এডিপি
ক্ষমতার পালাবদলে মন্থর হয়ে পড়া দেশের উন্নয়ন কাজে গতি ফেরেনি এখনও; যার প্রভাব পড়েছে ধীরে চলো নীতিতে শুরু করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এডিপি বাস্তবায়নেও।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ; যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৭ দশমিক ০৬ শতাংশ। সেই হিসাবে, বাস্তবায়নের হার কমেছে ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ পয়েন্ট।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের প্রকাশিত এডিপি বাস্তবায়নের তথ্য মতে, বাস্তবায়নের হার অনুযায়ী প্রথম পাঁচ মাসে এডিপির অগ্রগতি এত কম হওয়ার তথ্য নেই গত ১৫ অর্থবছরেও।
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে আন্দোলন ও পরে অগাস্টে ক্ষমতার পালাবদলে সৃষ্টি হওয়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির পাশাপাশি প্রশাসনে রদবদলের ধাক্কায় সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে এ ধীরগতি চলছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের প্রকাশিত এডিপি বাস্তবায়নের সবশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে অর্থ ব্যয় হয়েছে ৩৪ হাজার ২১৪ কোটি টাকা; যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪৬ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা।
শতাংশের বিচারে প্রথম পাঁচ মাসে এত কম বাস্তবায়নের তথ্য নেই গত ১৫ অর্থবছরেও। এর আগে সর্বনিম্ন ১৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ বাস্তবায়নের হার ছিল ২০১৫-১৬ অর্থবছরে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার চলতি অর্থবছরে এডিপিতে ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখে বাজেট পাস করেছিল। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দায়িত্বে আসা অন্তর্বর্তী সরকার অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দেয়।
এতে করে আগের সরকারের নেওয়া অনেক প্রকল্পে অর্থছাড় কমিয়ে দেওয়া হয়। ফলে চলমান অনেক প্রকল্পের কাজও স্থগিত হয়ে যায়। এসব মিলিয়ে এডিপির বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় কমে যায়, বলছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
আইএমইডির হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, একক মাস হিসেবে নভেম্বরের বাস্তবায়নের হার ৪ দশমিক ৪০ শতাংশ বা ১২ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছর নভেম্বরে এ হার ছিল ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। সাধারণত অর্থবছরের প্রথমদিকে এডিপির ব্যয়ের পরিমাণ কম থাকে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এবার আরও কমে গেছে।
এর আগের ২০২০-২১, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বাস্তবায়নের হার ছিল যথাক্রমে ১৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ, ১৮ দশমিক ৬১ ও ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে এডিপি বাস্তবায়নের কমে যাওয়া 'অবাক করার মত’ কোনো বিষয় নয় বলে গত সোমবার এক কর্মশালায় মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক এম আবু ইউসুফ।
দেশের অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির এই সদস্য বলেন, "এখনকার বাস্তবতায় এডিপির বাস্তবায়ন কম হবে। তবে এর মধ্যেও উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে কীভাবে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়া যায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তা ভাবতে হবে।"
দায়িত্ব গ্রহণের চার মাস হলেও সরকারের তরফে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি কীভাবে চলবে তার ‘দিকনির্দেশনা এখনও পাইনি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “চলতি অর্থবছরের বাজেটের কেবল ২ দশমিক ৩ শতাংশ রিলোকেট করে তিনটি প্রধান খাদ্যনির্ভর সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে ব্যয় করা গেলে এ খাতের বর্তমান বরাদ্দ দ্বিগুণ হবে।
“শহর ও গ্রাম মিলিয়ে প্রধান তিনটি কর্মসূচি হচ্ছে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রয় (ওএমএস) এবং কাজের বিনিময়ে খাদ্য।”
শহীদ