বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি
সরকার সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা বাড়ানোর প্রায় এক সপ্তাহ পরও ঢাকার বাজারে স্বাভাবিক হয়নি পণ্যটির সরবরাহ। বিশ্ববাজারে সয়াবিন ও পাম তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দাম বাড়িয়ে দেওয়ার বৃদ্ধির পর প্রায় এক মাস ধরে চলছে সয়াবিন তেলের এই সংকট। রাজধানীর কল্যাণপুর, কারওয়ানাবাজার, হাতিরপুল এলাকা ঘুরে চলমান ঘাটতির এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে ১৭৫ টাকা লিটার করে, যা আগে ছিল ১৬৭ টাকা। আর খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৫৭ টাকা করা হয়, যা আগে ছিল ১৪৯ টাকা। ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের পর বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ২০ শতাংশ বেড়েছে। এর ফলে স্থানীয় ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা মজুতদারি করেছেন।
অনেকে ধারণা করেছিলেন, সামনে দাম বাড়বে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই মজুতদারি হয়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাস্তবধর্মী বিশ্লেষণ করে নতুন এই দাম নির্ধারণ করা হলো। বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহের ঘাটতি আছে। নতুন দাম আজকে থেকেই কার্যকর হবে। কারওয়ানবাজারের ইয়াসিন জেনারেল স্টোরের বিক্রয় সহকারী আলী হোসেন বলেন, বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ এখনো স্বাভাবিক হয়নি। আমরা পাইকারি যা বোতলজাত তেল চাই, সেটা পাই না।
আমাদের প্রতিদিন প্রয়োজন ৫০ লিটার তেল, কিন্তু আমরা পাচ্ছি ২০ লিটার। টাকা দিয়েও পাইকারি তেল পাচ্ছি না। এখন আমার দোকানে সব সয়াবিন তেল শেষ হয়ে গেছে। কারওয়ানবাজারের প্রায় ৩০টি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে বেশিভাগ দোকানে সয়াবিন তেল আছে। তবে তাদের চাহিদার চেয়ে কম সরবরাহ করা হচ্ছে, এমন অভিযোগ করছে খুচরা বিক্রেতারা।
সততা জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা মোহাম্মদ হৃদয় বলেন, যারা বড় দোকান, যাদের বেশি বিক্রি হয়, তারা বেশি তেল পায়। একটি তেলের গাড়ি এলে সবাই ঘিরে ধরে কেনার জন্য। এখনও সংকট সয়াবিন তেলের। তার দোকানে ৫ লিটার ও দুই লিটারের প্রায় ১৫টি সয়াবিন তেলের বোতল দেখা গেছে। সালাম স্টোরে ৫ লিটারের মাত্র একটি সয়াবিন তেলের বোতল ছিল। বিক্রেতা মোহাম্মদ সাদ বলেন, যা ছিল, সেটা দুপুরের মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। এখন ক্রেতারা দুই লিটারের তেল চায়, সেটা দিতে পারছি না।
আমাদের বিক্রিও কমে যাচ্ছে। এদিকে কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে প্রায় ১০টি দোকানে ঘুরে দেখা গেছে, সেখানেও এখনো স্বাভাবিক হয়নি বোতলজাত তেলের সরবরাহ। বিআরটিসি মার্কেটের মুদি দোকানদার মোহম্মদ আলমীগর হোসেন বলেন, আজকে দুই লিটারের তেলের বোতল ১০টি পেয়েছি। পাইকারি বিক্রেতারা বলছে, আস্তে আস্তে সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। ট্রেডিং করপোরেশন অভ বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যানুসারে, এক বছর আগে বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১৬৮-১৭০ টাকায়।
সূর্যমুখী ও ক্যানোলা তেলে আমদানি শুল্ক অব্যাহতি ও ভ্যাট হ্রাস ॥ এদিকে সরকার সূর্যমুখী ও ক্যানোলা তেলের আমদানিতে শুল্ক অব্যাহতি দিয়েছে এবং মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) কমিয়ে ৫ শতাংশ করে অন্যান্য ভোজ্য তেলের সঙ্গে সমন্বয় করেছে। ১৫ ডিসেম্বর জারি করা একটি এসআরও-তে এই সিদ্ধান্তের কথা জানায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত (১৬ ডিসেম্বর) এসআরওটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়। আগামী তিন মাস এই শুল্ক অব্যাহতি ও ভ্যাট হ্রাস সুবিধা পাবে পণ্য দুটি।
একইসঙ্গে বাজারে ভোজ্য তেলের সরবরাহ বৃদ্ধি ও দাম স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে সয়াবিন ও পাম তেলের বিদ্যমান শুল্ক অব্যাহতি ও ভ্যাট হ্রাস সুবিধার মেয়াদও আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে এনবিআরের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এর আগে ভোজ্যতেলের আমদানি, স্থানীয় পরিশোধন ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে ভ্যাট কমানো হয়েছিল। এনবিআরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ইতোপূর্বে গত অক্টোবর ও নভেম্বরে দুটি অর্ডারের মাধ্যমে সয়াবিন ও পাম অয়েলের আমদানি শুল্ক অব্যাহতি ও হ্রাসকৃত ভ্যাট সুবিধা ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবত ছিল।
ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল রাখা এবং মূল্য সহনীয় রাখার উদ্দেশ্যে এবার এই তালিকায় সানফ্লাওয়ার ও ক্যানোলা অয়েলও যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে সূর্যমুখী ও ক্যানোলা তেলের আমদানি ব্যয় লিটারপ্রতি প্রায় ৫০ টাকা পর্যন্ত কমতে পারে বলে জানানো হয় এতে। বর্তমানে বাংলাদেশে সূর্যমুখী ও ক্যানোলা তেলের আমদানি খুবই কম। কারণ এই তেলগুলোর আমদানি সয়াবিন ও পাম তেলের তুলনায় অনেক ব্যয়বহুল।
তবে সয়াবিন ও পাম তেলের ক্রমবর্ধমান দামের কারণে স্থানীয় ভোজ্য তেল আমদানিকারকরা সূর্যমুখী ও ক্যানোলা তেলের আমদানি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন। এনবিআরের একজন কর্মকর্তা জানান, সূর্যমুখী ও ক্যানোলা তেলের আমদানির ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায় তুলনামূলক কম। গত অর্থবছরে এ পরিমাণ ছিল প্রায় ২ কোটি টাকা। আমদানিকারকরা বলছেন, ভ্যাট আরও কমানো হলে তারা সূর্যমুখী ও ক্যানোলা তেলের আমদানি বাড়াতে পারবেন, যার ফলের তেলের দামও কমতে পারে।