ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১

বিক্রীত পণ্যের ভ্যাট দিতে গড়িমসি ঘুষের অভিযোগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২১:০৭, ১১ জানুয়ারি ২০২৫

বিক্রীত পণ্যের ভ্যাট দিতে গড়িমসি ঘুষের অভিযোগ

পণ্য বিক্রি হলেও সেই বিক্রীত মূল্যের ওপর মূসক দিচ্ছে না

পণ্য বিক্রি হলেও সেই বিক্রীত মূল্যের ওপর মূসক দিচ্ছে না। উপরন্তু মূসক না দিয়ে শুল্ক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার বঙ্গ পিভিসি পাইপ ইন্ডাস্ট্রিজের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছে যশোর কাস্টমস, এক্সাসাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকি নিয়ে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে এমনটাই জানা গেছে।
সূত্র জানায়, চুয়াডাঙ্গায় বঙ্গ পিভিসি পাইপ ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ কোটি ২৮ লাখ টাকা মূসক (ভ্যাট) ফাঁকির তথ্য উদ্ঘাটন করেছে যশোর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৩ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত ওই অর্থ ফাঁকি দিয়েছে এমন অভিযোগ এনে গত ৯ জানুয়ারি কাস্টমস আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
কিন্তু মামলার পর মালিকপক্ষ কারখানা বন্ধের ঘোষণা দিলেই বাঁধে বিপত্তি। প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীরা রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করে। তারা দাবি করে, শুল্ক কর্মকর্তারা ঘুষের টাকা না পেয়ে কর ফাঁকির এই তথ্য উদঘাটন ও মামলা করেছে।
এ বিষয়ে জানা গেছে, গত ৬ জানুয়ারি যশোর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট অফিসের অতিরিক্ত কমিশনার মো. রাকিবুল হাসানের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের টিম অভিযান পরিচালনা করে। 
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট অফিস থেকে জানানো হয়, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ওইদিন প্রতিষ্ঠানটিতে পরিদর্শনে যায় কাস্টমস কর্মকর্তারা। স্বাভাবিকভাবেই প্রতিষ্ঠানটির নথিপত্র সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই করা হয়। এরপরই ভ্যাট ফাঁকির তথ্য খুঁজে পায় এনবিআর কর্মকর্তারা। এর প্রেক্ষিতে গত ৯ জানুয়ারি মামলা দায়ের করা হয়।
তবে বঙ্গ পিভিসি পাইপ ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক সেলিম আহমেদ জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তার নতুন করে কোনো বক্তব্য নেই, কর্মচারীদের বক্তব্যই তার বক্তব্য। তিনি বলেন, তবে এটুকু বলতে পারি যে টাকার ভ্যাট দাবি করা হয়েছে, সেটা আমাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। সে কারণেই প্রতিষ্ঠান বদ্ধ ঘোষণা করেছি।

তিনি জানান, ভুল তথ্যের ওপর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ অ্যাসেসমেন্ট করেছে। মূলত আমার ছেলে একটি ঋণের আবেদন করেছিল। সেই আবেদনে ব্যাংকিং স্টেটমেন্টের যে তথ্য দেয়া হয়েছে, সেটা আমলে নিয়ে ভ্যাট ফাঁকির কথা বলছে তারা। আসলে ওটা পণ্য বিক্রয়ের তথ্য নয়।
কিন্তু এনবিআর সূত্র জানায়, অভিযানকালে প্রতিষ্ঠানটির সেলস রিপোর্ট, বিদ্যুৎ বিল, অ্যাকাউন্ট রিসিভেবল শিট, রেজিস্টার খাতা, ফিজিক্যাল স্টক এবং কম্পিউটার সিপিইউ ইত্যাদি জব্দ করা হয়। এরপর প্রতিষ্ঠানটির নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠান ২০২৩ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত আইভাস সিস্টেমে (ভ্যাট অনলাইন সিস্টেমে) দাখিলকৃত পত্রে প্রদর্শিত মোট বিক্রয়মূল্য ২ কোটি ৯০ লাখ ১৭ হাজার ৮৭৪ টাকা।

অপরপক্ষে অভিযানকালে প্রতিষ্ঠান থেকে জব্দকৃত বিক্রয় তথ্য অনুযায়ী বিক্রয়মূল্য ৪৪ কোটি ৭৩ লাখ ৬৭ হাজার ৯৮৩ টাকা উল্লেখ থাকলেও মাসভিত্তিক বিক্রয়মূল্যের যোগফল পাওয়া যায় ৪৩ কোটি ৩৯ লাখ ৬৭ হাজার ৯৮৩ টাকা, যা প্রতিষ্ঠানের উক্ত সময়ের প্রকৃত বিক্রয়মূল্য। বিক্রয়মূল্যকে ভিত্তি ধরে পরে হিসাব করা হয়। সেখানে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত সময়ে দাখিলপত্রে প্রদর্শিত বিক্রয়মূল্য ২ কোটি ৯০ লাখ ১৭ হাজার ৮৭৪ টাকা।

অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটি ৪০ কোটি ৪৯ লাখ ৫০ হাজার ১০৯ টাকা বিক্রয়মূল্য কম প্রদর্শন করা হয়েছে। যার মধ্যে মূসক আরোপযোগ্য বিক্রয়মূল্য হলো ৩৫ কোটি ২১ লাখ ৩০ হাজার ৫৩০ টাকা প্রযোজ্য। মূসক আরোপযোগ্য মূল্যের বিপরীতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট হিসাব করলে ফাঁকিকৃত মূসক বা ভ্যাটের পরিমাণ ৫ কোটি ২৮ লাখ ১৯ হাজার ৫৭৯ টাকা যা প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে আদায়যোগ্য। মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর ধারা ৭৩ অনুযায়ী ওই প্রতিষ্ঠানের মোট ৫ কোটি ২৮ লাখ ১৯ হাজার ৫৭৯ টাকা রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটন হয়েছে।

যা সরকারের অনুকূলে আদায়যোগ্য বলে মনে করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এদিকে মূসক (ভ্যাট) ফাঁকি উদঘাটনের দাবি আসলেও শুক্রবার চুয়াডাঙ্গায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে সামনে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন বঙ্গ পিভিসি পাইপ ইন্ডাস্ট্রিজের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
তাদের দাবি করেন, বঙ্গ পিভিসি পাইপের মালিক সেলিম আহমেদের কাছে বড় অংকের ঘুষ দাবি করেন কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার রাকিবুল হাসান।

×