নান সমস্যায় জর্জরিত ফেনী বিসিক শিল্প নগরী
দেশের লাইফ লাইনখ্যাত ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক নাভি হিসেবে পরিচিত ফেনী। প্রবাসী আয়ে সমৃদ্ধ জনপদ শিল্পকারখানায় অনেকটা পিছিয়ে। নানা প্রতিকূলতা আর বিনিয়োগকারীদের প্রতি অসহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে বিসিক শিল্প নগরীর কতৃপক্ষের বিরুদ্ধেই।
উদ্যোক্তারা জানান, নানা সমস্যায় জর্জরিত ফেনীর বিসিক শিল্প নগরী। নিরাপত্তাহীনতা, জলাবদ্ধতা ও অতিরিক্ত কর জটিলতায় নাখোশ শিল্প মালিকরা। এ ছাড়াও ফেনীতে শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে যে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় তা পূরণ করতে সরকারি কোন উদ্যোগ নেই। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সুফল।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন ফেনী কার্যলয় সূত্র জানাযায়, সদর উপজেলার চাড়িপুর মৌজায় ১৯৬২ সালে ২৫ দশমিক ৪ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় বিসিক শিল্প নগরী। এ নগরীর ১৫২টি প্লটের মধ্যে ১০টি প্রশাসনিক কাজের জন্য, বাকিগুলো শিল্প ইউনিট স্থাপনে বরাদ্দ দেয়া হয়। যেখানে গড়ে ওঠে রপ্তানিমুখী ওষুধ, টাওয়েল, হ্যান্ড মেইড পেপার, জুট, রাবার, রড়, ম্যাচ, বেকারি সহ প্রায় অর্ধশত শিল্প কারখানা রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিসিকের সড়কের দু'পাশের ড্রেনের গুলো ময়লা-আবর্জনায় ভরে গেছে। সড়কের দু'পাশে ঝোপঝাপে অন্ধকার ও ময়লারস্তুপ করে রেখেছে কারখানার মালিকরা।বিসিক এলাকায় পানি সরবরাহের ট্যাংকি দীর্ঘদিন যাবৎ অচল হয়ে আছে। পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান মালিক ব্যক্তিগতভাবে পানি সংগ্রহ করছে। শিল্প এলাকা অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটলে পানির উৎসের একমাত্র পুকুর সেটি ময়লা আবর্জনা ও ঝোপঝাপে ভরাট হয়ে গেছে।
এছাড়া রয়েছে বর্ষায় জলাবদ্ধতা, ড্রেনেজ সমস্যা, আলো স্বল্পতা ও নিরাপত্তার ঝুঁকি। বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে তারা। বাড়তি কর দিয়েও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাদিক সুত্র জানায বিসিকের জাযগা একট চক্র জিম্মি করে রেখেছে। তারা এক এক জন ৫/ ৭ টি করে প্লট নিজ নামে বে নামে করে নিয়েছে। কয়দিন আগ পানির টাংকি টা ভেংগে দখল করতে চেয়ে ছিলো। স্থানিযদের বাধায তা রক্ষা পায়।
ফেনী বিসিক শিল্পনগরীর সহ-সভাপতি ও সামছুদ্দিন তাওয়েল লিমিটেড এর স্বত্বাধিকারী উদ্দিন আহমেদ কামরান বলেন, ১৯৬২ সালে বিসিক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় চতুর্পাশে বাউন্ডারি ওয়াল ছিল। কিন্তু পর্যায়ক্রমে অধিকাংশ ওয়াল ভেঙ্গে গেছে। প্রবেশপথের গেটগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। বলা যায় বিসিক এলাকার কোন মা-বাপ নেই।
সড়কে স্ট্রিটলাইট নেই, ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে সামান্য বৃষ্টি হলে পুরো বিসিক এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়। এসব বিষয় নিয়ে কারো কনো মাথা ঘামায় নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখান থেকে নেওয়ার চেষ্টা করে দেওয়ার চেষ্টা করে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ফেনী বিসিক শিল্পনগরীর সভাপতি ড. বেলাল উদ্দিন আহমেদ জানান, বিসিক আমাদের ব্যবসায়ীদের প্রতিবন্ধকতা দূর করার কথা ছিল। শিল্প নগরীতে শিল্পপ্রতিষ্ঠান করার পরেও বিসিক সার্বিকভাবে সহযোগিতা করার কথা থাকলেও আমরা নানান ধরনের প্রতিবন্ধকতা জর্জরিত রয়েছি।
শিল্প নগরীর বিভিন্ন সমস্যার কথা স্বীকার করে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন ফেনী কার্যলয়ের সহকারি মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ হানিফ বলেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য যে বাজেট নির্ধারণ করা হয় সেটা একেবারেই অপ্রতুল। সেজন্য এগুলো সংস্কার করা সম্ভব হয় না। শিল্পপ্রতিষ্ঠান মালিকরা তাদের নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় ড্রেন গুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে তাহলেই নানান ধরনের সমস্যার সম্মুখীন থেকে তারা রক্ষা পাবে। আমাদের যে বাজেট বরাদ্দ রয়েছে সেটি অপ্রতুল সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছুই করা সম্ভব হয় না। এছাড়া আমাদের বিসিক এলাকায় বিদ্যুৎ গ্যাসের কোন সংকট নেই বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, ফেনী বিসিকে ৪৪টি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্য ৮টি রুগ্ন রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান জেলা প্লট বরাদ্দ উপ কমিটির মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
এদিকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়ে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে যদি কোন বরাদ্দ আসলে আমরা সেগুলো শিল্প মালিকদের মাঝে বিতরণ করব।
সাইদুর