ছবি: প্রতিনিধি
দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে বৈদেশিক বাণিজ্য-ঘাটতি দূর করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত ব্যবসায়ীক ইকো ইকো সিস্টেম নিয়ে সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার প্রধান অতিথির বক্তব্য এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশী বিদেশী ব্যবসায় প্রতিদিন-ই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। তবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সহজ ও দ্রুত সময়ের মধ্যে করতে এখনো বাংলাদেশে প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার বাড়েনি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএম-এর সহযোগী অধ্যাপক এবং পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন এবং কন্সালটেন্সী) মোঃ শিহাব উদ্দিন খান। সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএম-এর মহাপরিচালক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান। গোলটেবিল বৈঠকে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএম-এর অধ্যাপক (সিলেকশন গ্রেড) ড. শাহ মোঃ আহসান হাবীব। গবেষণা দলে অন্যান্যের মধ্যে রয়েছেন- বিআইবিএম-এর সহকারী অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, মিসেস রাহাত বানু এবং প্রভাষক রাজীব কুমার দাশ। এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম-পরিচালক মোকাদ্দেম আহমেদ এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি’র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এটিএম নেসারুল হক। অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিআইবিএম-এর সুপারনিউমারারি প্রফেসর এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আলী হোসেন প্রধানিয়া; । পূবালী ব্যাংক পিএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ আলী এবং ব্যাংক এশিয়া পিএলসি’র উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ জিয়াউল হাসান মোল্লা।
বিআইবিএম এম এর অধ্যাপক শাহ মোঃ আহসান হাবিব জানান, ব্যবসা সম্প্রসারণে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়লে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যায় কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। এছাড়া আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে কাস্টমস, ব্যাংক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি জরুরি।
পূবালী ব্যাংক পিএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ আলী জানান, আমি আপনাদের বলতে চাই বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যবসা করতে চাইলে প্রযুক্তির কোন বিকল্প নেই। আমি প্রযুক্তির মানুষ প্রযুক্তি সম্পর্কে আমার যথেষ্ট ধারণা রয়েছে। দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যর উন্নতির জন্য ব্যাংক থেকে শুরু করে সর্বস্তরে প্রযুক্তির গুরুত্ব বাড়াতে হবে।
ব্যাংক এশিয়া পিএলসি’র উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ জিয়াউল হাসান মোল্লা বলেন, আমরা দেখেছি এক্সপোর্ট ইমপোর্টের ক্ষেত্রে পোর্ট গুলোতে স্ক্যানার মেশিন নষ্ট। আইসটির ভিতর কনটেইনারে কি মাল আনা নেয়া হয় এটা আসলে পরিস্কার নয়। অন্য দেশ যেখানে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে দেয় সেখানে আমাদের দেশে অনিয়মের স¦ার্থে প্রযুক্তিকে দূরে ঢেলে দেয় যা আমাদের মোটেও কাম্য নয়। ব্যবস্যার ক্ষেত্রে রাজনৈতি চাপও একটি বড় বাধা। নতুন বাংলাদেশে প্রতিটি বিভাগকে নতুন করে ঢেলে সাজানোটাও এখন সময়ের দাবি।
এসময় বিভিন্ন বিভিন্ন ব্যাংকাররা বলেন, অনেক ব্যবসায়ী কর ফাঁকি ও অর্থ পাচারের উদ্দেশ্যে সঠিক তথ্য দেয় না। এসএমই ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার আরো বাড়াতে হবে। বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের মতন এসএমই প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা করলে একখাত আরও গতিশীল হবে । ক্ষুদ্র শিল্পের উন্নয়নে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে তাদের আরো সহযোগিতা দেয়ার তাগিদ দেন।
বিআইবিএম আয়োজিত সেমিনারে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, বৈদেশিক বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে তারা নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা পড়েন। ব্যাংক কাস্টমসহ বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও প্রতিবন্ধকতা দূর করতে প্রযুক্তি ব্যবহারে জোর দিলেন বিশেষজ্ঞরা। বলেন প্রযুক্তি ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাবে।
ডেপুটি গভর্নর আরও বলেন, আমি অবশ্যই তাদের বুদ্ধিদীপ্ত প্রচেষ্টার জন্য গবেষণা দলকে অভিনন্দন জানাই। নীতি এবং বাজার-স্তরের প্রভাব মোকাবেলায় দলটি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করেছে। আমি বিশ্বাস করি যে আজকের মতামত এবং পর্যবেক্ষণ সহ গবেষণার ফলাফল বিবিকে ভবিষ্যতের পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করবে। আমাদের আর্থিক খাতের জন্য প্রত্যাশিত ফলাফল পেতে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমি আশা করি এই পর্যালোচনা কর্মশালার আলোচনা সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য খুবই সহায়ক হবে।
২০২৪ সালের গবেষণা অনুসারে, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাস্তুতন্ত্র ক্রমাগত বাধার সম্মুখীন হচ্ছে যা এর দক্ষতা এবং নির্ভরযোগ্যতাকে বাধাগ্রস্ত করে। বাণিজ্য সুবিধার সঙ্গে জড়িত ব্যাংকগুলো একাধিক অপারেশনাল চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে। বিশেষত শারীরিক নথির উপর ভারী নির্ভরতা (উত্তরদাতাদের ৭০ শতাংশ দ্বারা রিপোর্ট করা হয়েছে) এবং অটোমেশনের অভাব (৮০ শতাংশ দ্বারা হাইলাইট করা হয়েছে)।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে রয়েছে ক্রেডিট পত্রের মূল্য যাচাইকরণ (এলসি ইস্যু করা), আপোসকৃত নির্ভরযোগ্যতা এবং জটিল নিয়ন্ত্রক পরিবেশ, প্রতিটি ফ্যাক্টর ২০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ উত্তরদাতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। বৈশ্বিক বাণিজ্য ফাইন্যান্স নেটওয়ার্কে সীমিত এবং অস্থির বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের মতো সমস্যাগুলোও উল্লেখযোগ্য বাধা হিসাবে দেখা দিয়েছে।
গবেষণাটি একটি দক্ষ বাণিজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য সম্ভাব্য পদক্ষেপগুলো খোঁজ করে থাকে। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য ৮০ শতাংশ স্টেকহোল্ডার দ্বারা অটোমেশনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমাধান হিসাবে চিহ্নিত করা অপরিহার্য বলে মনে করেন। অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে ট্যাক্স কোড সহজীকরণ এবং সমন্বয় করা (৯ শতাংশ) এবং বাণিজ্য খাতে পেশাদারিত্বকে উন্নীত করার জন্য প্রণোদনা তৈরি করা। যেহেতু বাংলাদেশ তার বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রতিযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্য রাখে, স্টেকহোল্ডারদের অবশ্যই অটোমেশন বাস্তবায়ন, কমপ্লায়েন্স সিস্টেমের আধুনিকীকরণ এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। ডিজিটাল সরঞ্জাম গ্রহণ এবং স্পষ্ট নীতি নির্দেশিকা প্রক্রিয়াগুলিকে স্ট্রিমলাইন করতে পারে, বাণিজ্য-সম্পর্কিত বিলম্ব কমাতে পারে এবং রপ্তানিকারক ও আমদানিকারকদের আরও দক্ষতার সাথে সেবা প্রদানের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে ক্ষমতায়ন করতে পারে।
আলোচকরা যুক্তি দেখান যে এই চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করা শুধুমাত্র বাংলাদেশের বাণিজ্য পরিবেশে আস্থা বাড়াবে না বরং বৈশ্বিক বাণিজ্যে তার অবস্থানকেও শক্তিশালী করবে।
মেহেদী কাউসার