রিহ্যাব ফেয়ার ২০২৪-এর উদ্বোধন করেন রাজউকের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান সরকার
রাজউক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, সরকারের বিবেচনায় আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ড্যাপ এবং বিধিমালা সংশোধনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগামীতে অকুপেনসি সনদ প্রদানে আর কোনো জটিলতা থাকবে না। সব ভবন মালিক এই সনদ গ্রহণ করেন। ঢাকাসহ সারাদেশে নাগরিকদের আবাসনের স্বপ্ন পূরণে রিহ্যাবের অবদান অনেক বড়।
সোমবার আগারগাঁওয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র বিআইসিসিতে রিহ্যাব আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী রিহ্যাব ফেয়ার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ‘ঢাকাকে সুন্দরভাবে বসবাসযোগ্য করার জন্য ইতোমধ্যে রাজউক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজের জন্য বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষসহ স্কুল-কলেজ ও ভার্সিটির শিক্ষার্থীরা যুক্ত রয়েছে। রিহ্যাবের বিধিমালা মোতাবেক পরিবেশ রক্ষা করে রাজধানীকে পরিচ্ছন্ন নগরায়ণ উপহার দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। নিয়ম মেনে ঢাকা শহরে আরও উচ্চতাসম্পন্ন ভবন দেখতে চান তিনি। সুন্দর নগরায়ণের পরিকল্পনার মধ্যে বিভাগীয় শহরগুলোকে নিয়ে কাজ করতে চান তিনি। এ ছাড়া ঢাকার আশেপাশে সাভার, মুন্সীগঞ্জ ও নরসিংদীতে নগরায়ণের পরিকল্পনা চলমান রয়েছে।
রিহ্যাব নেতাদের উদ্দেশ করে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, রিহ্যাব আয়োজিত এই মেলায় প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়, যা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ক্রেতাদের ফ্ল্যাট হস্তান্তর করতে কোনোপ্রকার হয়রানি যেন না হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সেনা কল্যাণ সংস্থার চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, আবাসন খাতের এই মেলা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই শহরের নীল আকাশ দেখতে আমার খুবই ভালো লাগে। এই নীল আকাশ ঢেকে দিলে সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেলে মনটা খারাপ হয়ে যায়। দেশটা সবার, তাই শুধু ব্যবসা না করে সুন্দর পৃথিবী গড়তে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
এবারের মেলায় বিভিন্ন আবাসন কোম্পানির পাশাপাশি বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ও অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানও অংশ নিচ্ছে। রিহ্যাব সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান জানান, ২০০১ সাল থেকে ঢাকায় রিহ্যাব হাউজিং ফেয়ার শুরু হয়। এটি ঢাকায় অনুষ্ঠিত রিহ্যাবের ২৬তম ফেয়ার। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ১৫টি ফেয়ার সফলভাবে সম্পন্ন করেছে রিহ্যাব। রিহ্যাব ২০০৪ সাল থেকে বিদেশে হাউজিং ফেয়ার আয়োজন করে আসছে।
এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ১২টি, যুক্তরাজ্য, রোম, কানাডা, সিডনি ও কাতারে একটি করে এবং দুবাইতে দুইটি রিহ্যাব হাউজিং ফেয়ার সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এসব ফেয়ার আয়োজনের মাধ্যমে রিহ্যাব দেশ ও বিদেশে গৃহায়ন শিল্পের বাজার সৃষ্টি এবং তা প্রসারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছে। অন্যদিকে, প্রবাসী ক্রেতারা দেশে তাদের পছন্দের আবাসন খুঁজে পাচ্ছেন। আবার এই ফেয়ারের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জিত হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি গৃহায়ন শিল্প এবং লিংকেজ শিল্প বিকাশে অনন্য ভূমিকা পালন করে চলেছে এই ফেয়ার। রিহ্যাব ফেয়ারে ২২০টি স্টল থাকছে। এই ফেয়ারে পাঁচটি গোল্ড স্পন্সর, ১৮টি কো-স্পন্সর, ১৮টি বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ও ১০ অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে।
রিহ্যাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভুঁইয়া বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে একজন নাগরিকের পক্ষে হাউজিং লোন ছাড়া ফ্ল্যাট বা প্লট কেনা প্রায় অসম্ভব। ক্রেতারা যাতে খুব সহজে এই ঋণ পেতে পারেন সেই ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।
রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট-২ ও মেলা কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আক্তার বিশ্বাস বলেন, এই মুহূর্তে যা আমাদের জন্য বড় সংকট তৈরি করেছে, তা হলো ড্যাপে ফার হ্রাস বা ভবনের আয়তন ও উচ্চতা কমানোর বিষয়টি। জিডিপিতে ১৫ শতাংশ অবদান রাখা আবাসন শিল্প আজ হুমকির মুখে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন রিহ্যাবের পরিচালক ও মেলা কমিটির কো-চেয়ারম্যান মিরাজ মোক্তাদির। অনুষ্ঠানে রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট (ফিন্যান্স) আব্দুর রাজ্জাক, ভাইস প্রেসিডেন্ট-৩ ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল লতিফ, ভাইস প্রেসিডেন্ট হাজী দেলোয়ার হোসেনসহ রিহ্যাবের পরিচালকবৃন্দ এবং অন্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্রেতা-দর্শনার্থীরা মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন। মেলায় প্রবেশে সিঙ্গেল এন্ট্রি টিকিটের প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা। আর মাল্টিপল এন্ট্রি টিকিটের মূল্য ধরা হয়েছে ১০০ টাকা। মাল্টিপল এন্ট্রি টিকিট দিয়ে একজন দর্শনার্থী মেলার সময় পাঁচবার প্রবেশ করতে পারবেন। এন্ট্রি টিকিটের সম্পূর্ণ অর্থ দুস্থদের জন্য করপোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটির (সিএসআর) কাজে ব্যয় করা হবে। টিকিটের র্যাফেল ড্রতে থাকবে আকর্ষণীয় পুরস্কার।