ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১

ভ্যাট বাড়লেও তেমন প্রভাব পড়বে না ॥ প্রেস সচিব

পাঁচ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৪২ হাজার কোটি টাকা

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২২:৫২, ১২ জানুয়ারি ২০২৫

পাঁচ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৪২ হাজার কোটি টাকা

পাঁচ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৪২ হাজার কোটি টাকা

আইএমএফের চাপে নয়, ট্যাক্স-ডিজিপি অনুপাত বাড়াতে সরকার কিছু পণ্যের ওপর ভ্যাট বাড়িয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিগত পাঁচ মাসে ৪২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ট্যাক্স জিডিপির অনুপাত বাড়ানো হলে এতে সাধারণ মানুষ অদূর ভবিষ্যতে লাভবান হবে বলেও জানান তিনি। 
রবিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন প্রেস সচিব। তিনি বলেন, বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় ভ্যাট বাড়লেও সাধারণ মানুষের ওপরে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। ট্যাক্সের টাকা বাংলাদেশের উন্নয়নে ব্যয় হবে। 
শফিকুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের ট্যাক্স জিডিপির যে অনুপাত সেটি ২০২১ সালের পর থেকে খুব নেমে যাচ্ছে। করোনার পর থেকে এমন জায়গায় এসেছে, এ বছর গত পাঁচ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৪২ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ছিল ১ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকা। সেটা সংগ্রহ হয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার একটু বেশি।’ 
তিনি বলেন, আরেকটা বিষয় হচ্ছে, বিশ্বে বাংলাদেশের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও নিচের দিকে। অনুপাতের হার এমন জায়গায় চলে যাচ্ছে যে সেটি টেকসই না। বাংলাদেশের মানুষের ভালো থাকার জন্য ট্যাক্স জিডিপির রেশিও একটা জায়গায় আমাদের নিতেই হবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে কিছু ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে।
 প্রেস সচিব বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর থেকে আমরা চেষ্টা করছি আমাদের খরচটা কীভাবে কমানো যায়। আগে ৩০০ জনের বহর নিয়ে বিদেশ যাওয়া হতো। এখন আমাদের ৪০-৫০ জনের বেশি হয় না।
আইএমএফের চাপে ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ‘আইএমএফের কথা আমরা কেন নেব। আমাদের এখানে অর্থনীতিবিদরা আছেন। আমাদের মাক্রো ইকোনমিক স্ট্যাবিলিটি দরকার। স্ট্যাবিলিটি না থাকলে টাকার মান কমে যায়। 
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, অপূর্ব জাহাঙ্গীর, সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ, সহকারী প্রেস সচিব আশরোফা ইমদাদ, সুচিস্মিতা তিথি উপস্থিত ছিলেন।
এই মুহূর্তে প্রশ্ন করার সঠিক সময় ॥ অপর এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, গণতান্ত্রিক ট্রানজিশনের এই মুহূর্তে প্রশ্ন করার সঠিক সময়। এখন প্রশ্ন করতে পারেন, প্রশ্ন করার সঠিক পরিবেশ আছে কিনা? গণমাধ্যমের সেই স্বাধীনতা আছে কিনা প্রশ্ন করার? আমি আমার সরকারের পক্ষ থেকে বলতে পারি, গত পাঁচ মাস ধরেই আমরা বলছি, প্রশ্ন করার এখনই সময়। ক্ষমতাধরদের প্রশ্ন করে দায়বদ্ধতার মধ্যে নিয়ে আসার এখনই সেরা সময়।
রবিবার রাজধানীর গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনে অক্সফামের উদ্যোগে ডেভেলপমেন্ট মিডিয়া ফোরামের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
শফিকুল আলম বলেন, গত ৫ মাসে আমরা আমাদের নিরাপত্তা এজেন্সি, প্রশাসনকে ব্যবহার করে, কিংবা কোনো আইন প্রয়োগ করে কোনো প্রকার বাধা দেইনি। যদি কারও অভিযোগ থাকে আমাদের জানান, আমরা সেটি নিয়ে কাজ করব। এখন অকল্পনীয় স্বাধীনতা ভোগ করছে গণমাধ্যম।

এখন আমার সমালোচনা করতে পারেন, প্রধান উপদেষ্টার সমালোচনা করতে পারেন, এমনকি উপদেষ্টাদেরও সমালোচনা করতে পারেন। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক করতে স্বাধীন গণমাধ্যমের প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি। আমরা সেজন্য যথাযথ পরিবেশ বজায় রাখার চেষ্টা করছি, যাতে যে কেউ যেকোনো সংবাদ ভীতি ছাড়াই করতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা এখন এমন একটা সময়ে আছি যখন আমাদের উন্নয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছি। ছাত্র-জনতার সবাই এখন প্রশ্ন তুলছে, আমরা কি সঠিক পথে আছি, আমরা কি গণতন্ত্রের চেয়েও বেশি উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়েছি, গণতন্ত্রকে স্যাক্রিফাইস করে উন্নয়ন কতদূর টিকবে-এই ধরনের প্রশ্ন এখন সর্বত্র। আমাদের বেশ ভালো লেগেছে যে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এসব প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, যারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিল।
প্রেস সচিব আরও বলেন, গত কয়েক দশক ধরে আমরা যেসব প্রকল্প হাতে নিচ্ছি কিংবা বেসরকারি খাত যেসব প্রকল্প হাতে নিচ্ছে, আসলে আমরা নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছি পরিবেশের ক্ষতি করে। প্রতি বছর আমাদের নদীগুলো দূষণের শিকার হচ্ছে নতুন করে।

এই মুহূর্তের তথ্য বলছে, দেশের ৫৪টি নদী দূষিত। আমরা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছি আমাদের নদী দূষিত করে। দূষণ এখন আমাদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা। এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে কয়েক বছর পর আমাদের সন্তানরা এখানে বাস করতে চাইবে না।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে শফিকুল আলম বলেন, এখন অনেক প্রশ্ন আছে করার। আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পরিবেশবিধি মেনে করা হয়েছে কিনা। এসব প্রকল্পে যারা কাজ করেছে তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে কিনা, প্রকল্প এলাকার আশপাশে থাকা মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে কিনা। অনেক প্রশ্ন করার আছে, উন্নয়ন অনেক বড় বিষয়।

×