ছবি: সংগৃহীত
শতাধিক পণ্যে নতুন করে শুল্ক ও ভ্যাট বৃদ্ধি এবং গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবকে দ্রুত প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই নেওয়া এই সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনীতির ওপর প্রচন্ডভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার গতিকে থমকে দেবে। ভ্যাটের বাড়তি চাপ সাধারণ মানুষের ওপর পড়বে। ফলে দ্রুত এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা উচিত।
মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এফবিসিসিআইর বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদ আয়োজিত 'নিয়ম বহির্ভূতভাবে পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি এবং গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবের প্রতিবাদে' শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী নেতারা এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদের আহ্বায়ক জাকির হোসেন নয়ন। এ সময় বক্তব্য রাখেন, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের নেতা আব্দুল হক, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আবুল কাসেম হায়দার, সংগঠনটির সাবেক পরিচালক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী খোকনসহ বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
আব্দুল হক বলেন, সরকারের বাজেট ঘাটতি ৪০ হাজার কোটি টাকার ওপরে। কিন্তু বিতর্কিত এস আলম গ্রুপ একাই ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে।
এরপর বেক্সিমকো গ্রুপসহ অন্তত ডজন খানেক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আছে যারা লাখ লাখ কোটি টাকা সরিয়ে নিয়েছে। এরই নেতিবাচক প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ। ব্যাংকগুলো খালি হয়ে গেছে, অর্থনীতি এমন কোন জায়গা নেই যেখানে দুর্নীতি করেনি ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার সরকার। এরপরও বলব জনগণকে স্বস্তি দিতে ভ্যাট ও শুল্কহারের প্রস্তাব প্রত্যাহার করুন যারা চুরি করল তাদের কিছুই হচ্ছে না, অথচ সাধারণ জনগল্প অর্থদণ্ড দিচ্ছে তাকে নিত্যপণ্য কিনতে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে।
এজন্য আগে বড় চোরদের ধরতে হবে এবং পাচারকাত অর্থ ফিরিয়ে আনার শক্তিশালী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ফেডারেশন চেম্বারে এখন কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব নেই। ফলে আমরা এখানে আসতে বাধ্য হয়েছি। সুদের হার কোনোভাবেই সহনীয় নয়। এটি আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ১৬ শতাংশ সুদের হারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখা যাবে না। ১৩ শতাংশ সুদের হার ব্যবসাবান্ধব নয়, সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসতে হবে।
আবুল কাশেম হায়দার বলেন, নির্বাচিত সরকার শুল্ক বা গ্যাসে দাম বাড়াবে। কিন্তু এই সরকারকে সেই ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। এ ধরনের সিদ্ধান্ত শিল্পকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এই সরকার দিন দিন দুর্বল সরকারে পরিণত হচ্ছে। দিন দিন মানুষের ক্রয় ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। ঘুষ ও দুর্নীতির মাত্রা আগের চেয়ে বেড়ে গেছে মন্তব্য করে ব্যবসায়ী এই নেতা বলেন, 'ঘুষ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু এখন ঘুষের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে।
লিখিত বক্তব্যে জাকির হোসেন নয়ন বলেন, অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা না করেই মূসক ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করার ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষ থেকে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির জন্যও সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। হঠাৎ এ কর আরোপ এবং গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব দেশের সার্বিক জাতীয় অর্থনীতির ওপর প্রচন্ডভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তিনি আরও বলেন, সব ধরনের রেস্তোরাঁর বিলের ওপর ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট বৃদ্ধি করার পাশাপাশি দোকান ও সুপার মার্কেটে বিক্রয়ের ওপরও ভ্যাট বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বর্তমানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত বার্ষিক লেনদেন হলে টার্নওভার কর দিতে হতো। কিন্তু, ঘোষিত গেজেট অনুযায়ী বার্ষিক টার্নওভার কর প্রদানের সীমা ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত করা হয়েছে। এতে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
শিহাব