দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগ্রুপ দেশবন্ধু গ্রুপ বর্তমানে তীব্র সংকটের মুখে পড়েছে। ব্যাংকগুলোর অসহযোগিতা এবং এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) বন্ধ করার কারণে প্রতিষ্ঠানটির কাঁচামাল আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে কারখানাগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
দেশবন্ধু গ্রুপের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানটি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসির সঙ্গে নিয়মিত লেনদেন করে আসছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকগুলো শতভাগ ক্যাশ মার্জিন প্রদানের পরেও এলসি খুলতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও ব্যাংকগুলো ঋণ পুনর্গঠন বা রিশিডিউল না করে তালবাহানা করছে।
দেশবন্ধু গ্রুপের তথ্য অনুযায়ী, এই সংকটের কারণে তাদের অধীনে থাকা ২৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশ কিছু কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে সরবরাহ ব্যবস্থায় বিপর্যয় দেখা দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ব্যাংকগুলো দাবি করেছে, সিআইবি (ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো) তালিকায় নাম থাকার কারণে এলসি খোলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে হাইকোর্ট ২৬ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে এক আদেশে সিআইবি তালিকার প্রকাশ ও কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। দেশবন্ধু গ্রুপ এই আদেশ বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছে।
১৯৮৯ সালে বাল্ক কমোডিটি ট্রেডার হিসেবে যাত্রা শুরু করে দেশবন্ধু গ্রুপ। ২০০৫ সালে দেশবন্ধু সুগার মিল বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। তবে ২০১১ সালে সরকারের নির্দেশে উচ্চমূল্যে র-সুগার আমদানি করতে বাধ্য হওয়ায় ৩৭৮ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয় প্রতিষ্ঠানটি। এই ক্ষতির সঙ্গে সুদের চাপ ও অন্যান্য বৈশ্বিক সংকট যেমন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং কোভিড পরিস্থিতি মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক চাপে পড়ে।
দেশবন্ধু গ্রুপের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক বশির আহমেদ বলেন, দেশবন্ধু গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠান একদিনে গড়ে ওঠেনি। এটি দেশের অন্যতম বৃহৎ সম্পদ। ব্যাংকগুলো যদি এলসি খুলতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে আমাদের কর্মী এবং জাতীয় সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর বড় প্রভাব পড়বে। এটি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ। সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক যদি যথাযথ নির্দেশনা দেয়, তবে এই সংকট উত্তরণের পথ বের করা সম্ভব।
রিফাত