ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ঢাকায় আইএমএফ মিশন; মার্চে চতুর্থ কিস্তি পাওয়ার আশা করছে সরকার

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:৩৭, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ঢাকায় আইএমএফ মিশন; মার্চে চতুর্থ কিস্তি পাওয়ার আশা করছে সরকার

অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ।

ঢাকা সফর শুরু করা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, আইএমএফ এর প্রতিনিধি দলের সঙ্গে প্রথম দিনের বৈঠক শেষে আগামী মার্চের মধ্যে ঋণের চতুর্থ কিস্তি পাওয়ার আশা করছেন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘‘আজকে আইএমএফ এর একটা প্রতিনিধিদল এসেছিল। চতুর্থ কিস্তি আগামী ফেব্রুয়ারি - মার্চের মধ্যে পেয়ে যাবো আশা করছি। এবারেও বাড়তি অর্থ পাওয়ার ঋণের আশ্বাস দিয়েছেন তারা।’’

বাড়তি অর্থ মিলিয়ে চতুর্থ কিস্তিতে এক দশমিক ১ বিলয়ন ডলার পাওয়ার আশা করছে সরকার। সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি ও বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি চাপ সামাল দিতে তৃতীয় কিস্তিতে পরিকল্পনার চেয়ে বাড়তি অর্থ ছাড় করেছিল আইএমএফ।
ঋণ চুক্তির পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত জুনে ছাড় করা তৃতীয় কিস্তিতে বাংলাদেশের পাওয়ার কথা ছিল ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার। কিন্তু ছাড় করেছিল এক দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার।
ঋণ চুক্তিতে যাওয়ার পরে প্রয়োজন অনুযায়ী, পরবর্তী কিস্তির অর্থ আগাম ছাড়ের আগাম অনুমোদন দিতে পারে আইএমএফ।

অর্থের খরচ স্বাপেক্ষে তা ব্যবহার করতে পারে সংশ্লিষ্ঠ দেশ। বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারের এ পদ্ধতিকে ‘ফ্রন্ট লোড’ বলা। এবারও চতুর্থ কিস্তিতে ফ্রন্ট লোড মিলিয়ে এক দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার পেতে পারে বাংলাদেশ। সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘আজকে মূলত তারা এসেছে রাজস্ব খাত, বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা, মূল্যস্ফীতি এগুলো দেখার জন্য। এসব বিষয়ে তারা আমাদের সঙ্গে আলাপ করেছে, এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলাপ করবে।’’
ঋণ চুক্তির পরিকল্পনা অনুযায়ী চতুর্থ কিস্তিতে বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ আছে ৮ কোটি ৩৩ লাখ এসডিআর। চতুর্থ কিস্তি পেলে মোট ৩৫ কোটি ২৩ লাখ এসডিআর(আইএমএফ মুদ্রা) পেয়ে যাবে বাংলাদেশ, যা মোট ঋণের ৩৩ শতাংশ।

১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি সরকারের শীর্ষ পর্যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
বাংলাদেশকে দেয়া ঋণের চতুর্থ কিস্তিু ছাড়ের পূর্বে সবশেষ তৃতীয় কিস্তির অর্থের ব্যবহার ও শর্ত পরিপালনের অগ্রগতি দেখতে আইএমএফ মিশন ঢাকা সফর শুরু করেছে।
আলোচনা শুরু নতুন ৩ বিলিয়ন ডলার নিয়ে: এই পর্যালোনা বৈঠকেই আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন করে তিন বিলিয়ন ডলার ঋণ চাইবে বাংলাদেশ ব্যাংক, যেটা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে আইমএফ এর সঙ্গে আলোচনা করেছে।

নতুন ৩ বিলিয়ন ডলারের আনুষ্টানিক আবেদন প্রসঙ্গে সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘চলমান ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার তো প্রথম প্যাকেজের। কিন্তু সংস্কার করতে হলেতো আমাদের ফান্ড লাগবে। আমাদের অনেক কিছু সংস্কার করতে হচ্ছে যেমন ব্যাংকিং খাত, রাজস্ব খাত। এগুলো করতে আমাদের ফান্ড লাগবে।’’

আইএমএফের গবেষণা বিভাগের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রোইকোনমিকস বিভাগের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও নেতেৃত্বে আসা দশ সদস্যর প্রতিনিধি দলটি সরকারের শীর্ষ পর্যায়, দপ্তরের কর্মকর্তা ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে শর্তের অগ্রগতি দেখতেও ক্রিস পাপাজর্জিও এসেছিলেন। আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘‘প্রতিনিধি দল আসছে প্রধানত রাজস্ব আয় বাড়ানো, আর্থিক ঘাটতি, বাজেট লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি ও মূলস্ফীতি এগুলো দেখবে।’’

‘‘এর জন্য কি কি কৌশলগত পদক্ষেপ বাংলাদেশ নিয়েছে, আগামী দিনে কৌশলগত পদক্ষেপ কি নেওয়া হবে, সে বিষয়ে তা জানতে চেয়েছে।’’
ব্যাংক খাতের উচ্চ হারের খেলাপি ঋণ অর্থনীতিতে কোন ধরনের চাপ তৈরি করতে পারে, সে বিষয়েও সরকারের মনোভাব জানতে চেয়েছে প্রতিনিধি দলটি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এমন পদক্ষেপ নিবে যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক হয়। ভবিষ্যৎ নষ্ট হয় এমন পদক্ষেপ নেওয়া হবে না তা প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়েছে বলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘‘ আগামী সরকারে যেই আসুক তারা যেন সেটা ফলো করে। আমরা কতটুকু নেব এবং সেটা বিবেচনা করে ভেবে চিন্তে নেবে। এতে তারা আশ্বস্ত হয়েছে। ’’

উন্নয়ন সহযোগিরা দিবে ৬ বিলিয়ন ডলার: আইএমএফ এর পঞ্চম কিস্তি ছাড় হওয়ার কথা রয়েছে আগামী বছরের মে মাসে। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি(এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) ও ওপেকফান্ডসহ চলতি অর্থবছরেই ৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়ার আশা করছে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার।

সে বিষয়ে অর্থউপদেষ্টা বলেন, ‘‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে আইএমএফের পর্ষদ সভায় যে কথা বলে আসছি সেখানে আমরা উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে চলতি অর্থ বছরের জন্য ৬ বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা প্রত্যাশা করছি।’’
এসব ঋণ দাতা সংস্থাগুলোর মধ্যে কিছু দিন পরই আলোচনা করতে ঢাকা আসবে এডিবি প্রতিনিধি দল জানিয়েছেন সালেহ উদ্দিন আহমেদ।
শ্বেতপত্র প্রশ্নে অর্থউপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে আইএমএফ এর সাথে কোনো আলোচনা হয়নি।

সফররত প্রতিনিধি দলের সফর শেষে আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত আইএমএফ এর বোর্ড সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। এর আগে সংস্থাটির কর্মকর্তারা তাদের প্রাথমিক মতামত জানিয়ে দিবে ঢাকার সফর শেষকালে।

ঋণের চতুর্থ কিস্তি পেতে সবশেষ দুটি শর্ত বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণ খেলাপী শ্রেণিকরণ করার সময় কমিয়ে ৯০ দিন করেছে গত বুধবার।
এর আগে প্রতিদিন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ধার দেওয়ার মাধ্যম রেপো সপ্তাহে একদিন করার সিদ্ধান্ত নেয়।

ঋণের চতুর্থ কিস্তি পেতে অন্যান্য শর্তের সঙ্গে চলতি ডিসেম্বর শেষে বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ ১৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে হবে বাংলাদেশকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৮ নভেম্বর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতি ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রস হিসাবে ২৪ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফ স্বীকৃত বিপিএম৬ পদ্ধতির গ্রস হিসাবে তা ছিল ১৮ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের নীট হিসাব প্রকাশ করে না। শুধু আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থাকে জানিয়ে দেয়।

বিদেশি মুদ্রার সরবরাহ সঙ্কটের মধ্যে বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে ঋণ চায়। কয়েক দফা আলোচনা শেষে গত বছরের ৩১ জানুয়ারি ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে ওয়াশিংটনভিত্তিক আর্থিক সংস্থাটি। এ পর্যন্ত ঋণের প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।

নাজমুল/ রিয়াদ

×