও কিছু বীজ এনে সর্তাখাল পাড়ের ১ একর জমিতে চাষ করে প্রায় ১৫০ মণ সবজি পেয়েছি। যার বাজার মূল্য দেড় লাখ টাকারও বেশি। এখানকার জমি উর্বর হওয়ায় তেমন সার প্রয়োগ করতে হয়নি। ফলে উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় লাভ বেশি হয়েছে।

সুন্দরপুর এলাকার আবুল কালাম বলেন,একসময় কৃষি কাজ করতো শুধু নিন্ম আয়ের নিরক্ষর মানুষ। কিন্তু,এখন সখের বসে হলেও প্রায় সব শ্রেনি পেশার মানুষ এখন কৃষি কাজ করে। এটি বড় আশার খবর।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: হাসানুজ্জামান বলেন, বহু বছর ধরে এ অঞ্চলের খালের পাড়ে প্রায় ৩ হাজার ২৬৫ জন মানুষ বসবাস করে। এসব সবজি আবাদ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। এখন বিভিন্ন জাতের উচ্চ ফলনশীল সবজি আবাদ হচ্ছে এসব চর এলাকায়। 
তিনি বলেন- এক্ষেত্রে অবশ্য কিছু চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। তারমধ্যে, বিদ্যুৎ সুবিধা না থাকা,কিছু অসাধু ব্যক্তির দ্বারা এসব চরাঞ্চল অবৈধ বালু ও মাটি বিক্রির কারণে ক্ষতিসাধনসহ নানা জটিলতা। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন,পুরো উপজেলায় শুধু রবি মৌসুমে প্রায় ৫০ কোটি টাকা মূল্যের সবজি উৎপাদন হয়েছে। এ অঞ্চলে বছরে কয়েকশ কোটি টাকার সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। এখানকার উৎপাদিত সবজি দেশের বিভিন্ন জেলাসহ বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। সরকার কৃষকদের সার বীজ প্রদানের পাশাপাশি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করছেন।

মনিষা মিম

×