ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১

স্বাস্থ্য ও জলবায়ু সহনশীল উন্নয়ন

বাংলাদেশকে ১১৬ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫০, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশকে ১১৬ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

বাংলাদেশকে ১১৬ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জলবায়ু সহনশীল উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশকে ১১৬ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ১৩ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা (ডলারপ্রতি ১১৬ টাকা ধরে)।
বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, স্বাস্থ্যসেবা, পানি ও স্যানিটেশন পরিষেবা এবং সবুজ ও জলবায়ু সহনশীল উন্নয়নে এই তিন প্রকল্পে বাংলাদেশের জন্য এ ঋণ অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক পরিষদ।
বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আব্দুলায়ে সেক বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি। দেশটি বর্তমানে দূষণের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। প্রতিটি ক্ষেত্রে জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধি এবং দূষণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অগ্রাধিকার হয়ে উঠেছে। এই নতুন অর্থায়ন বাংলাদেশকে স্বাস্থ্য, পানি এবং স্যানিটেশনসহ মৌলিক পরিষেবা প্রদান করবে এবং একইসঙ্গে পরিচ্ছন্ন, জলবায়ু সহনশীল এবং টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করবে।
বিশ্বব্যাংক আরও জানায়, সেকেন্ড বাংলাদেশ গ্রিন অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট ক্রেডিট’ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের সবুজ ও জলবায়ু সহনশীল উন্নয়নে সহায়ক সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে ৫০ কোটি ডলার (বাংলাদেশী টাকায় ৫ হাজার ৯৯৭ কোটি) দেওয়া হবে। এই অর্থায়নে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে সবুজ ও জলবায়ু সহনশীল কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এ ছাড়াও নীতিগত সংস্কারে এবং দেশের প্রধান খাতগুলোতে পরিচ্ছন্ন ও সম্পদসাশ্রয়ী উৎপাদন ও পরিষেবার প্রচার করা হবে। ঋণের পূর্বশর্ত হিসেবে মধ্য-মেয়াদি বাজেট কাঠামোর সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের গাইডলাইন গ্রহণ করেছে পরিকল্পনা কমিশন।
বিশ্বব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বায়ুদূষণ কমানো, কার্বন বাজারে প্রবেশাধিকার সম্প্রসারণ, টেকসই পানি ও স্যানিটেশন পরিষেবা বৃদ্ধি, বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ এর দক্ষতা উন্নতকরণ এবং একটি জলবায়ু সহনশীল ও টেকসই পরিবেশ গঠনে সহায়ক নীতিমালা সমর্থন করে এই অর্থায়ন। ডেল্টা প্ল্যান কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য ডেল্টা অ্যাপ্রেইজাল ফ্রেমওয়ার্ক গ্রহণ করেছে পরিকল্পনা বিভাগ। এই অর্থায়ন টেকসই পাবলিক প্রকিউরমেন্ট, যা পরিবেশগত ও সামাজিক বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে, এবং পরিবেশবান্ধব নির্মাণ শিল্পের উন্নয়নে সহায়তা করবে।
সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্য ও পুষ্টি পরিষেবায় প্রবেশাধিকারের উন্নয়ন এবং স্থিতিশীল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়তা করবে হেলথ, নিউট্রিশন অ্যান্ড পপুলেশন সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম ফর রেজাল্টস। ৩৭.৯ কোটি ডলারের (বাংলাদেশী টাকায় ৪ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা) এই প্রকল্পটি প্রায় ৫১ লাখ মানুষকে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা পরিষেবা দেবে।
মাতৃমৃত্যু ও নবজাতক মৃত্যুর হার হ্রাসে ভূমিকা রাখবে এ প্রকল্প। বিশেষ করে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে নারীদের সেবা নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি, উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগের স্ক্রিনিং ও চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা হবে। এ ছাড়াও শিশু পুষ্টি, কিশোর স্বাস্থ্য এবং মাতৃ ও নবজাতক সেবা উন্নয়নে গ্লোবাল ফিন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি (জিএফএফ) থেকে ২৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান যুক্ত হবে।
চট্টগ্রাম ওয়াটার সাপ্লাই ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের অধীনে চট্টগ্রামে ১০ লাখেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ পানীয় জল সরবরাহ করা হবে। এ প্রকল্পে ২৮ কোটি ডলার (বাংলাদেশী টাকায় ২ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা) দেওয়া হবে। বাসা-বাড়িতে পানির নতুন দুই লাখ সংযোগ স্থাপন এবং নি¤œ আয়ের সম্প্রদায়গুলোতে প্রায় ১ লাখ মানুষকে উন্নত স্যানিটেশন পরিষেবা দেওয়া হবে। চট্টগ্রাম ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যুয়ারেজ কর্তৃপক্ষকে এ প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন সুবিধার উন্নয়নে অর্থায়ন করা হবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই দেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করে বিশ্বব্যাংক। তখন থেকে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে চার হাজার ৫০০ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থায়ন করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের সুদমুক্ত ঋণপ্রাপ্ত দেশের মধ্যে অন্যতম।

×