.
সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে সম্প্রতি নানাবিধ পণ্যে ভ্যাট বা সম্পূরক শুল্ক (এসডি) বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগে নেতৃত্বপ্রদানকারী শীর্ষ সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস’ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি)। দেশের মোট এফডিআইর ৯০ শতাংশের প্রতিনিধিত্বকরে ফিকি। এর মধ্যে রয়েছে তামাক, টেলিযোগাযোগ, জ্বালানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ উচ্চ-রাজস্ব প্রদানকারী খাতগুলো। এসব খাত সম্মিলিতভাবে দেশের মোট অভ্যন্তরীণ রাজস্বের প্রায় ৩০ শতাংশ অবদান রাখে। ভ্যাট, শুল্ক এবং অন্যান্য কর বৃদ্ধির সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত ভোক্তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলার পাশাপাশি দেশে ব্যবসা পরিচালনার খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করবে। এই পদক্ষেপ কর রাজস্ব প্রদানকারী এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকারী ব্যবসাগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতা ও কার্যক্রম পরিচালনার সক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেলবে।
ফিকি শুল্ক-কর বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রধান উদ্বেগের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করেছে; যার মধ্যে রয়েছে: প্রোকিউরমেন্ট প্রোভাইডার (ভ্যাট ৭.৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ এবং শতভাগ ইনপুট ভ্যাট নন-রিকভারেবল), মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ (ভ্যাট ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ এবং শতভাগ ইনপুট ভ্যাট নন-রিকভারেবল), পরিবহন ঠিকাদার (ভ্যাট ১০ শতাংশ, থেকে ১৫ শতাংশ, এবং ২০ শতাংশ ইনপুট ভ্যাট নন-রিকভারেবল) এবং রেস্টুরেন্ট (ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ, এবং ১০০ শতাংশ ইনপুট ভ্যাট নন-রিকভারেবল)।
ভ্যাট হার ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে শিল্পগুলো ক্ষতি কমানোর জন্য পণ্যের মূল্য বাড়াতে বাধ্য হবে। এতে করে খুচরা ক্রয়ের খরচ ২.৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে, যার কারণে সাধারণ ভোক্তারা মূল্য বৃদ্ধির চাপে পড়বেন। পরিণতিস্বরূপ, ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে, যার ফলে সরকার একটি বৃহৎ অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে। তাই, করের উচ্চ হার আরোপ করে রাজস্ব বৃদ্ধি করার কৌশলটি অকার্যকর প্রমাণিত হওয়ার সমূহসম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষত ট্যাক্স নেট না বাড়িয়ে ইতোমধ্যেই উচ্চহারে কর প্রদানকারী খাত যেমন তামাক, টেলিযোগাযোগ, জ্বালানির মতো খাতগুলোতে আরও বেশি পরিমাণ রাজস্বর চাপ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
অনুকূল ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরি ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা রাখতে যুক্তিসঙ্গত ও টেকসই আর্থিক ও নিয়ন্ত্রক নীতি প্রণয়নে সরকারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে ফিকি। ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণে ফিকির সঙ্গে সংলাপ না করা এই যৌথ অংশীদারিত্বের যাত্রায় উল্লেখযোগ্য ব্যত্যয়। পর্যাপ্ত গবেষণা বা অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই নীতি প্রণয়ন বিনিয়োগকারীদের আস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং ভবিষ্যতে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের ধারাকে বাধাগ্রস্ত করবে। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা সংশোধনের আগে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা না করার বিষয়টি দেশীয় এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে নেতিবাচক বার্তা দিবে, যা দেশের ব্যবসার পরিবেশের স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধি করবে।
তাই ফিকি সরকারের প্রতি সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলো পুনর্বিবেচনা এবং পুনর্মূল্যায়নের আহ্বান জানিয়েছে। সরকারের উচিত ব্যবসায়িক কমিউনিটির সঙ্গে স্বচ্ছ ও গঠনমূলক সংলাপকে অগ্রাধিকার দেওয়া, যাতে করনীতি সংশোধনের প্রভাব সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা যায়।