.
দেশে বছরে প্রায় পৌনে তিন লাখ কোটি টাকার শুল্ক-কর ছাড় দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আয়কর যা আদায় হয়, তার চেয়ে বেশি করছাড় দেওয়া হয়। মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ও শুল্কের ক্ষেত্রেও করছাড়ের পরিমাণ প্রায় আদায়ের কাছাকাছি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তিনটি প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচির আওতায় এনবিআরকে নানা ধরনের শর্ত ও লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। ঋণের শর্ত হিসেবে আইএমএফ করছাড় কমাতে বলেছে। কয়েক দশক ধরে যে কর অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে, তা বাতিলের জন্য সংস্থাটি আবারও চাপ দিয়েছে। তারা বলেছে, বিদ্যমান সব ধরনের করছাড় ২০২৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে তিন ধাপে বাতিল করতে হবে। এ ছাড়া আয়কর আইনের ৭৬(১) ধারা বাতিলের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে করছাড় দেওয়ার স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা বাতিলের শর্ত মানতে বলেছে।
এনবিআর নিজেও এখন অবশ্য করছাড় ধীরে ধীরে উঠিয়ে দেওয়ার পক্ষে। তারা আইএমএফের শর্ত আরোপের পর করছাড় বিষয়ে তিনটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এ নিয়ে এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেসের পরিচালক স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলেন, এরই মধ্যে এনবিআর আয়কর, ভ্যাট ও শুল্কসংক্রান্ত কর অব্যাহতির বিষয়ে বিস্তারিত সমীক্ষা করেছে। এখন আমাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে, কোন খাতে আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন এবং কোন খাত ইতোমধ্যে যথেষ্ট সমর্থন পেয়েছে। সহায়তা পাওয়া খাতগুলোর ওপর থেকে ধীরে ধীরে সমর্থন প্রত্যাহার করতে হবে।
এদিকে আইএমএফের শর্ত পালনে এনবিআর ২০২৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত শুল্ক-কর ছাড়ের বিষয়ে তিনটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনায় দেখা যায় আয়কর, ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক, আমদানি শুল্ক ও আবগারি শুল্ক মিলিয়ে এক অর্থবছরে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৪১০ কোটি টাকার ছাড় দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বেশি করছাড় দেওয়া হয় ভ্যাট খাতে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ লাখ ২৯ হাজার ৫৭০ কোটি টাকার ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়, যা ওই বছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। সেই অর্থবছরে এই খাতে এনবিআর আদায় করেছিল ১ লাখ ৫৮ হাজার ১৮১ কোটি টাকা। অর্থাৎ সেবার যত ভ্যাট আদায় হয়েছে, তার প্রায় ৮২ শতাংশের মতো ছাড় দেওয়া হয়েছে। ছাড় না দিলে ভ্যাট খাতে এই অর্থবছরে আদায় হতো ২ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। মূলত অব্যাহতি কিংবা শুল্ক-করের হার কমিয়ে ব্যবসায়ীদের এ ধরনের ছাড় দেওয়া হয়।
বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভ্যাট অবকাশ বন্ধ করা ও সব ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করাসহ নিয়ম-নীতি পরিপালন করা গেলে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট আদায় করা যেত, কিন্তু সেবার আদায় হয়েছে ৮৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ভ্যাট গ্যাপ বা সম্ভাবনা ও আদায়ের মধ্যে ঘাটতি ছিল প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা। আয়কর খাতে আদায়ের চেয়ে ছাড়ের পরিমাণ বেশি।