ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

স্থিতিশীল মুরগি ও মাছ আসছে শীতকালীন সবজি, কমেছে দাম

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক:

প্রকাশিত: ২০:২৩, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪

স্থিতিশীল মুরগি ও মাছ আসছে শীতকালীন সবজি, কমেছে দাম

মুরগি ও মাছ ,শীতকালীন সবজি

বাজারে দুই সপ্তাহ ধরে চলা বোতলজাত সয়াবিন তেল নিয়ে অস্থিরতা এখনো কাটেনি। যদিও গত সোমবার সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। তারপরও গত চারদিনে বাজারে তেল সরবরাহ স্বাভাবিক করেনি কোম্পানিগুলো। এখনো পাড়া-মহল্লার বেশিরভাগ দোকানে মিলছে না সয়াবিন তেল। তবে বাজারে সুখবর আছে অন্য প্রায় অনেক পণ্যেই। আলু, পেঁয়াজ ও সবজিসহ কিছু মুদি পণ্যেরও দাম কমেছে। স্থিতিশীল রয়েছে মুরগি ও মাছের দাম। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে।

সম্প্রতি তেলের দাম লিটার প্রতি ৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করে সরকার। বাড়তি দাম যোগ করে বাজারে এখন প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম ১৭৫ টাকা। আর খোলা সয়াবিনের দাম ১৫৭ টাকা। তবে নতুন এ দামের তেল এখনো আসেনি। ফলে কিছুটা সরবরাহ সংকট তৈরী হয়েছে। এতে বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮০ টাকা লিটারেও বিক্রি করতে দেখা গেছে। আগে বোতলজাত সয়াবিন প্রতি লিটার ১৬৭ টাকা ও খোলা সয়াবিনের লিটার ছিল ১৪৯ টাকা।

সকালে বনশ্রীর মেরাদিয়া বাজার ও রামপুরা বাজারে সরেজমিন দেখা যায়, হাতেগোনা কয়েকটি দোকানে মাত্র বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে। রেজাউল আলম নামে এক দোকান মালিক বলেন, গত বৃহস্পতিবার কোম্পানির তেল দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরে জানালো শনিবার দেবে। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে এই অবস্থা চলার মধ্যেই তেলের দাম বেড়েছে। আশা করছি শনিবার পাবো।

অপরদিকে বিভিন্ন তেল কোম্পানির পরিবেশকদের সঙ্গে কথা বললে জানায়, একটি ছাড়া নতুন দামে কোন কোম্পানিই বাজারে সয়াবিন তেল ছাড়তে পারেনি। এজন্য তারাও খুচরা পর্যায়ে পণ্যটি দিতে পারছেন না। তাই খুচরা বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে। 

খুচরা বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট থাকলেও চিনি, আটা, ময়দাসহ অন্যান্য পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। তবে কমেছে মসুর ডালের দাম। গত সপ্তাহের চেয়ে মসুর ডালের দাম কেজিতে ৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১৩০ টাকায়। অপরদিকে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে পেঁয়াজের বাজারে। এক-দেড় মাস আগেও দেশি ভালো মানের পেঁয়াজের কেজি ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। বর্তমানে সেটি ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি হাইব্রিড পেঁয়াজ কেজিতে ৩০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা আর আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

মেরাদিয়া বাজারের মুদি দোকানি আলম মুন্সি বলেন, বাজারে নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে, পাতা পেঁয়াজও এসেছে। ফলে ব্যবসায়ীরা আগে থেকে মজুদ করা পেঁয়াজ বাজারে ছাড়ছে বাধ্য হয়ে। নতুন পেঁয়াজ পুরোপুরি চলে এলে দাম আরও কমবে। একই চিত্র আলুর বাজারেও। নতুন আলু বাজারে আসায় আমদানিকৃত আলু কেজিপ্রতি ৫০ টাকা কমে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পুরোনো আলুর দামও কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায়।

বাজারে শীতের সবজির সরবরাহও বেড়েছে। ফলে কমতে শুরু করেছে সব ধরনের সবজির দাম। সবজির কেজি এখন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। দুই সপ্তাহ আগেও যে শিমের কেজি ছিল ৮০-১০০ টাকা, সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়। এছাড়া বেগুন গড়ে ৫০ টাকা,শালগম ৫০ টাকা এবং মুলা ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি কিনতে আকারভেদে ৩০ থেকে ৫০ টাকায় কেনা যাচ্ছে।

কিছুদিন আগেও আকাশছোঁয়া কাঁচামরিচের দাম কমে তলানিতে নেমেছে। বাজারে এখন প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। গত দুই সপ্তাহ ধরে এ দামেই বিক্রি হচ্ছে কাঁচামরিচ।

তবে কিছুটা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ফলে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত, যা আগের সপ্তাহে ছিল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। এছাড়া দেশি মুরগি কেজি ৬৫০-৭০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৫০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায় এবং প্রতি কেজি সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায়। আবার গরুর মাংস ৭৫০-৭৮০ টাকা, খাসির মাংস ১ হাজার থেকে ১২’শ টাকা ও ছাগলের মাংস ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

মুরগির মাংস বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, বাজারে মুরগির চাহিদা তুলনায় দামটা কমই বলা যায়। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় সামান্য বেড়েছে ব্রয়লারের দামটা। সম্ভবত শীতের কারণে এটা হয়েছে, কারণ এই সময়ে রোগবালাই বেশি হয়, ফলে কিছু মুরগি মার যায়। তাই খামারি পর্যায়ে কিছুটা বেশি দামে কিনে আনতে হয়। তবুও ভালো বিক্রি হচ্ছে।

মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি পাঙ্গাশ বিক্রি ১৭০-১৮০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০-২২০ টাকা, কার্প মাছ ২২০-২৫০ টাকা, রুই মাছ ২৬০-৩০০ টাকা, মলা মাছ ২৮০, চাষের কই ২০০ টাকা এবং দেশি কই ৬৫০-৭০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বড় চিংড়ি মাছ কেজিপ্রতি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যেখানে গত সপ্তাহেও ছিল ৭০০ টাকা। শিং মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। তবে সপ্তাহ ব্যবধানে পাবদা মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে।

গত সপ্তাহে পাবদা মাছ ছিল ৩০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকা, আজকের তা ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও বাজারে শোল মাছ ৬০০-৭০০ টাকা, টাকি মাছ ৩৫০ টাকা এবং সরপুঁটি মাছ ২০০ কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, নদী ও সামুদ্রিক মাছের সরবরাহ ভালো থাকায় গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে মাছের দাম কিছুটা কমেছে।

আর কে

×