বাংলাদেশ ব্যাংক
বেশ কয়েক বছর ধরে ভোক্তা ঋণের পরিবর্তন আসছে ব্যাংকগুলোতে। বিয়ে করার জন্যও আকর্ষণীয় প্যাকেজ রয়েছে কিছু ব্যাংকের। বিয়ের সার্বিক খরচে টান পড়লে অনেকেই আত্মীয়স্বজন কিংবা বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে টাকা ধার নেন, কেউ কেউ ব্যর্থ হন। না পেয়ে একটা অংশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হন। কিন্তু এবার যারা ঋণ নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক।
জানা গেছে, ভোক্তাঋণের আওতায় ব্যাংকগুলো ঋণ কমিয়ে দিয়েছে। এর আওতায় থাকা বিয়ের ঋণও কমিয়েছে তারা। শুধু বিয়ের ঋণই নয়, শিক্ষা ঋণ বিতরণও কমিয়ে দিয়েছে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে বিবাহ ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। তিন মাস আগে অর্থাৎ জুন শেষে যা ছিল ৫৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিয়ে করার জন্য নেওয়া ঋণের স্থিতি কমেছে ৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এ ছাড়া ২০২৪ সালের জুন শেষে বিয়ের ঋণ নেওয়ার জন্য খোলা হিসাবের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৮১০টি। সেপ্টেম্বর শেষে এই খাতের হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭৫২টি। সেই হিসাবে এই খাতের হিসাব সংখ্যা কমেছে ৫৮টি।
ব্যাংকগুলো বিয়ের জন্য যে ঋণ দিয়ে থাকে, তা ভোক্তাঋণের মধ্যে পড়ে। ব্যাংকগুলো সাধারণত এই খাতে ৫০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকে। বিয়ের জন্য যেসব ব্যাংক ঋণ দেয়, তার মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হলো মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)। ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আইডিএলসি ফাইন্যান্স বিবাহের জন্য ঋণ দিয়ে থাকে। ব্যাংকগুলো শুধু যে বিবাহের জন্যই ঋণ দেয় তা নয়, এ জন্য তাদের সঞ্চয়ী পণ্যও আছে। বিয়ের ঋণে সুদের হার ১২ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে।
এদিকে তিন মাসের ব্যবধানে কমেছে শিক্ষা ঋণ বিতরণও। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন শেষে শিক্ষা বাবদ খরচের জন্য নেওয়া ঋণের স্থিতি ছিল ১ হাজার ৫০৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা। তিন মাস পর গত সেপ্টেম্বরে এই খাতের ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
সেই হিসাবে তিন মাসে শিক্ষাবাবদ খরচের জন্য নেওয়া লোন কমেছে ৪৪০ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এ ছাড়া তিন মাসে কমেছে হিসাব সংখ্যাও। জুন শেষে শিক্ষাবাবদ নেওয়া ঋণের হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮৫টি। তিন মাস পর হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮৩৮টি। হিসবা সংখ্যা কমেছে ১ হাজার ২৪৭টি।
দেশের মধ্যে উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন ব্যাংক ঋণ দিয়ে থাকে। কোনো কোনো ব্যাংক শিক্ষা উপকরণ কেনার জন্য ঋণসুবিধা দেয়। কেউ আবার ঋণ দেয় উচ্চশিক্ষার জন্য, যারা বিদেশ যেতে চায় তাদের। শিক্ষাঋণের আকার ৫০ হাজার থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এটাও একধরনের ভোক্তাঋণ।
বিয়ে ও শিক্ষাঋণের সুদ ভোক্তাঋণের মতো হয়ে থাকে। নানা মেয়াদে এসব ঋণ পরিশোধ করা যায়। প্রতিবেদন বলছে, ২০২৪ সালের জুন শেষে চিকিৎসাবাবদ খরচের জন্য নেওয়া ঋণের স্থিতি ছিল ২৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। আর তিন মাস পর (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এ খাতের ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
ব্যাংকাররা বলছেন, শিক্ষা বা শিক্ষার্থীদের জন্য দেওয়া ব্যাংকঋণের বড় অংশ নিয়ে থাকেন দেশের বাইরে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীরা। অভিভাবকরা আয় ও লেনদেনের তথ্য যাচাই করে তবেই ব্যাংকগুলো এই ঋণ দেয়। বর্তমানে দেশের বাইরে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় এ ধরনের ঋণের চাহিদা বাড়ছে।
জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেসকোর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন প্রায় ৫৩ হাজার শিক্ষার্থী। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে এসব বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর পছন্দের শীর্ষে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। গত এক বছরে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন সাড়ে ৮ হাজার শিক্ষার্থী। উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পছন্দের অন্য উল্লেখযোগ্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, মালয়েশিয়া, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া।
এদিকে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের বড় প্রভাব পড়েছে ব্যাংক খাতে। ব্যাংকগুলোর আর্থিক অনিয়মের তথ্য ও প্রকৃত অবস্থা প্রকাশ পাওয়ার পরে গ্রাহকদের আস্থা কমেছে। তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে কমেছে আমানত কমেছে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আমানত কমলেও ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ বেড়েছে ২৩ হাজার কোটি টাকা।
শহীদ