জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মতে, বিশ্বের আদা উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। অন্যদিকে কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, আদার জেনেরিক নাম জিঙ্গিবার, যা মসলার সংস্কৃত নাম সিঙ্গাবেরা এবং গ্রিক জিঙ্গিবেরিস থেকে উদ্ভূত। দেশে এই মসলা জাতীয় পণ্যের চাহিদা বছরে ৪ লাখ ৮০ হাজার টন, কিন্তু উৎপাদিত হয় তার অর্ধেক। আবার উৎপাদন পর্যায়ে মাটিবাহিত রোগ এবং উৎপাদন-পরবর্তী সংরক্ষণের অভাবে ১৫ থেকে ১৮ শতাংশই নষ্ট হয়ে যায়। সব মিলিয়ে প্রতি বছর চাহিদার ঘাটতি পড়ে ৬০ শতাংশের মতো; যা বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে পূরণ করতে হয়; যার ৬০ শতাংশই আসে চীন থেকে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইংয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত চার অর্থবছরের হিসাবে চাহিদা পূরণে প্রতিবছর গড়ে ১ লাখ ৩৮ হাজার টন আদা আমদানি করতে হয়েছে। এর মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ লাখ ৫৫ হাজার টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ লাখ ৬৬ হাজার টন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ লাখ ৪১ হাজার টন এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৯১ হাজার টন আদা আমদানি হয়েছে। সম্প্রতি রাজধানীর কাওরান বাজারে প্রতি কেজি আদা বিক্রি হয়েছে ২৬০ থেকে ৩০০ টাকায়। সারা বছর এর প্রতি কেজির গড় মূল্য ২০০ টাকা বিবেচনায় নেওয়া হলে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন এবং আমদানি মিলিয়ে দেশে চাহিদার ৪ লাখ ৮০ হাজার টন আদার বাজারমূল্য ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
এখন আসা যাক আদার উৎপাদন, বিপণন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ সংক্রান্ত কিছু প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে আলোচনা। দেশে আদার ঘাটতির অন্যতম কারণ হচ্ছে উৎপাদন কম। অভাব রয়েছে আদার চাষ উপযোগী জমিরও। এটি দীর্ঘমেয়াদি ফসল। প্রায় ১০ মাস সময় লাগে। এত সময় ধরে আদা চাষে অনাগ্রহী কৃষক। তারা একই সময় ওই জমিতে ৩-৪টি অন্য ফসল ফলাতে পারেন, যা লাভজনক। অন্যদিকে তদুপরি দেশীয় প্রেক্ষাপটে জমিতে আদার কন্দপচা রোগের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব। এর কারণে কোনো কোনো বছর আদার ফলন ৫০-৮০ ভাগ পর্যন্ত কমে যায়। তখন স্থানীয় বাজারে সরবরাহে বড় ঘাটতি তৈরি হয় এবং দাম চলে যায় সাধারণের নাগালের বাইরে। জুন-জুলাই মাস আদা চাষের উপযুক্ত সময়। ফলনও পাওয়া যাবে চাষের ৭ থেকে ৮ মাসের মধ্যে। প্রাকৃতিক যে কোনো বিপর্যয়ে বস্তা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়া যায়। এ পদ্ধতিতে একই জায়গায় বারবার মাটির মিশ্রণ তৈরি করে আদাবীজ রোপণ করা যায়। শুধু বস্তা কিনতে হবে। চার-পাঁচ টাকা দাম। বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক ও জৈব সার, ছাই ব্যবহার করে মিশ্রণ করা যেতে পারে। বস্তায় আদা চাষের সুবিধা সম্পর্কে মসলা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন ‘মাটিতে আদা চাষে বিদ্যমান অসুবিধার সমাধান মিলেছে বস্তায় আদা চাষে। এই অভিনব পদ্ধতি দেখাচ্ছে ঘাটতি পূরণের সম্ভাবনা। দিচ্ছে স্বনির্ভরতা অর্জনের হাতছানি। দেশে সাড়ে তিন কোটির মতো বসতবাড়ি রয়েছে। এসব বাড়িতে ১০ বস্তা করে আদা চাষ করা হলেও সাড়ে ৩৫ কোটি বস্তা হবে। প্রতি বস্তায় ১ কেজি আদা উৎপাদিত হলেও আমাদের চাহিদা মিটে যাবে; যা প্রতি বছর সাশ্রয় করতে পারে কয়েক হাজার কোটি টাকার আমদানি ব্যয়।
আদা চাষ
স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের সম্ভাবনা
শীর্ষ সংবাদ: